কুমিল্লায় পুলিশের গুলিতে পা হারানোর ঘটনায় জেলার নাঙ্গলকোট থানার সাবেক ওসি নজরুল ইসলামসহ ৫ পুলিশ এবং সহযোগিতার অভিযোগে উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান সামছুদ্দিন কালু ও সাবেক পৌর মেয়র আবদুল মালেকসহ ৩১ জনের নাম উল্লেখ করে মামলার আবেদন করা হয়েছে।
গত বুধবার কুমিল্লার জেলা ও দায়রা জজ আদালতে অভিযোগ দাখিল করেন নাঙ্গলকোট উপজেলার বাম (পন্ডিত বাড়ি) গ্রামের আলী হায়দারের ছেলে ও স্থানীয় মসজিদের ইমাম বেলাল হোসেন মজুমদার।
তিনি জামায়াতে ইসলামীর একজন সমর্থক বলে জানিয়েছেন। মামলার অভিযোগে বলা হয়, ২০১৫ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি রাত ১১টার দিকে নাঙ্গলকোট থানার ওসি নজরুল ইসলামের নেতৃত্বে পুলিশের একটি দল মসজিদের ইমাম বেলাল হোসেনের (৫০) ঘরে প্রবেশ করে।
এ সময় ওসির নির্দেশে থানার তৎকালীন এসআই বাবুল আলী, সালাউদ্দিন আহমেদ ও কনস্টেবলসহ ৫ পুলিশ সদস্য বেলাল হোসেন ও তার এক অনুসারী বেলায়েত হোসেনকে তুলে নিয়ে থানায় আটকে রাখে। পরে গভীর রাতে তাদেরকে হত্যার উদ্দেশে ঢাকা-নোয়াখালী মহাসড়কের লুধুয়া নামক স্থানে নিয়ে এলোপাতাড়ি মারধর করা হয়। এক পর্যায়ে ওসির নির্দেশে তাদের পায়ে গুলি করা হয়।
এ সময় গুলির শব্দে স্থানীয়রা এগিয়ে এলে পুলিশ সদস্যরা ফাঁকা গুলি করে আতঙ্ক সৃষ্টি করে।
এরপর পুলিশ তাদেরকে নাঙ্গলকোট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়। পরে পুলিশ তাদের বিরুদ্ধে নাঙ্গলকোট থানায় বিস্ফোরক আইনে মামলা করে এবং এ মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ (কুমেক) হাসপাতালে নিয়ে কারা ওয়ার্ডে ভর্তি করে।
মামলার অভিযোগে আরও উল্লেখ করা হয়, বাদী বেলাল হোসেনের পায়ের অবস্থার অবনতি হলে কুমেক হাসপাতালের চিকিৎসক ২০১৫ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি তার বাম পা কেটে ফেলেন। এতে তিনি (বাদী বেলাল) পঙ্গু হয়ে পড়েন। অন্য ভুক্তভোগী বেলায়েতের পা কাটা না হলেও তিনি যথাযথ চিকিৎসার অভাবে মানবেতর জীবনযাপন করছেন।
এ মামলায় অন্য আসামিদের মধ্যে অপসারিত সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান নাজমুল হাসান ভূঁইয়া বাছির, সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান আবু ইউসুফ ভূঁইয়া, বাঙ্গড্ডা ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান সাইফুল ইসলামসহ স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের বেশ কয়েক জন নেতাকর্মীকে আসামি করা হয়।
বাদী বেলাল হোসেন মজুমদার সাংবাদিকদের বলেন, ‘কোনো অপরাধ না করেও আমাকে পা হারাতে হয়েছে। ঘটনার সময় পুলিশের সঙ্গে আওয়ামী লীগ দলীয় অন্যান্য আসামিরা ছিলেন। গুলি ও নির্যাতনে পঙ্গুত্ব বরণ করার পর পরিবার পরিজন নিয়ে অর্ধাহারে অনাহারে মানবেতরভাবে দিনযাপন করছি।
আমি দায়ীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করছি। আশা করি আমি ন্যায়বিচার পাব। বাদী পক্ষের আইনজীবী আনোয়ার হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, পুলিশ হেফাজতে নির্যাতনের এমন বর্বরোচিত ঘটনায় দায়ের করা অভিযোগটি আদালত গ্রহণ করেছেন। পরে আদেশ দিবেন বলে জানিয়েছেন।