জুলাই ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে নিহত হাফেজ মোহাম্মদ জুবায়ের আহমদের (১৭) লাশ কবর থেকে উত্তোলন করতে গিয়ে বাধার মুখে পড়েছেন ম্যাজিস্ট্রেটসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। শেষ পর্যন্ত পরিবারের বাধা ও আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে লাশ উত্তোলন না করেই ফিরে যান নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট এবং পুলিশ সদস্যরা। গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরের দিকে কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার লাহিনীপাড়া কবরস্থানে লাশ উত্তোলনে গেলে শহিদ পরিবার আপত্তি জানায়। এতে কবর থেকে লাশ উত্তোলন না করেই ফিরে যান নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট, পুলিশসহ সংশ্লিষ্টরা। নিহতের বাবা কামাল উদ্দিন বলেন, ৫ আগস্ট বিকালে আনন্দ মিছিলে অংশগ্রহণ করেছিল আমার ছেলে হাফেজ মোহাম্মদ জুবায়ের আহমদ। এসময় পুলিশের এলোপাতাড়ি গুলিতে গুরুতর আহত হয়। তার পেটে গুলি লাগে।
হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। ময়নাতদন্ত ছাড়াই তার দাফন করা হয়। তিনি আরও বলেন, আমার ছেলে পুলিশের গুলিতে নিহত হয়েছে। এটা সবাই জানেন। ঘটনাটি তদন্ত করলে এবং ওইসব এলাকার সিসিটিভি ফুটেজ ও ভিডিও ফুটেজ পর্যবেক্ষণ করলেই বিষয়টি জানা যাবে। পুলিশের গুলিতে জুবাইয়ের নিহত হয়েছে এটা পরিষ্কার। আমার ছেলের লাশ উত্তোলন করতে চাই না এবং ময়নাতদন্ত করার দরকার নেই বলে মনে করি। এজন্য লাশ উত্তোলন করতে দিইনি। আমার ছেলের হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় যারা জড়িত তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই। হত্যার ঘটনায় মামলা করা হয়েছে।
জানা গেছে, মামলার সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে আদালতের নির্দেশে গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত জুবায়ের আহমদের লাশ উত্তোলনের জন্য কুষ্টিয়া কুমারখালী উপজেলার লাহিনীপাড়া কবরস্থান যায় জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট, মামলার তদন্ত কর্মকর্তা, পুলিশ সদস্যসহ সংশ্লিষ্টরা। কিন্তু লাশ উত্তোলনে শহিদ পরিবার আপত্তি জানায়। এ অবস্থায় লাশ উত্তোলন না করেই ফিরে যান জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট। আরও জানা গেছে, ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে ৫ আগস্ট ৫টা ৪৫ মিনিটের দিকে রাজধানীর খিলগাঁও চৌরাস্তায় ছাত্রজনতার বিজয় মিছিলে অংশগ্রহণ করেছিলেন জুবায়ের। এসময় তাদের উপর এলোপাতাড়ি গুলি করে পুলিশ। এতে গুলিবিদ্ধ হয়ে গুরুতর আহত হন জুবায়ের।
তাকে উদ্ধার করে সরকারি মুগদা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। চিকিৎসাধীন অবস্থায় রাত সাড়ে ৭টার দিকে তার মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় ২০২৪ সালের ৯ সেপ্টেম্বর জুবায়ের আহমদের বাবা কামাল উদ্দিন বাদী হয়ে খিলগাঁও থানায় মামলা দায়ের করেন। মামলায় ২৫ জনের নাম উল্লেখ করে মামলা করা হয়। তিনি মাদ্রাসা ছাত্র ছিলেন।
নিহত হাফেজ মোহাম্মদ জুবায়ের আহমদ কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার লাহিনীপাড়া এলাকার কামাল উদ্দিনের ছেলে। তিনি হাফেজ ও মাদ্রাসাছাত্র ছিলেন। তার পেট ও শরীরের বিভিন্ন স্থানে গুলি করে হত্যা করা হয়।
এ বিষয়ে কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আদিত্য পাল বলেন, মামলার সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে আদালতের নির্দেশে গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত জুবায়ের আহমেদের লাশ উত্তোলনের জন্য কবরস্থানে এসেছিলাম। নিহতদের পরিবারের পক্ষ থেকে বাধা দেওয়ায় উত্তোলন করা হয়নি। বিষয়টি আদালতকে জানানো হবে।