পরীক্ষামূলকভাবে বস্তায় আদা চাষ করে সুফল পেয়েছেন বগুড়ার দুপচাঁচিয়া উপজেলার তরুণ উদ্যোক্তা রকি। পদ্ধতিতে আদা চাষ করে সফল হয়েছেন তিনি। রকি এখন বড় পরিসরে বস্তায় আদা চাষ করতে চান। তরুণ উদ্যোক্তা রকির আদা চাষ দেখে আশপাশের বেকার যুবকেরাও আগ্রহী হয়ে উঠেছেন।
জানা যায়, কৃষিতে দিন দিন প্রযুক্তির চাহিদা বাড়ছে। শিক্ষিত মানুষেরা এখন কৃষির সঙ্গে জড়িয়ে পড়ছেন। রকির মতো অনেকেই প্রতিনিয়ত পরামর্শ নিতে আসছেন। তারা উপকৃত হচ্ছেন। এতে বাড়ছে উৎপাদনও। দেশে মসলার মোট চাহিদা ৫৮ দশমিক ৫০ লাখ মেট্রিক টন। এর মধ্যে আমদানি হয় ৪৪ দশমিক ৯৬ লাখ মেট্রিক টন। এরপরেও ঘাটতি থেকে যায় আরও ১৩ দশমিক ৫৪ লাখ টন। দেশে প্রায় ৪.২৯ হেক্টর জমিতে মসলা চাষ হয়। উৎপাদিত মসলার পরিমাণ প্রায় ৩৫.৯৩ টন। অর্থাৎ বিশ্বের প্রায় ৯ শতাংশ মসলা দেশে উৎপাদিত হয়। রকি প্রথমে পরীক্ষামূলকভাবে ৪০ বস্তায় আদা চাষ শুরু করেন। এতে তিনি সফলতা পেয়েছেন। এখন তিনি বড় পরিসরে আদা চাষ করে স্থানীয় চাহিদা পূরুণ করতে চান। এ পদ্ধতিতে প্রথমে বস্তায় পরিমাণমতো জৈব ও রাসায়নিক সার এবং বেলে দোআঁশ মাটি দিতে হয়। এর সঙ্গে দানাদার কীটনাশক মিশিয়ে দিতে হয়। একেকটি বস্তায় ২০ থেকে ২৫ কেজি মাটি দিয়ে তাতে আদার বীজ রোপণ করতে হয়। প্রতিটি বস্তায় তিনটি চারা রোপণ করা হয়। বস্তাপ্রতি খরচ হয় ৫০ টাকার মতো। ফলন ভালো হলে দেড় কেজির মতো আদা পাওয়া যায়। বাজারে প্রতি কেজি আদা পাইকারি ২০০ ও খুচরা ২৫০ টাকায় বিক্রি হয়ে থাকে। আদা চাষি রকি বলেন, আদা চাষে বেশি পরিচর্যা বা পরিশ্রম হয় না। এই ফসল চাষে অতিরিক্ত জায়গারও প্রয়োজন হয় না। মাটির তুলনায় বস্তায় ফলনও দ্বিগুণ। এছাড়া কম খরচে ভালো লাভ হয়। এখন তিনি আদা চাষ করতে চান বাণিজ্যিকভাবে। চাষ পদ্ধতি জানতে বগুড়ার মসলা গবেষণা কেন্দ্র থেকে পরামর্শ নেন তিনি।
বগুড়া মসলা গবেষণা অফিস সূত্রে জানা যায়, ভারতীয় উপমহাদেশে মসলার আদি ব্যবহার ছিল মূলত রং ও ওষুধ হিসেবে। ঔষধি গুণের কারণেই এক সময় এটি খাদ্যপণ্যের সঙ্গে অবিচ্ছেদ্য উপাদান হয়ে ওঠে। এ উপমহাদেশে আগে দারুচিনি, কালো মরিচ চাষাবাদ হওয়া শুরু হয়। বাড়তে থাকে কদর। সাধারণত গ্রীষ্মমণ্ডলীয় কিছু উদ্ভিদ থেকে মসলা সংগ্রহ করা হয়। বিশ্বজুড়ে ১১৩টি মসলার চাষাবাদ হলেও বাংলাদেশে হয় প্রায় ৩০ ধরনের। মসলা গবেষণা কেন্দ্রে কৃষকদের জন্য বিভিন্ন প্রযুক্তিগত উদ্ভাবন রয়েছে। এখানকার গবেষকরা বিভিন্ন সময়ে কৃষকদের মাঝে এ সব প্রযুক্তিগত চাষ ব্যবস্থার প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকেন। এগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য প্রযুক্তি হলো বস্তা পদ্ধতিতে আদা রোপন।
বগুড়া কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা যায়, অনাবাদি পতিত জমিতে আদা চাষ করা যায়। অতিরিক্ত জমির প্রয়োজন পড়ে না। পরিচর্যা করাও অনেক সহজ। এছাড়া বাজারে আদার ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। বর্তমান বাজার মূল্য ভালো। মূলত এ সব কারণেই চাষিরা বস্তায় আদা চাষে আগ্রহী হচ্ছেন। কৃষি বিভাগ থেকে চাষীদের বিভিন্ন সময় পরামর্শ দেয়া হচ্ছে।