ঢাকা বৃহস্পতিবার, ১০ জুলাই ২০২৫, ২৬ আষাঢ় ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

চাঁপাইনবাবগঞ্জে মণেই বিক্রি হচ্ছে আম

বাস্তবায়ন হচ্ছে না প্রশাসনের সিদ্ধান্ত

বাস্তবায়ন হচ্ছে না প্রশাসনের সিদ্ধান্ত

বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় আমের বাজারের নাম কানসাট। এখানে দীর্ঘদিন ধরে ৪০ কেজির পরিবর্তে অতিরিক্ত ওজনে আমের মণ নির্ধারিত হয়ে আসছে। ২০১৫ সাল পর্যন্ত প্রতিমণ ছিল ৪৫ কেজিতে। ২০১৬ সালে ডিজিটাল মিটার চালুর পর থেকে তা বেড়ে হয় ৪৬ কেজিতে। এরপর বিভিন্ন সময়ে ৪৮-৫২ কেজিতেও মণ ধরে বিক্রি হচ্ছে আম। তবে জেলার গোমস্তাপুরের রহনপুর ও ভোলাহাটের বাজারে এই ‘কেজির পরিমাণ আরও বেশি। এসব জায়গায় ৫৩-৫৪ কেজিতে মণ ধরেই বিক্রি হয় সুস্বাদু ফলটি। ফলে এ জেলার চাষিরা ঢলনের ফাঁদে পড়ে ঠকছেন নিয়মিত। এরপরেই বিভিন্ন দাবিদাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে চাঁপাইনবাবগঞ্জসহ পাশের দুটি জেলার চাষিদের নিয়ে কয়েক দফায় বৈঠকে বসে রাজশাহী বিভাগীয় প্রশাসন। এতে অংশ নেন বিভাগটির সবচেয়ে বেশি আম উৎপাদনকারী জেলাগুলোর চাষি ও আড়তদাররা। প্রথম দফায় কেজি দরে আম কেনাবেচার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এ সিদ্ধান্তের পরেই আড়তদাররা কেজিপ্রতি ৩ টাকা কমিশন চাইলে নতুন করে জটিলতা দেখা দেয়। এ জটিলতা নিরসনে ১১ জুন চাষি, ব্যবসায়ী ও আড়তদারদের সমন্বয়ে বৈঠকে সর্বসম্মতভাবে ঢলন বাদ দিয়ে কেজিপ্রতি দেড় টাকা বা প্রতি মণে ৬০ টাকা কমিশনে আম বেচাকেনার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। তবে মাঠ পর্যায়ের আম চাষিরা কমিশনে আম বিক্রিতে নারাজ। এজন্য প্রশাসনের সিদ্ধান্ত মাঠ পর্যায়ে বাস্তবায়ন হচ্ছে না। এদিকে, জেলার সচেতন নাগরিকরা মনে করেন, কেজির হিসাবে কমিশনে আম কেনাবেচার সিদ্ধান্ত যুক্তিযুক্ত হতে পারে না। বাজারগুলোয় ঢলনের ওজন কমিয়ে আনতে পারলেই চাষিরা আম বেচে লাভবান হতেন। কেজি-কমিশন পদ্ধতিতে আম কেনাবেচা প্রসঙ্গে কানসাট আম বাজারের আড়তদার আমিরুল ইসলাম জাকির বলেন, প্রশাসনের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আমরা তো কেজি দরেই কমিশনের ভিত্তিতে আম কিনতে রাজি। কিন্তু চাষিরা নিজ থেকেই ৫১-৫২ কেজিতে মণ হিসাব করে আম দিচ্ছেন। এখানে আমাদের কিছু করার নেই। সবমিলিয়ে আড়তদাররা জানালেন তারা প্রশাসনের সিদ্ধান্ত মোতাবেক আম কিনতে প্রস্তুত। কিন্তু চাষিরা সেই সিদ্ধান্ত মানছেন না।

আমচাষিদের ভাষ্য- কেজির হিসাবে আড়তদাররা আম কিনতে চাইছেন ঠিকই। কিন্তু তারা নিজেদের ইচ্ছেমতো দাম নির্ধারণের পাশাপাশি কারচুপি করছেন। দামাদামি করেও খুব একটা লাভ হচ্ছে না। যার কারণেই তারা মণ হিসেবেই আম বিক্রি করছেন। সদর উপজেলার নশিপুরের আমচাষি আব্দুর রাকিব জানান, এক মণ খিরসাপাত আমের দাম ২ হাজার টাকা। মণে বিক্রি করতে গেলেও এরকমই দাম পাওয়া যাচ্ছে। তবে কেজি দরে বিক্রি করতে গেলে আড়তদাররা ২ হাজার টাকাকে ৫৪ দিয়ে ভাগ করে প্রতি কেজি আমের দাম ধরছেন মাত্র ৩৭ টাকা। ৪০ কেজির আমের মূল্য দাঁড়ায় ১ হাজার ৪৮০ টাকা। এখান থেকে ৬০ টাকা কমিশন কেটে চাষি পান ১ হাজার ৪২০ টাকা। ঘুরেফিরে আমাদেরই ক্ষতি।

শিবগঞ্জের শাহবাজপুরের আমচাষি মোজাম্মেল হক বলেন, যেই হিসাবেই আম বেচাকেনা করা হোক না কেন; সবদিক থেকেই আমরা ঠকছি। বর্তমান সময়ে আমের পরিচর্যা করতে যে পরিমাণ খরচ হচ্ছে তা কখনই উঠে আসে না। বাধ্য হয়েই আম বিক্রি করতে হয়। এছাড়া আমাদের কোন উপায় নেই। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক আম গবেষক জানান, আমের ওজন নিয়ে যখন কথা উঠেছে তাই বাজারগুলোয় ঢলনের ওজন কমিয়ে আনতে পারলেই চাষিরা আম বেচে লাভবান হতেন। ৫২ থেকে ৪৫ কেজিতে কিভাবে কমানো যায় সেটি আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেয়া যেতে পারতো। আলাদা করে কেজি হিসাবে কমিশনের ভিত্তিতে আম কেনাবেচা ন্যায়সঙ্গত হতে পারে না। প্রশাসনের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন বিষয়ে জানতে চাইলে শিবগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আজাহার আলী বলেন, বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ে একটি বৈঠকে ৪০ কেজিতে মণ ও কেজিপ্রতি দেড় টাকা কমিশনে আম কেনাবেচার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এই সিদ্ধান্তে বাজারগুলোয় বিক্রি হবে আম। এর বাইরে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত