কুমিল্লা বিমানবন্দর থেকে গত ৪৯ বছর ধরে বিমান উঠানামা বন্ধ রয়েছে। কিন্তু প্রতিদিনই এ বন্দরের সিগন্যাল ব্যবহার করছে দেশ-বিদেশের অন্তত ৪০টিরও অধিক বিমান বিভিন্ন গন্তব্যে চলাচল করছে এবং এ বিমানবন্দর থেকে সরকার প্রতি মাসে কোটি টাকারও বেশি রাজস্ব পাচ্ছে। তবে আশার কথা হচ্ছে, বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সিদ্ধান্তে এরই মধ্যে অভ্যন্তরীণ রুটে কুমিল্লাসহ দেশের পরিত্যক্ত সাতটি বিমানবন্দর চালু করার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। কুমিল্লা বিমানবন্দর চালুর সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন হলে সড়ক-মহাসড়ক ও রেলপথে চাপ কমবে এবং অর্থনীতি চাঙা করতে ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসারে আঞ্চলিক হাব হিসেবে গড়ে উঠবে এ বিমানবন্দর। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ১৯৪১-’৪২ সালে নগরীর দক্ষিণ পাশে আশ্রাফপুর, ঢুলিপাড়া, নেউরা, রাজাপাড়া, দিশাবন্দসহ কয়েকটি এলাকার মানুষের ৭৭ একর জমি অধিগ্রহণ করে এ বিমানবন্দর তৈরি হয়। ১৯৭৬ সাল পর্যন্ত এখান থেকে অভ্যন্তরীণ রুটে বিমান ওঠানামা করতো। এরপর থেকে এ বন্দরটি আন্তর্জাতিক রুটের সিগনালিংয়ের কাজ করছে। দেশে যে কয়টি বিমানবন্দর রয়েছে এরমধ্যে কুমিল্লা অন্যতম। প্রতিদিনই এ বন্দরের সিগন্যাল ব্যবহার করছে দেশ-বিদেশের অন্তত ৪০টির অধিক এয়ার বাস। এটির সিগন্যাল সবচেয়ে বেশি ব্যবহার করে ভারতের অভ্যন্তরীণ রুট, ব্যাংকক ও সিঙ্গাপুরের বিমান। আগরতলা বিমানবন্দরে যাওয়া বিমানও এ রুটে চলাচল করে। এরআগে এ বিমানবন্দরে আরও ৮ কোটি টাকা মূল্যের যন্ত্রপাতি সংযোজন করা হয়েছে। সূত্র জানায়, কুমিল্লা বিমানবন্দরে নেভিগেশন ফ্যাসিলিটিস, কন্ট্রোল টাওয়ার, ভিএইচএফ সেট, এয়ার কমিউনিকেশন যন্ত্রপাতি, ফায়ার স্টেশন, ফায়ার সার্ভিসসহ সব সুবিধাই রয়েছে। যাত্রীদের জন্য আলাদা রুমও আছে। সব সুবিধা থাকার পরও উদ্যোগের অভাবে গত ৪৯ বছর ধরে বন্ধ রয়েছে বিমানবন্দরটি। এটি চালু করতে খুব বেশি অর্থেরও প্রয়োজন নেই। বিমানবন্দরটি চালু হলে বৃহত্তর কুমিল্লার মানুষ সহজেই দেশের অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক রুটে চলাচল করতে পারবেন। সুবিধা হবে প্রবাসীদেরও, বাঁচবে সময়। ইপিজেডসহ জেলার ব্যবসা-বাণিজ্যের ব্যাপক প্রসার ঘটবে। এরই মধ্যে বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার কুমিল্লাসহ দেশের পরিত্যক্ত সাতটি বিমানবন্দর চালু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এমন খবরে আনন্দিত কুমিল্লা অঞ্চলের নানা শ্রেণিপেশার মানুষ। কুমিল্লা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সভাপতি ডা. আজম খান নোমান জানান, কুমিল্লা বিভাগ না হলেও বিভাগীয় সব দপ্তর রয়েছে এ জেলায়। দেশের মধ্যে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনকারী জেলা হিসেবেও কুমিল্লার অবস্থান এখন শীর্ষে। জেলার ১৩ শতাংশেরও অধিক মানুষ বিদেশে কর্মরত। বিমানবন্দরটি চালু হলে কুমিল্লার অর্থনৈতিক উন্নয়নের পাশাপাশি সব ক্ষেত্রে যোগ হবে নতুন মাত্রা। কুমিল্লা প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি মো. লুৎফুর রহমান বলেন, ইপিজেড লাগোয়া এ বিমানবন্দরটি চালু হলে দেশি-বিদেশি আরও বিনিয়োগকারী আসবে, বিপুলসংখ্যক মানুষের কর্মসংস্থান হবে। কুমিল্লা বিমানবন্দরের একজন কর্মকর্তা জানান, এ বিমানবন্দরের সকল যন্ত্রপাতি রয়েছে, শুধু প্রয়োজন রানওয়ের সংস্কার। এটি চালু হলে বাংলাদেশের পার্শ্ববর্তী চারটি দেশ চীন, ভারত, নেপাল ও ভুটানের ব্যবসা-বাণিজ্য প্রসারে আঞ্চলিক হাব হিসেবে গড়ে উঠবে এই বিমানবন্দর।