ঢাকা রোববার, ১৫ জুন ২০২৫, ১ আষাঢ় ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

বরগুনায় দেড় হাজার ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত

বরগুনায় দেড় হাজার ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত

সারা বাংলাদেশের চার ভাগের এক ভাগ ডেঙ্গু রোগী বরগুনায়। এরই মধ্যে ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয়েছে ১০ জনের। তার মধ্যে জেনারেল হাসপাতালে মৃত্যু রেকর্ড করা হয়েছে ৩ জনের এবং বাকিরা অন্যান্য হাসপাতালে। এ পর্যন্ত ১৫০০ ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয়েছে শুধুমাত্র বরগুনা জেলায়। বর্তমানে ১৫৮ জন রোগী ভর্তি রয়েছে বরগুনা জেনারেল হাসপাতালে। এরপরেও বরগুনা জেলাকে ডেঙ্গু হটস্পট হিসেবে ঘোষণা না করায় এবং জরুরি ব্যবস্থা না নেয়ায় রাস্তায় নেমেছে বরগুনার সাধারণ জনগণ। ১২ লাখ মানুষের জন্য একমাত্র চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান বরগুনা জেনারেল হাসপাতালে ডাক্তার সংখ্যা বর্তমানে মাত্র ১০ জন তার মধ্যে ছুটিতে আছেন পাঁচজন। এসব নানা কারণে স্বাস্থ্য উপদেষ্টার পদত্যাগ দাবি করে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ করেছে বরগুনা সদর উপজেলা বিএনপিসহ স্থানীয় একাধিক সামাজিক ও রাজনৈতিক সংগঠন।

গতকাল মঙ্গলবার সকাল ৯টায় প্রেসক্লাব চত্বরে সর্বস্তরের সাধারণ জনগণের ব্যানারে প্রতিবাদ সমাবেশ করেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নারী কর্মীরা। পরে সকাল ১১ টায় একই স্থানে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ করেছে বরগুনা সদর উপজেলা বিএনপি।

বরগুনা সদর উপজেলা বিএনপির সভাপতি তালিমুল ইসলাম পলাশের সভাপতিত্বে সমাবেশে বক্তব্য রাখেন, কেন্দ্রীয় বিএনপির সহ-বিষয়ক সম্পাদক ফিরোজ উজ জামান মামুন, জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি নজরুল ইসলাম মোল্লা এবং সাবেক সহ-সভাপতি এ জেড এম সালেহ ফারুক। বরগুনার বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম নেত্রী নাসরিন আক্তার শিমু বলেন, বরগুনার জেনারেল হাসপাতালের অব্যবস্থাপনা এবং প্রশাসনের উদাসীনতার কারণে বরগুনায় তাদের সহকর্মী স্থানীয় উদ্যোক্তা মোনালিসা জেরিন এবং কিশোরী উপমাসহ ১০ জনেরও বেশি মানুষের অকাল মৃত্যু হয়েছে। ভয়াবহ পরিস্থিতি ধারণ করেছে ডেঙ্গু। যে কোন সময় এ পরিস্থিতি আশঙ্কাজনকহারে বৃদ্ধি পেতে পারে। শত শত মানুষের প্রাণহানি হতে পারে। যার সামাল দেওয়া পুরো রাষ্ট্রের পক্ষে সম্ভব হবে না। বরগুনা জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি নজরুল ইসলাম মোল্লার কন্যা উপমা এবং সাবেক সংসদ সদস্য জাফরুল হাসান ফরহাদণ্ডএর কন্যা মোনালিসা জেরিনসহ ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে বেশ কয়েকজনের অকাল মৃত্যুর পরে রাস্তায় নেমেছে সাধারণ জনগণ। বরগুনা প্রেসক্লাবের মধ্যস্থতায় স্থানীয় রাজনৈতিক ও সামাজিক অঙ্গনের নেতৃবৃন্দের উদ্যোগে জরুরি ডেঙ্গু পরিস্থিতি মোকাবেলায় দ্রুততম সময়ের মধ্যে বরগুনার জেনারেল হাসপাতালে পর্যাপ্ত ডাক্তার এবং নার্স নিয়োগের দাবিতে বিভিন্ন সময়ে একাধিক সভা অনুষ্ঠিত হয়।

স্বাস্থ্য সুরক্ষা ফোরাম নামে এসব সভা সমাবেশের আয়োজন করে বরগুনা প্রেসক্লাব ও স্থানীয় সামাজিক ও রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ। এসব কর্মসূচির ধারাবাহিকতায় গত কয়েকদিনে জেলা প্রশাসন, পৌর পরিষদ এবং হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে করণীয় বিষয়ে আলোচনা করে বরগুনার স্বাস্থ্য সুরক্ষা ফোরামের নেতৃবৃন্দ।

বরগুনা প্রেসক্লাবের সভাপতি অ্যাডভোকেট সোহেল হাফিজ বলেন, সারা বাংলাদেশে যেখানে সাড়ে ৪ হাজার রোগী সেখানে শুধুমাত্র বরগুনা জেলায় দেড় হাজার ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে বরগুনার সিভিল সার্জনসহ দায়িত্বপ্রাপ্ত চিকিৎসকগণ কিছুতেই ছুটিতে যেতে পারেন না। মাত্র ১০ জন ডাক্তার নিয়ে এমন জরুরি পরিস্থিতি সামলানো হাস্যকর। তাই জরুরি পরিস্থিতি মোকাবিলায় এর মধ্যেই বরগুনা প্রেসক্লাবের মধ্যস্থতায় স্বাস্থ্য সুরক্ষা ফোরাম গঠন করা হয়েছে। করণীয় নির্ধারণে জেলা প্রশাসন স্বাস্থ্য বিভাগ এবং পৌর প্রশাসনের সঙ্গে একাধিক আলোচনা সভা করা হয়েছে। এতেও পরিস্থিতির কোনো উন্নতি হয়নি। নজিরবিহীন ডাক্তার ও নার্স সংকটের কারণে পরিস্থিতি সামাল দেওয়া যাচ্ছে না।

বরগুনা জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি নজরুল ইসলাম মোল্লা বলেন, ডেঙ্গু মশার ভয়াবহ উপদ্রপ এবং বরগুনার চিকিৎসা সেবার অচল অবস্থার কারণে ভয়াবহ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে বরগুনায়। অথচ রাষ্ট্রের রোগীীত গরম নেই। এভাবে একটি জেলার স্বাস্থ্য ব্যবস্থা চলতে পারে না।

কেন্দ্রীয় বিএনপির সহ-শ্রমবিষয়ক সম্পাদক ফিরোজ উজ জামান মামুন বলেন বরগুনায় ডেঙ্গু পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। তিনি বলেন, এমন পরিস্থিতিতে বরগুনা পৌরসভা, স্বাস্থ্য বিভাগ এবং হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সকলেরই দায়িত্বহীনতা রয়েছে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত