ঢাকা শনিবার, ২১ জুন ২০২৫, ৭ আষাঢ় ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

সূর্যমুখীর চাষে কৃষকের মুখে হাসি

সূর্যমুখীর চাষে কৃষকের মুখে হাসি

রবি মৌসুমে চারদিকে নানান ফসলের সৌরভ এবং সৌন্দর্য উপভোগের জন্য মানুষ কৃষি জমিতে ভিড় করে। তম্মধ্যে অন্যতম হচ্ছে সূর্যমুখী। সূর্যমুখী যেমন সৌন্দর্যের প্রতীক হিসেবে পুলকিত করে, ঠিক তেমনি ফুলের বীজ থেকে উৎপাদিত হয় উৎকৃষ্ট মানের তেল। সূর্যমুখীর বীজ পশুখাদ্যে ব্যবহৃত হয়, তাছাড়া স্থানীয় পর্যায়ে সরিষার ঘানিতে সূর্যমুখীর বীজ থেকে তেল উৎপাদন করা যায়। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর উপজেলার শিবপুর, লাউরফতেহপুর, শ্রীরামপুর ইউনিয়নসহ বিভিন্ন এলাকায় প্রায় ৫০ বিঘা জমিতে আরডিএস ২৭৫ জাতের সূর্যমুখী চাষ করা হয়েছে। কৃষি বিভাগের সার্বিক তত্বাবধানে সরকারের ফ্লাড রিকনস্ট্রাকশন ইমারজেন্সি এসিসট্যান্স প্রজেক্টের (ফ্রীপ) অর্থায়নে চাষিদের উদ্বুদ্ধ করতে বিনামূল্যে সরবরাহ করা হয়েছে সার, বীজ ও নগদ অর্থ। এক বিঘা জমি থেকে ছয় থেকে সাত মন সূর্যমুখীর বীজ পাওয়া যাবে বলে জানিয়েছে চাষিরা। উৎপাদিত বীজ দিয়ে তেল ছাড়াও পাওয়া যাবে খৈল। অবশিষ্ট গাছ ব্যহার করা যাবে জ্বালানীর কাজে। ৯০ থেকে ১০৫ দিনের মধ্যেই কৃষকরা সূর্যমুখী ফুল থেকে বীজ ঘরে তুলতে পারবেন। ভিটামিন সমৃদ্ধ সূর্যমুখীর তেলে কোলেস্টোরেলের পরিমাণ খুবই কম। ফতেহপুর গ্রামের কৃষক ঝর্ণা বেগম বলেন, কৃষি কর্মকর্তাদের উৎসাহে সূর্যমুখী চাষ করেছেন তিনি। সরকারি ভাবে ফ্রীপ প্রকল্পের আওতায় বীজ, সার, বালাইনাশক, নগদ আর্থিক সহায়তা পেয়েছি। আবহাওয়া ভালো থাকলে ভালো ফলন পাওয়া যাবে। আরও বলেন, সূর্যমুখীবীজের কাঙ্ক্ষিত দাম পেলে ধান চাষের তুলনায় অন্তত তিন গুণ লাভ হবে। ঝর্ণা বেগমের মতো লাউর ফতেহপুর ইউনিয়নে বিভিন্ন এলাকায় সূর্যমুখী চাষাবাদে আগ্রহী হচ্ছেন কৃষকেরা। তাদের অনেকেই সরিষা চাষের পরিবর্তে সূর্যমুখী চাষ করছেন। অনেকে চাষাবাদ করছেন পরিত্যক্ত জমিতে।

শ্রীরামপুর ইউনিয়নের কৃষক জামির জানান, উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা দেলোয়ার হোসেনের পরামর্শে ফ্রীপ প্রকল্পের আওতায় এই বছর দুই বিঘা জমিতে সূর্যমুখীর আবাদ করেছি। এরই মধ্যে ফুল এসেছে, সম্পূর্ণ বীজ তেল হিসেবে বাজারজাত করা হবে। ফলন ভালো হলে আগামী বছরে ১০ বিঘা জমিতে আবাদের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। উপ-সহকারী কৃষি অফিসার ইকরামুল হক জানান, কৃষকদের নতুন ফসলে আগ্রহ বাড়ছে। পোকামাকড় এবং রোগ বালাইয়ের আক্রমণ হলে সঙ্গে সঙ্গে পরামর্শ প্রদান করছি, আবহাওয়া একমাস ভালো থাকলে বাম্পার ফলন হবে। উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ জাহাঙ্গীর আলম লিটন জানান, সূর্যমুখীর বীজে ৪০-৪৫% লিনোলিক এসিড রয়েছে, তাছাড়া এ তেলে ক্ষতিকারক ইরোসিক এসিড নেই। হৃদরোগীদের জন্য সূর্যমুখীর তেল খুবই উপকারী। সূর্যমুখী সাধারণত সব মাটিতেই জন্মে। তবে দোআঁশ মাটি সবচেয়ে বেশি উপযোগী। ৯০-১১০ দিনের মধ্যে ফসল তোলা যায়। উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে উপজেলায় প্রায় ৬ টন সূর্যমুখীর বীজ উৎপাদন হবে বলে আশা করছে কৃষি বিভাগ।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত