ঢাকা বৃহস্পতিবার, ১০ জুলাই ২০২৫, ২৬ আষাঢ় ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

বিএনপির দুই পক্ষের বিরোধে একরাতে দুই খুন

বিএনপির দুই পক্ষের বিরোধে একরাতে দুই খুন

নারায়ণগঞ্জের বন্দরে অটোস্ট্যান্ডের দখলকে কেন্দ্র করে বিএনপির দুই গ্রুপের বিরোধের জেরে আবদুল কুদ্দুস (৬০) ও মেহেদী (৩৮) নামে দুইজনকে হত্যা করা হয়েছে। নিহত আব্দুল কুদ্দুস (৬০) বন্দর উপজেলার হাফেজীবাগ এলাকার মৃত সাদেক আলীর ছেলে ও রনি-জাফর গ্রুপের সমর্থক, মেহেদী (৩৮) সালেহ নগর এলাকার জলিল মুন্সির ছেলে ও বাবু-মেহেদী গ্রুপের সদস্য।

এ ঘটনায় গতকাল রোববার (২২ জুন) সকালে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন জেলা পুলিশ সুপার প্রত্যুষ কুমার মজুমদার। এর আগে গত শনিবার রাত সাড়ে ৯টায় উপজেলার শাহী মসজিদ এলাকায় ও গভীর রাতে সিরাজউদ্দৌলা ক্লাবের সামনে এ হত্যাকাণ্ড দুটি ঘটে।

এ দিকে এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় র‌্যাব ও পুলিশের অভিযানে শান্ত (২৫) ও রবিন (২৮) নামে তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তাররা হলেন- বন্দর উপজেলার হাফেজীবাগ এলাকার নান্নু মিয়ার ছেলে শান্ত (২৬), আলমচানের ছেলে রবিন (২৬) ও সেলিম চৌধুরীর ছেলে সোহেল চৌধুরী (২৮)।

সরেজমিনে দেখা যায়, কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে দুটি হত্যার পর থেকে ওই এলাকায় থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। গতকাল রোববার দুপুরেও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে বন্দর রেললাইন এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন দেখা যায়। জানা গেছে, বন্দর রেললাইন অটোস্ট্যান্ড নিয়ে কিছু দিন ধরে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের ২৩নং ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর ও মহানগর বিএনপির যুগ্ম-আহ্বায়ক আবুল কাওসার আশার অনুসারী রনি-জাফর গ্রুপের সঙ্গে ২১নং ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর ও মহানগর বিএনপির নেতা হান্নান সরকারের অনুসারী বাবু-মেহেদীর বিরোধ চলছিল। এ নিয়ে গত শুক্রবার দুই পক্ষের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনায় অন্তত ৮ জন আহত হন। সেই বিরোধের জের ধরে গত শনিবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে বাবু-মেহেদী গ্রুপের লোকজন রনি-জাফর গ্রুপের সমর্থক আব্দুল কুদ্দুসকে কুপিয়ে গুরুতর আহত করে। পরে তাকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। এই খবর পেয়ে নিহতের স্বজন ও রনি-জাফর গ্রুপের লোকজন রেললাইন সংলগ্ন এলাকার সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন।

এদিকে একই রাত ৩টার দিকে বন্দর সিরাজুদ্দৌলার ক্লাব মাঠ দিয়ে মেহেদী ও তার লোকজন যাওয়ার পথে তাদেরকে দেখে রনি-জাফর গ্রুপের লোকজন ধাওয়া দিয়ে মেহেদীকে ধরে গণপিটুনি দেয় ও ছুরিকাঘাতে আহত করে। পরে স্থানীয়রা তাকে আহত অবস্থায় উদ্ধার করে শহরের খানপুর ৩০০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

নিহত মেহেদীর বোনের স্বামী মাহফুজুল সৌরভ বলেন, বন্দরে যখন মার্ডারটা হয় তখন মেহেদী ছিল বাড়িতে। ও থাকতো অন্তত এক কিলোমিটার দূরে আমিন আবাসিক এলাকায়। মার্ডারের পর প্রতিপক্ষের লোকজনকে খুঁজতে গেলে রাস্তায় মেহেদীরে পেয়ে যায়। তারা মেহেদীকে তুলে সিরাজউদ্দোল্লা ক্লাবে নিয়ে বেধড়ক মারধর করে বুক, মাথা আর মুখ একেবারে থেতলে দেয়। আমরা হাসপাতালে তার লাশ পাই।

এ বিষয়ে সাবেক কাউন্সিলর ও মহানগর বিএনপির আবুল কাউসার আশা বলেন, রনি আর মেহেদীরা সব একই গ্রুপের লোক ছিল। ছাত্রদলের রাজনীতির সময় থেকেই দেখছি, তারা ছিল আপন দুই ভাইয়ের মতো। আওয়ামী লীগের আমলে দুইজনে একসঙ্গে জেলও খাটছে। কিন্তু গত ছয়মাস ধরে কিশোর গ্যাং নিয়ন্ত্রণ, মাদক ব্যবসা ও আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে দুইপক্ষের মধ্যে উত্তেজনা চলছিল।

তবে, এই দ্বন্দ্বে নিজের কোনো সম্পৃক্ততা নেই দাবি করে সাবেক এ কাউন্সিলর বলেন, দুই জনই হান্নান সরকারের ঘনিষ্ঠ ছিল। স্থানীয় কারণে দুইজনের দ্বন্দ্ব তৈরি হয়। এইটার সঙ্গে আমার কোনো সম্পৃক্ততা নেই। মেহেদী ও রনি দুই জনই আমার ভাইয়ের মতো। আমার সঙ্গে হান্নান কাকারও কোনো দ্বন্দ্ব নেই। কিশোর গ্যাং ও মাদকের দ্বন্দ্বে রাজনৈতিক কারণে আমাকে জড়ানো হচ্ছে। এটি পলিটিকেল কোনো ব্যাপার না।

তবে এ প্রসঙ্গে কথা বলতে হান্নান সরকারের মোবাইল নম্বরে একাধিকবার কল করেও তার সংযোগ পাওয়া যায়নি। খুদেবার্তা পাঠালেও সাড়া দেননি তিনি।

নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপার প্রত্যুষ কুমার মজুমদার বলেন, স্থানীয়ভাবে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে হত্যাকাণ্ড দুটি ঘটেছে। এই ঘটনা যারা ঘটিয়েছে এবং যারা নেপথ্যে আছেন তাদের কাউকে ছাড় দেয়া হবে না। জড়িত সবাইকে আইনের আওতায় আনা হবে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত