ঢাকা শনিবার, ২১ জুন ২০২৫, ৭ আষাঢ় ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

মুরগির খামারে স্বাবলম্বী তরুণ উদোক্তা

মুরগির খামারে স্বাবলম্বী তরুণ উদোক্তা

আমাদের দেশে একটা চির চালিত প্রচলন রয়েছে। ছেলে কিংবা মেয়ে যে কোন তরুণ-তরুণীরা পড়ালেখা শেষ করে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে সরকারি বা বেসরকারি চাকরি খোঁজার পেছনেই বেশিরভাগ সময় ব্যয় করে থাকেন। তবে আমাদের এই সমাজে এমন কিছু তরুণ উদীয়মান যুবক রয়েছে। যারা চাকরির পিছনে সময় নষ্ট না করে নিজে উদ্যোক্তা হয়ে কিছু একটা করে নিজে স্বাবলম্বী হওয়ার পাশাপাশি পরিবার ও সমাজের মানুষের কাছে ভালো অবদান রাখতে চান। তেমনি এক তরুণ উদীয়মান উদ্যোক্তা বগুড়া সদর উপজেলার সাবগ্রাম এলাকার বাসিন্দা শাওন।

একদিন হঠাৎ করেই বন্ধু মহল ও পরিবারের জমানো কিছু টাকা একত্রিত করে। সর্বসাকুল্যে ৫০ হাজার টাকা পুঁজি নিয়ে স্বল্প পরিসরের জায়গায় একটি টাইগার মুরগীর সেট তৈরি করলেন। এর পরে বাজার থেকে টাইগার মুরগী কিনেন ১ হাজার পিস। এবার শুরু হলো তার পথচলা। প্রথমে তিনি মুরগি থেকে ডিম উৎপাদনের উদ্দেশ্য কাজ শুরু করলেও। পরে তিনি তার ফার্ম থেকে উৎপাদিত ডিম থেকে বাণিজ্যিকভাবে বাচ্চা প্রজন্ম শুরু করেন। নিজের বুদ্ধি ও মেধা দিয়ে। ভাইরাস সংক্রামিত রোগ থেকে ফার্মকে বাঁচাতে তিনি ফার্মের বায়ো সিকিউরিটি জোড়দার করেন। ব্যাপকভাবে খামারের চারিপাশ পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করেন। শেডের ভিতর ও বাহিরে ৩:১ অনুপাতে চুন এবং ব্লিচিং পাউডার প্রয়োগ করেন। এক থেকে দুই দিন পর পর জীবানুনাশক শেডের ভিতর এবং বাহিরে স্প্রে প্রয়োগ করেন। মেঝের লিটার সবসময় শুকনা ও ঝরঝরে রাখার ব্যবস্থা করেন। এরকম আরও বিশেষ কিছু পদ্ধতি ব্যবহার করে শক্তভাবে ভাইরাসের হাত থেকে ফার্মকে নিরাপদ রাখেন।

প্রথমেই এখানে তিনি প্রায় দেড় হাজার ডিমের দেখা পান। চোখে মুখে শুধু স্বপ্নের জলকানি যেনো ভেসে উঠেছে। তার ফার্মে সকল মুরগিরই ডিম উৎপাদনে চলে আসে। আস্তে-আস্তে তার ডিমের সংখ্যা বৃদ্ধি পেতে থাকে। পরে ডিম বিক্রি করেই তিনি আরও কয়েকশ টাইগার মুরগীর বাচ্চা কিনেন। এই বাচ্চা গুলোও একটা পর্যায়ে এসে ডিম দিতে থাকে। পরে শাওন চিন্তা করেন। ডিম উৎপাদন করতে গেলে মুরগিরর প্রতি যে খরচ হবে।

তাতে তিনি ডিম বিক্রি করে সব খরচ বাদে তেমন লাভবান হতে পারবেন না। তাই তিনি সিদ্ধান্ত নেন। এবার তিনি একটা ইনকিউবেটর কিনবেন। তার ফার্ম থেকে যে ডিম উৎপাদন হবে এ গুলো ইনকিউবেটরে ফুটিয়ে বাচ্চা বিক্রি করতে পারলেই একজন সফল উদ্যোক্তা হওয়া সম্ভব হবে। এখন তিনি প্রতি মাসে তার খামার থেকে প্রায় ৬ হাজারের বেশি ডিম উৎপাদন করছেন।

এগুলো পুরো ডিম ইনকিউবেটরের মাধ্যমে ফুটিয়ে বাচ্চা বিক্রি করছেন। ০-৭ দিনের বাচ্চা বিক্রি করছেন। এর মাধ্যমে তার খামার থেকে প্রতি মাসে প্রায় লাখ টাকার অর্থ উপার্জন হচ্ছে। শুধু তাই নয় প্রথমে একাই ফার্মে কাজ শুরু করলেও এখন তার ফার্মের কাজের জন্য পাঁচ জন বেকার লোকজনের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করে দিয়েছেন এই উদ্যোক্তা। শাওন ফার্মে মান সম্পন্ন বাচ্চা উৎপাদন সারা দেশের তরুণ উদীয়মান উদ্যাক্তাদের কাছে ব্যাপক ভাবে প্রশংসনীয় হয়ে উঠেছে। আর তাই বগুড়ার বাহিরে থেকেও অনেকেই তার ফার্মের বাচ্চা কিনতে প্রতি দিন এখানে ছুটে আসছেন।

সুদূর গাইবান্ধা আসা এক তরুণ উদীয়মান উদ্যোক্তা জানান, আমি নতুন একজন খামারি উদ্যোক্তা। আমি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শাওন ভাইয়ের মুরগী পালন করে স্বাবলম্বী হওয়ার কথা শোনে এখানে এসেছি। আমি শোনেছি শাওন ভাইয়ের মুরগীর বাচ্চা গুলো মানে অনেক ভালো। তাই এখান থেকে কিছু বাচ্চা কিনতে এসেছি এবং শাওন ভাইয়ের কাছ থেকে কিছু পরামর্শ নিবো। তিনি আরও বলেন, পড়ালেখার পাশাপাশি মুরগির খামার গড়ে আমি সংসারের হাল ধরতে চাই। অধম্য তরুণ উদীয়মান খামারী শাওন সব সময় একটা কথাই ভাবতেন। চাকরি করবো না চাকরি দিবো। পরের অধীনে অল্প বেতন চাকরি না করে যদি নিজে এমন একটা কাজ করা যায়। যেখানে ভাল মুনাফা পাওয়ার পাশাপাশি আরও বেকার কিছু মানুষের কাজের ব্যবস্থা করা যাবে। অনেক সাধনার পরে হলেও তার সেই সোনালী স্বপ্ন আজ বাস্তবে রূপ ধারণ করেছে। এমনটিই জানিয়েছেন এক সাক্ষাৎকারে উদ্যোক্তা শাওন। এলাকাবাসীরা জানিয়েছেন উদ্যোক্তা হয়ে জীবনে নতুন যে কোন কাজ শুরু করলে শুরুটা অনেকটা কষ্টের ও বাঁধা বিপত্তির হলেও। একটা পর্যায়ে এবং কোন একটা সময়ে এসে সফলতা যে ধরা দেয়। তারই জলন্ত প্রমাণ বগুড়ার খামারি উদ্যোক্তা শাওন।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত