আওয়ামী লীগ নেতার মামলার কারণে গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে কুষ্টিয়া-খুলনা মহাসড়কের প্রায় ৩৫০ মিটার জায়গা। এ কারণে প্রায় তিন বছর ধরে বন্ধ রয়েছে মহাসড়কের ওই অংশের নির্মাণ কাজ। কাজ বন্ধ থাকায় মহাসড়কের ওই অংশটি দীর্ঘদিন পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে। মহাসড়কের পড়ে থাকা এই জায়গাটি এখন জনসাধারণের কাছে গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
অন্যদিকে প্রায় ৬০০ কোটি টাকার এই মেগা প্রকল্পের ভবিষ্যত নিয়েও এক ধরনের অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। এ অবস্থায় দীর্ঘদিন ধরে ঝুঁকি নিয়ে মহাসড়কের এক পাশের রাস্তা দিয়েই যানবাহন ও পথচারীদের যাতায়াত করতে হচ্ছে। এতে করে একদিকে যেমন স্বাভাবিক চলাচলে বাধাগ্রস্থ হচ্ছে অন্যদিকে চরম ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে সড়কটি। প্রতিনিয়ত ঘটছে ছোট-বড় দুর্ঘটনা। চরম ভোগান্তি পৌহাতে হচ্ছে গুরুত্বপূর্ণ এই মহাসড়ক দিয়ে চলাচলকারী জনসাধারণকে।
সড়ক বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ২০২০ সালে কুষ্টিয়া পৌর এলাকার বটতৈল থেকে শহরের প্রাণকেন্দ্র মজমপুর গেট এবং মজমপুর গেট থেকে ত্রিমোহনী পর্যন্ত মোট ১০ কিলোমিটার দুই লেন সড়কটি চার লেনে উন্নীতকরণের কাজ শুরু হয়। প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয় প্রায় ৬০০ কোটি টাকা। এই কাজ দুই ভাগে ভাগ করা হয়। প্রকল্পের মধ্যে ছিল সড়কের দুইপাশে দৃষ্টিনন্দন ফুটপাত, ড্রেন ও ডিভাইডার নির্মাণ। একই সঙ্গে ডিভাইডারের মধ্যে গাছ লাগিয়ে সৌন্দর্যবর্ধন করা।
ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান জহিরুল লিমিটেড বটতৈল থেকে মজমপুর গেট পর্যন্ত ৫ কিলোমিটার এই রাস্তা নির্মাণ কাজের কার্যাদেশ পায়। ২০২২ সালের জুন মাসে কাজটি শেষ হওয়ার কথা থাকলেও বেশ কয়েকবার সময় বাড়ানো হয়। এরপরেও কাজ শেষ হয়নি। জানা গেছে, রাস্তার কাজ শুরু হওয়ার পর কুষ্টিয়া সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রেজাউল হক জমির মালিকানা দাবি করেন এবং ২০২১ সালের ১২ মে ৯৯ শতক জমির ওপর দিয়ে রাস্তা নির্মাণ না করার জন্য সড়ক ও জনপথ বিভাগ কুষ্টিয়াকে চিঠি দেন। পরে তিনি ২০২২ সালে কুষ্টিয়া সদর সহকারী জজ আদালতে নিষেধাজ্ঞা চেয়ে আবেদন করেন। আদালত নিষেধাজ্ঞা না দেওয়ায় একই বছরে তিনি হাইকোর্টে আবেদন করেন।
২০২২ সালে হাইকোর্ট আওয়ামী লীগ নেতা ও তার পরিবারের দাবিকৃত ৩৫০ মিটার জায়গার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেন। এরপর দফায় দফায় নিষেধাজ্ঞা বহাল রাখে হাইকোর্ট। মজমপুর গেট থেকে ত্রিমোহনী পর্যন্ত ৫ কিলোমিটার দুই লেন সড়কটি চার লেনে উন্নীতকরণ প্রকল্পের অপর ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান স্পেক্ট্রা ইঞ্জিনিয়ার্স লিমিটেড এরইমধ্যে প্রকল্পের কাজ সম্পন্ন করেছেন।
পথচারী, যানবাহন চালক ও স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, আওয়ামী লীগের নেতার মামলার কারণে বছরের পর বছর ধরে বটতৈল থেকে মজমপুরে যেতে বিআরবি ফ্যাক্টরির সামনে প্রায় এক কিলোমিটার রাস্তা পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে। আর বন্ধ হয়ে রয়েছে মেগা প্রকল্পের কাজ। প্রায় তিন বছর ধরে আমরা চরম ভোগান্তি পৌহাতে হচ্ছে জনসাধারণকে। পরিত্যক্ত রাস্তায় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের গাড়ি পার্কিং করে রাখা হয়। বাধ্য হয়ে রাস্তার একপাশ দিয়েই পথচারী ও যানবাহন চলাচল করতে হচ্ছে। এছাড়াও মাঝেমধ্যেই ঘটে দুর্ঘটনা। এখন পর্যন্ত সড়ক দুর্ঘটনায় কয়েকজন নিহত হয়েছেন। আহত হন অনেকেই। দ্রুত এ সমস্যা সমাধানের দাবি জানিয়েছেন তারা। এলাকাবাসী জানায়, ছাত্র-জনতার গণ আন্দোলনের মুখে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগ ও দেশত্যাগের পরই এলাকা ছেড়ে আত্মগোপনে রয়েছেন কুষ্টিয়া সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রেজাউল হক। তিনি একাধিক মামলার আসামি। বর্তমানে তার সম্পর্কে কেউ কোনো তথ্য দিতে পারছেন না। বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কুষ্টিয়া সদর-৩ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য মাহবুব উল আলম হানিফ ও তার চাচাতো ভাই সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ও শহর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আতাউর রহমান আতার দক্ষিণহস্ত হিসেবে পরিচিত রেজাউল হক প্রভাব খাটিয়ে বিভিন্ন ধরনের অনিয়ম, দুর্নীতি ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত ছিলেন।
স্থানীয় বাসিন্দা হযরত আলী বলেন, প্রায় বছর তিনেক ধরে রাস্তাটি পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে। একপাশের রাস্তা দিয়েই পথচারীরা ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করেন। এতে প্রায় প্রতিদিনই দুর্ঘটনা ঘটছে, কয়েকজন মারাও গেছেন। আওয়ামী লীগের নেতার মামলা যেন মরণ ফাঁদ। তার একটি মামলার কারণে সড়কে ঝরছে মানুষের প্রাণ। আমাদের এই ভোগান্তি যেন দেখার কেউ নেই। দ্রুত এই সমস্যা সমাধানের দাবি জানাচ্ছি।
কুষ্টিয়া সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মুহাম্মদ মনজুরুল করিম বলেন, হাইকোর্টে মামলা জনিত নিষেধাজ্ঞার কারণে চার লেন প্রকল্পের ৩৫০ মিটার ওই অংশটির কাজ বন্ধ রাখতে হচ্ছে। আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বিষয়টির সমাধান না হওয়া পর্যন্ত এ বিষয়ে আসলে কিছুই করার নেই। এ বিষয়ে কথা বলার জন্য চেষ্টা করা হলেও ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের মালিক জহিরুল ইসলামকে পাওয়া যায়নি।