কক্সবাজারের রামু উপজেলার আলোচিত গর্জনিয়া বাজারের পশুর হাট বন্ধ রেখেছে প্রশাসন। এ ঘটনায় প্রান্তিক খামারি, ব্যবসায়ী ও সাধারণ ক্রেতাদের মাঝে মিশ্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। সচেতন মহলের অভিযোগ, প্রশাসনের এই সিদ্ধান্ত নিঃসন্দেহে দুরভিসন্ধিমূলক।
এটি সরকারের বিপুল পরিমাণ রাজস্ব থেকে বঞ্চিত করে অভ্যন্তরীণ স্বার্থকে প্রাধান্য দেওয়ার শামিল। পশুর হাট বন্ধ হয়ে গেলে এলাকার প্রান্তিক খামারি ও ব্যবসায়ীরা চরম ক্ষতির সম্মুখীন হবেন। পাশাপাশি কৃষিপণ্যের বাজারজাতকরণেও এর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।
সরেজমিন পরিদর্শনে দেখা গেছে, একসময় গরু, মহিষ ও ছাগলে ভরপুর গর্জনিয়া বাজার এখন পশুশূন্য। ক’দিন আগেও যেখানে শত শত গরুর হাঁকডাক, বেচাকেনা আর মানুষের ভিড়ে মুখর ছিল গোটা এলাকা, সেখানে এখন নীরবতা। মাঠ ফাঁকা, বাঁশের ঘের খালি, পশুর কোনো চিহ্ন নেই। আলোচিত এই গর্জনিয়া বাজারটি কচ্ছপিয়া ইউনিয়নের অন্তর্গত, যা রামু তথা কক্সবাজারের অন্যতম শস্যভাণ্ডার হিসেবে পরিচিত। মিয়ানমার সীমান্তসংলগ্ন হওয়ায় এর গুরুত্ব আরও বেড়ে যায়। এ বাজারকে ঘিরে কচ্ছপিয়া, গর্জনিয়া, ঈদগড়, কাউয়ারখোপ ও নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার প্রান্তিক কৃষক ও পশু খামারি-ব্যবসায়ীরা তাদের দৈনন্দিন জীবিকা নির্বাহ করে থাকেন।
এই প্রেক্ষাপটে বাজার বন্ধের সিদ্ধান্তকে পক্ষপাতমূলক বলছেন সংশ্লিষ্টরা। তথ্য অনুযায়ী, ২০২৫ অর্থবছরে গর্জনিয়া বাজারের ইজারা মূল্য এক লাফে ১০ গুণ বেড়ে দাঁড়ায় ২৬ কোটি টাকায়, যা দেশজুড়ে আলোচনার কেন্দ্রে পরিণত হয়। পরবর্তীতে আইনি জটিলতায় ইজারা স্থগিত হলে প্রশাসন খাস কালেকশনের মাধ্যমে রাজস্ব আদায় শুরু করে। তিতারপাড়া গ্রামের মো. বেলাল উদ্দিন ও ফাক্রিকাটা গ্রামের জসিম উদ্দিন জানান, কোরবানির ঈদ সামনে রেখে লাভের আশায় তারা গরু পালন করে আসছেন।
তাদের মতো আরও অনেক খামারি ঋণ নিয়ে পশু পালন করছেন। এসব খামারে বিক্রিযোগ্য গরুর সংখ্যা ২ হাজারের বেশি। বাজার বন্ধ থাকলে তারা গরু বিক্রি করতে পারবেন না, ফলে ঋণ শোধ করাও অসম্ভব হয়ে পড়বে। স্থানীয় ব্যবসায়ী দেলোয়ার হোসেন ও আবদুল্লাহ জানান, জন্মলগ্ন থেকে গর্জনিয়া হাটে পশু ব্যবসা করে আসছেন তারা। এখানেই তাদের জীবিকা নির্ভরশীল। বাজার বন্ধ থাকলে পরিবার-পরিজন নিয়ে অনাহারে দিন কাটাতে হবে। গর্জনিয়া বাজার কমিটির সভাপতি এরশাদ উল্লাহ জানান, সম্প্রতি মিয়ানমার সীমান্ত দিয়ে অবৈধভাবে গরু আসছে এটি সত্য। তবে প্রতি হাটে ৬ শতাধিক দেশীয় গরু বিক্রি হয়, এবং বহু খামারি ব্যবসায়িকভাবে গরু পালন করছেন। বাজার বন্ধ হলে দেশীয় খামারি ও ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন এবং সরকারও রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হবে। সীমান্ত দিয়ে অবৈধ গরু-মহিষ প্রবেশ ঠেকাতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কার্যকর ব্যবস্থা নিচ্ছে না, অথচ সরকারিভাবে ইজারাকৃত বাজার থেকে ক্রয়কৃত বৈধ গরু প্রায়ই আটকানো হচ্ছে। ফলে বহু খামারি ও ব্যবসায়ী নিঃস্ব হয়ে পড়েছেন।
তারা আরও অভিযোগ করেন, উপজেলা প্রশাসন খাস কালেকশনের মাধ্যমে রশিদসহ গরু বিক্রির অনুমতি দিলেও মাঝপথে বিজিবি সেই গরু আটকে দিচ্ছে। ক্রেতারা বৈধ রশিদ দেখালেও তা আমলে নেওয়া হচ্ছে না। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রাশেদুল ইসলাম জানান, সাময়িকভাবে গর্জনিয়া বাজারের পশুর হাটের কার্যক্রম বন্ধ রাখা হয়েছে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে পরবর্তী সিদ্ধান্ত জানানো হবে।