ঢাকা শনিবার, ২২ মার্চ ২০২৫, ৮ চৈত্র ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

রাবার ড্যাম কৃষকের কাজে আসছে না

রাবার ড্যাম কৃষকের কাজে আসছে না

দিনাজপুরে নির্মিত দুটি রাবার ড্যাম কাজে আসছে না। এতে বোরো ধানের খেতে বিঘাপ্রতি সেচ খরচ দুই থেকে তিন হাজার টাকা বেশি লাগছে। দিনাজপুর সদর উপজেলায় মোহনপুর রাবার ড্যাম ছিদ্র হয়ে যাওয়ায় সেচের জন্য নদীর পানি ধরে রাখা সম্ভব হয়নি। শুষ্ক মৌসুমে সেচ দেওয়ার জন্য দিনাজপুর সদর উপজেলায় আত্রাই ও সাঁইতাড়া নদীতে নিমিত দুটি রাবার ড্যাম। নদীতে পানি না থাকায় অন্তত আড়াই হাজার হেক্টর জমিতে বোরো চাষ ব্যাহত হচ্ছে। এখন গভীর ও অগভীর নলকূপ দিয়ে সেচ দিতে গিয়ে বেশি খরচ পড়ে যাচ্ছে। এতে কৃষকেরা বিপাকে পড়েছেন।

স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) সূত্রে জানা যায়, ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় সেচের অভাবে দিনাজপুর সদর ও চিরিরবন্দর উপজেলার কয়েক হাজার হেক্টর জমি অনাবাদি থাকত। কৃষক ও জেলেদের দুরবস্থার কথা বিবেচনা করে ২০০১ সালে কাঁকড়া নদীতে এলজিইডি ৮ কোটি ৪০ লাখ টাকা ব্যয়ে ১৩০ ফুট দীর্ঘ সাঁইতাড়া রাবার ড্যাম নির্মাণ করে। পরে ২০১৩ সালে ১৬ কোটি টাকা ব্যয়ে আত্রাই-কাঁকড়ার মোহনার কাছাকাছি মোহনপুর রাবার ড্যামটি নির্মাণ করা হয়। ৪৪ কিলোমিটার এলাকায় পানি মজুত রাখার ক্ষমতাসম্পন্ন ১৩৫ মিটার দৈর্ঘ্যের এই ড্যামটি নির্মাণ করা হয়।দিনাজপুরের চিরিরবন্দর উপজেলা দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে আত্রাই নদ। এই নদেরই একটি শাখা নদী হচ্ছে কাঁকড়া নদী। সম্প্রতি দুটি নদ-নদীরই খননকাজ করা হয়েছে। আত্রাই নদের মোহনপুর এলাকায় করা হয়েছে মোহনপুর রাবার ড্যাম এবং কাঁকড়া নদীর সাঁইতারা এলাকায় আছে সাঁইতারা রাবার ড্যাম। উদ্দেশ্য ছিল শুষ্ক মৌসুমে দুটি রাবার ড্যামে পানি আটকে রেখে কৃষককে সেচ সুবিধা দেয়া। কিন্তু মোহনপুর রাবার ড্যামের দুটি ব্যাগ ছিদ্র হওয়ায় এবার পানি ধরে রাখা সম্ভব হয়নি। আবার কাঁকড়া নদী পুরোপুরি খননকাজ হয়নি। ফলে ওই নদীতে থাকা সাঁইতারা রাবার ড্যামটি চালু করা হয়নি।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এই ড্যামটি চালু না থাকায় পানি কাঁকড়া নদীর আশপাশে না এসে গভীর খননকৃত আত্রাই নদের দিকে প্রবাহিত হচ্ছে। ফলে চলতি বোরো মৌসুমে দুটি রাবার ড্যামই কাজে আসছে না কৃষকের।

সম্প্রতি আত্রাই ও কাঁকড়া নদী এবং মোহনপুর ও সাঁইতাড়া রাবার ড্যাম ঘুরে স্থানীয় কৃষকদের সঙ্গে কথা বললে তারা বলেন মোহনপুর রাবার ড্যামের প্রতিবছর শুষ্ক মৌসুমে ড্যামটির সমস্যা দেখা দেয়। এবার মোহনপুর রাবার ড্যামের দুটি স্থানে চার ফুট ছিদ্র হয়েছে। রাবার ড্যামগুলো বারবার ফুটো হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু কর্তৃপক্ষ এই সমস্যার স্থায়ী সমাধানে ব্যবস্থা নেয় না। এই সমস্যার সুযোগ নিয়ে লাভবান হচ্ছেন নদীতে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনকারীরা। সাঁইতাড়া রাবার ড্যামের বিষয়ে স্থানীয়রা বলছেন, সম্প্রতি নদী দুটির খননকাজ করা হয়েছে। তবে কাঁকড়া নদীর আংশিক খননকাজ করায় পানি আত্রাই নদের দিকে নেমে যাচ্ছে। কাঁকড়ার উভয় পাড়ের কৃষক পানি পাচ্ছেন না। দিনাজপুরে মোহনপুর ও সাঁইতাড়া রাবার ড্যাম নদীগুলো পানিশূন্য হয়ে পড়েছে।

সম্প্রতি দিনাজপুরের চিরিরবন্দর উপজেলার সুকদেবপুর এলাকায় কৃষকরা বলেন, ‘খরার সময় এই এলাকার প্রধান ফসল বোরো ধান। এই ধান আবাদে গত কয়েক বছর থেকে আমাদের ভরসা হয়ে উঠেছে। রাবার ড্যাম দুটি চালু থাকলে আশপাশের সব খাল ও জলাশয়ে পানি আসত। আমরা এলএলপিগুলো (লো লিফট পাম্প) থেকে স্বল্প খরচে পানি নিতে পারতাম। কিন্তু এবার ড্যাম দুটি অচল থাকায় সেচের খরচ দ্বিগুণ হয়ে গেছে। এলএলপিগুলো থেকে পানি নিতে বিঘাপ্রতি যেখানে ১ হাজার থেকে ১ হাজার ২০০ টাকা খরচ হতো, সেখানে গভীর নলকূপ থেকে পানি নিতে বিঘায় সাড়ে তিন থেকে চার হাজার টাকা খরছ হচ্ছে।’ চিরিরবন্দর ও সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার দেওয়া তথ্য অনুযায়ী দুই উপজেলার প্রায় আড়াই হাজার হেক্টর জমি দুটি রাবার ড্যামে সেচ সুবিধার আওতায় আছে। নদী থেকে পানি নিতে বিএডিসি (ক্ষুদ্র সেচ), বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ আত্রাই, কাঁকড়া, চিরি নদীর উভয় পারে ৫৩টি এলএলপি, ১৪টি স্যালোচালিত সেচ যন্ত্র ও ২১টি বৈদ্যুতিক মোটরের সাহায্যে পানি উত্তোলনের ব্যবস্থা করেছে। কিন্তু নদীতে পানি না থাকায় সংশ্লিষ্ট এলাকায় বিদ্যুৎচালিত ৪৩৯টি গভীর নলকূপ এবং ২৫৮টি ডিজেলচালিত গভীর নলকূপের মাধ্যমে সেচ কার্যক্রম চালাচ্ছেন কৃষকেরা।

কেউ কেউ নদীর মাঝখানে লাগিয়েছেন বোরো ধান। কৃষকদের সেচ সুবিধায় এই নদীতেই ক্ষুদ্র আকারে আরো দুটি জলকপাট নির্মাণ করেছে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)। মোহনপুর রাবার ড্যামটি অপারেটরের দায়িত্ব পালন করেন মহসীন আলী। তিনি বলেন, ‘২০২২ সালে মোহনপুর রাবার ড্যাম একবার ফুটো হয়েছিল। তখন ঠিক করা হয়েছে। এ বছর আবারো তিনটি ব্যাগের মধ্যে দুটি ফুটো হয়েছে। স্থানীয়ভাবে চেষ্টা করা হয়েছে। নতুন রাবার লাগাতে হবে।’ কাঁকড়া নদীর খনন বিষয়ে বিআইডব্লিউটি এর তৎকালীন প্রকৌশলী তাজমুল ইসলাম বলেন, ২০২১-২২ অর্থবছরে প্রায় একই সময়ে আত্রাই ও কাঁকড়া নদীর খননকাজ শুরু হয়। তবে বালুমহাল ও কয়েকটি সেতু থাকায় এবং স্থানীয় কিছু প্রতিবন্ধকতা থাকায় কাঁকড়া নদীর খননকাজ শেষ করা যায়নি। তারপরও খননকাজটি শেষ করতে আমরা সর্বাত্মক চেষ্টা করেছি।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত