ঢাকা শনিবার, ১৩ ডিসেম্বর ২০২৫, ২৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

৫৫ বছরেও নির্মিত হয়নি ইউনিয়ন পরিষদ ভবন

৫৫ বছরেও নির্মিত হয়নি ইউনিয়ন পরিষদ ভবন

শেরপুরের ঝিনাইগাতী উপজেলার কাংশা ইউনিয়নে ৫৫ বছরেও নির্মিত হয়নি পরিষদ ভবন। ফলে যুগযুগ ধরে সেবাগ্রহিতাদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।

পরিষদ ভবন না থাকায় যুগযুগ ধরে যে এলাকা থেকে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছে তার বাড়ির সামনেই অস্থায়ী পরিষদ ভবন স্থাপন করে কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে। গান্দিগাঁও গ্রামের রহিদাস কোচ, পরিমল কোচ, বাঁকাকুড়া গ্রামের ধীমান চন্দ্র কোচ, কানুরাম কোচসহ গ্রামবাসীরা জানান, দেশ স্বাধীনের পর বর্তমানের ধানশাইল ও কাংশা ইউনিয়ন পরিষদ নিয়ে একটি ইউনিয়ন পরিষদ ছিল। এসময় দুই ইউনিয়নের ভৌগোলিক সীমারেখার মাঝ খানে আয়নাপুরে অস্থায়ী পরিষদ ভবন স্থাপন করে কার্যক্রম পরিচালিত হয়। ৯০ দশকে ধানশাইল ও কাংশা ইউনিয়ন ভাগ হয়ে ২টি ইউনিয়নে রুপান্তরিত হয়। এলাকাবাসী জানান ইউনিয়ন ২টি ভাগ হলেও পূর্বের ওই ভবনেই কাংশা ইউনিয়ন পরিষদের কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে। আয়নাপুরের ভবনটি ২ ইউনিয়ন পরিষদের জন্য প্রযোজ্য ছিল।

কিন্তু পূর্বের ধারাবাহিকতায় বর্তমানেও কাংশা ইউনিয়ন পরিষদের কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে আয়নাপুরের অস্থায়ী কার্যালয় থেকেই আয়নাপুর বর্তমান কাংশা ইউনিয়নের দক্ষিণ পশ্চিম সীমান্তের দেড় থেকে দুই কিলোমিটারের মধ্যে কাড়াগাঁও বিষ্ণুপুর নাচনমহরি গ্রামের পাশ দিয়ে বর্তমান চেয়ারম্যানের বাড়ির সামনে অবস্থিত। চেয়ারম্যান আতাউর রহমান চাইছেন আয়নাপুরেই স্থায়ীভাবে ইউনিয়ন পরিষদ ভবন নির্মিত হউক।

এ মর্মে তিনি সাবেক সংসদ সদস্য একেএম ফজলুল হকের কাছ থেকে ডিও লেটারও সংগ্রহ করেন বলে জানা গেছে। এরপরের সংসদ সদস্য এডিএম শহিদুল ইসলামের কাছ থেকে গুরুচরন দুধনই এলাকায় পরিষদ ভবন নির্মাণের জন্য ডিও লেটার নেন সাবেক চেয়ারম্যান জহুরুল হক। তবে এলাকাবাসীর দাবি ইউনিয়ন পরিষদের ভৌগোলিক সীমারেখার মাঝ খানে ইউনিয়ন পরিষদ ভবন নির্মিত হউক।

ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য মুসা সরদার, মানিক মিয়াসহ গ্রামবাসীরা জানান, আয়নাপুর ওই ইউনিয়ন পরিষদের অস্থায়ী কার্যালয় থেকে উত্তর ও পূর্বদিকে বাকাকুড়া, গান্দিগাও, নওকুচি, হালচাটি, গজনী প্রায় ১২ কিলোমিটার দূরত্ব। উত্তর পশ্চিমে তাওয়াকোচা, জোকাকুড়া, গুরুচরণ দুধনই, ছোটগজনী প্রায় ৬ কিলোমিটার দুরত্ব। এলাকাবাসীর অভিযোগ ১৯ ৯৫ সালে কাংশা ইউনিয়নের পশ্চিম দক্ষিণ এলাকা বিষ্ণুপুর গ্রাম থেকে সাইফুল ইসলাম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। তিনি তার বাড়ির পাশেই আয়নাপুরে অস্থায়ী কার্যালয় স্থাপন করে পরিষদের কার্যক্রম পরিচালনা করেন।

তিনি পরপর দুইবার চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এসময়ে দুরের সেবা গ্রহিতারা চরম দুর্ভোগের শিকার হন। পরবর্তীতে কাংশা ইউনিয়নের পূর্ব দিকে বাকাকুড়া এলাকা থেকে আনার উল্লাহ চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। তিনি তার বাড়ির সামনেই অস্থায়ী কার্যালয় স্থাপন করে পরিষদের কার্যক্রম চালান। এসময় দুর্ভোগ পোহাতে হয় পশ্চিম এলাকার সেবা গ্রহিতাদের। আনার উল্লাহ’র পরে আরো পূর্বে গান্দিগাও এলাকা থেকে আব্দুর রউফ চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন।

তিনি তার বাড়ির সামনেই অস্থায়ী কার্যালয় স্থাপন করে পরিষদের কার্যক্রম চালান। আব্দুর রউফের পর ইউনিয়নের পশ্চিমে গুরুচরন দুধনই এলাকার জহুরুল হক চেয়ারম্যান নির্বাচিত হলে তার বাড়ি থেকেই পরিষদের কার্যক্রম চালান। সবশেষে বর্তমান চেয়ারম্যান আতাউর রহমান আয়নাপুর তার বাড়ির সামনেই আয়নাপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের পরিত্যক্ত ভবনে কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছেন। নওকুচি এলাকার ইউপি সদস্য গোলাপ হোসেন বলেন তার এলাকার হতদরিদ্র পরিবারের সদস্যরা ভিজিএফের ১০ কেজি চালের জন্য আয়নাপুরে ১২ কিলোমিটার রাস্তা যাতায়াত করতে ২শ টাকা ভাড়া দিতে হয়। এতে না খেয়ে খাকলেও কেউ ১০ কেজি চালের ছিলিপ নিতে চান না। এভাবে যুগযুগ ধরে কাংশা ইউনিয়নের সেবা গ্রহিতারা চরম দুর্ভোগের শিকার হলেও প্রশাসন নীরব ভূমিকা পালন করে আসছেন।

বর্তমানেও ইউনিয়ন পরিষদ ভবন নির্মাণের বিষয়ে স্থান নির্ধারণ নিয়ে চলছে আধিপত্য বিস্তারের লড়াই। ইতিমধ্যেই ৩ টি স্থানে পরিষদ ভবন নির্মাণের প্রস্তাব উঠে এসেছে বলে জানা গেছে। বর্তমান চেয়ারম্যান আতাউর রহমান চাইছেন আয়নাপুরে, সাবেক চেয়ারম্যান জহুরুল ইসলাম চাইছেন গুরুচরন দুধনই, সাধারণ জনগন চাইছেন ভৌগোলিক সীমারেখার মাঝ খানে ভবন নির্মিত হউক। এনিয়ে চলছে আধিপত্য বিস্তারের লড়াই।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত