
ভোলা জেলার দ্বীপ উপজেলা মনপুরায় দেড় লাখ মানুষের বাস। এছাড়া পর্যটন স্পট হওয়ায় দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে প্রতিদিন শত শত ভ্রমণপিপাসু মানুষ বেড়াতে আসেন দ্বীপটিতে। কিন্তু বিদ্যুৎ না থাকায় চরম ভোগান্তিতে নাকাল পর্যটক ও স্থানীয়দের জীবন-জীবিকা। পুরোটা দিন বিদ্যুৎ ছাড়া থাকতে হয় তাদের। সন্ধ্যার পর সামান্য পরিমাণে বিদ্যুৎ এলেও ২ থেকে ৩ ঘণ্টা পর তা চলে যায় বলে ২১ ঘণ্টা অন্ধকারেই কাটাতে হয় এখানকার অধিবাসীদের। বর্তমানে তাপদাহ থাকায় তাদের জীবন প্রায় ওষ্ঠাগত।
সোলার, আইপিএস এবং স্থানীয় পর্যায়ে জেনারেটরের মাধ্যমে উৎপাদিত বিদ্যুৎ ব্যবহার করতে গিয়ে বাড়তি খরচও গুনতে হচ্ছে দ্বীপবাসীকে। এতে ব্যাহত হচ্ছে তাদের স্বাস্থ্য, শিক্ষা, ব্যবসা-বাণিজ্য এবং প্রশাসনিক কার্যক্রম। আশপাশের চরাঞ্চলগুলোতে জাতীয় গ্রীডের বিদ্যুৎ চলছে, অথচ মনপুরা একটি উপজেলা সদর হয়েও বিদ্যুৎ না থাকায় হতাশ কর্মকর্তাসহ স্থানীয় বাসিন্দারা।
মনপুরাবাসী জানান, ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তারা নামমাত্র ৩ ঘণ্টা বিদ্যুৎ পান। বাকি ২১ ঘণ্টা তারা থাকেন চরম নাজেহাল অবস্থায়। মনপুরা প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক সীমান্ত হেলাল জানান, মনপুরার জনপদ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যমণ্ডিত হলেও বিদ্যুতের অভাবে এখানে এসে পর্যটকরা বেশি সময় থাকতে পারেন না। স্থানীয় হাজীর হাট ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুল মান্নান বলেন, আমাদের আশপাশের দুর্গম চরগুলো সাবমেরিন ক্যাবলের মাধ্যমে জাতীয় গ্রীডের সঙ্গে যুক্ত হয়ে বিদ্যুতের আলো জ্বললেও মনপুরাবাসী একেবারে অন্ধকারাচ্ছন্ন থাকে। অ্যাডভোকেট সালাউদ্দিন প্রিন্স অভিযোগ করেন, আমলাতান্ত্রিক জটিলতা ও রাজনৈতিক নেতাদের সদিচ্ছার অভাবে বিগত ফ্যাসিস্ট সরকার অবহেলিত মনপুরার বিদ্যুৎ ব্যবস্থার কোনোপ্রকার উন্নয়ন সাধন করেননি। তাই স্থানীয় জনগণ অতি দ্রুত বিদ্যুতের আলোতে আলোকিত হতে চান। সেজন্য তারা সরকারের হস্তক্ষেপ চেয়েছেন।
ওয়েস্টজোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কো¤পানি ওজোপাডিকো মনপুরা সূত্রে জানা গেছে, গোটা উপজেলায় বিদ্যুতের চাহিদা ১৫ মেগাওয়াট। উপজেলা সদর হাজীরহাট ও আশ-পাশের এলাকার ৯৬৬ জন গ্রাহকের প্রয়োজন ৪ মেগাওয়াট। অথচ মনপুরায় বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে মাত্র ৪২০ কিলোওয়াট। যা প্রয়োজনের তুলনায় ১০ ভাগের একভাগেরও কম। এখানে ৩টি জেনারেটর রয়েছে, এর মধ্যে ১টি বিকল। বাকি দু’টিও দীর্ঘদিনের পুরোনো, পরিত্যক্ত এবং সার্বক্ষণিক চলার উপযুক্ত নয়। যে কারণে যেটুকু বিদ্যুৎ উৎপন্ন হয় তাতে প্রয়োজনীয় বিদ্যুৎ সরবরাহ করা সম্ভব হয় না। বিদ্যুৎ বিভাগের আবাসিক প্রকৌশলী কে,এম, ফরিদুল ইসলাম বলেন, সমস্যা সমাধানের জন্য বর্তমানে উপজেলা সদরে ৩ মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতা সম্পন্ন সোলার বিদ্যুৎ প্লান্ট নির্মাণের কাজ চলছে। এছাড়া পার্শ্ববর্তী উপজেলা চরফ্যাশন থেকে সাবমেরিন ক্যাবলের মাধ্যমে মনপুরাকে জাতীয় গ্রীডের সঙ্গে সংযুক্ত করা হলে মনপুরাবাসীর বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত হবে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মনপুরা উপজেলার রামনেওয়াজ ও বাংলাবাজারে দু’টি বেসরকারি সোলার প্লান্ট থেকে প্রতিদিন প্রায় ৫০০ কিলোওয়াট বিদ্যুৎ উৎপন্ন হচ্ছে,তবে এর ১ হাজার ১৯৯ জন গ্রাহককে ইউনিট প্রতি ৩৫ টাকা হারে বিল পরিশোধ করতে হচ্ছে। স্থানীয়দের অভিমত, জাতীয় গ্রীডের সঙ্গে মনপুরা সংযুক্ত হলে ইউনিট প্রতি মূল্য দাঁড়াবে ৬ থেকে ৭ টাকায়। এতেকরে যেমনি বিদ্যুৎহীন মনপুরা আলোকিত হবে, তেমনি সাশ্রয়ী মূল্যে বিদ্যুৎ কিনতে পারবে অবহেলিত দ্বীপবাসী।