সোনালি আঁশ পাট, পাট অর্থকরী ফসল হিসেবে সুপরিচিত। সেজন্য কৃষকরা পাট চাষ করতেন। তবে বর্তমানে পাট চাষের উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়ায় ও বাজারে চাহিদা না থাকায় পাট চাষে আগ্রহ হারাচ্ছেন কৃষকরা। এর ব্যতিক্রম নয় লালমনিরহাট জেলাও। কয়েক বছর আগেও লালমনিরহাট জেলার বিভিন্ন-প্রান্তের কৃষকরা পাট চাষ করতেন। এখনও লালমনিরহাট জেলার কৃষকরা পাট চাষ করেন। তবে এখন আর পাট তোলার জন্য নয়, তবে এটা এখন শাক হিসেবে ব্যবহার করার জন্য চাষ করেন কৃষকেরা। গত কয়েক বছরে লালমনিরহাট জেলার বিভিন্ন হাট-বাজারে পাট শাকের চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় কৃষকরাও শাক চাষে ঝুঁকছেন। আর শাক উৎপাদন বৃদ্ধি পাওয়ায় আশঙ্কাজনক হারে কমেছে পাটের উৎপাদন। এতে কৃষকের পাশাপাশি সরকারও প্রতিবছর বিপুল পরিমাণ ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে। যদিও এ নিয়ে লালমনিরহাট জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর পুরোপুরি নির্বিকার। জানা যায়, এবার লালমনিরহাট জেলার ৫টি উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জায়গাজুড়ে দেশি, তোষাসহ বিভিন্ন জাতের পাট চাষ হয়েছে। বিশেষ করে নীচু এলাকায় পাটের আবাদ বেশি হয় বলে জানায় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর। সরেজমিনে দেখা গেছে, এসব স্থানে বিভিন্ন জাতের পাটের আবাদ হয়েছে। তবে বেশিরভাগ কৃষকই পাটের আঁশের বদলে পাট শাককে প্রাধান্য দিচ্ছেন।
লালমনিরহাট সদর উপজেলার শিবেরকুটি গ্রামের হোসেন মিয়া নামের এক কৃষক বলেন, ১ বিঘা জমিতে পাট উৎপাদনে চাষ, সার, বীজ কিনতে ব্যয় হয়েছে ২ হাজার টাকা। জমিতে নিরানী খরচ হয় ২ হাজার টাকা এবং পাট কাটা ও জাগ (পানিতে ভিজিয়ে রাখা) দিতে ব্যয় হয় ৫ হাজার টাকা। ১ বিঘা জমিতে পাট চাষ করতে একজন কৃষকের মোট ব্যয় হয় ১০ হাজার থেকে ১১ হাজার টাকা। অথচ ১ বিঘা জমিতে ভালো আবাদ হলে পাট পাওয়া যায় ৭ মণ থেকে ৮ মণ। গতবার উঠতি বাজারে মণপ্রতি ১ হাজার ৭০০ থেকে ১ হাজার ৮০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। পাট চাষ করে লাভের বদলে পুঁজি হারানোর আশঙ্কায় থাকতে হয়। তিনি আরও বলেন, অন্যদিকে সমপরিমাণ জায়গায় পাট শাক আবাদ করলে লাভ হয় খরচের দ্বিগুণ। আর এতে করে এখন অনেকেই পাট শাক চাষে আগ্রহী হয়ে উঠছেন।
একই কথা বলেন, লালমনিরহাট সদর উপজেলার ফুলগাছ গ্রামের আলী নামের আরেক কৃষক। তিনি বলেন, বাজারে পাটের চাহিদা না থাকায় আমাদের পাট চাষে আগ্রহ নেই। তবে পাটের শাকের চাহিদা বাজারে অনেক বেশি।
আর ১ বিঘা জমি থেকে পাট শাক চাষ করে ৪০ দিনের মধ্যে ফসল উৎপাদন করে তা বিক্রি করা যায়। এতে প্রায় ১৫ হাজার থেকে ২০ হাজার টাকার মতো আয় হয়। লালমনিরহাটের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা অপূর্ব বলেন, এবার জেলার বিভিন্ন এলাকাজুড়ে দেশি, তোষাসহ বিভিন্ন জাতের পাট চাষ হয়েছে। নদী-নালা, খাল-বিল শুকিয়ে যাওয়ার ফলে পাট পচানো ও নিড়ানোর অনিশ্চয়তায় পাট চাষের একটা বড় সমস্যা বলে মনে করেন অনেক কৃষক। তার পরেও জেলার বিভিন্ন উপজেলার কিছু কিছু অংশে পাট চাষ হয়েছে।