প্রচণ্ড এই তাপদাহে অনেকের হাতে পৌঁছে গেছে কচি তালের শাঁস। মিষ্টি স্বাদের মোহনীয় গন্ধে ভরা তালের শাঁস গ্রীষ্মের দুপুরে, প্রচণ্ড গরমে শরীর যখন ক্লান্ত, তখন খুব দ্রুত প্রশান্তি এনে দিতে পারে। গরমের এই দিনে সুমিষ্ট রসালো স্বাদের তালের শাঁস কে না চায়। তাল একটি অত্যন্ত জনপ্রিয় ফল। তালের শাঁসকে নারিকেলের মতই পুষ্টিকর বলে বিবেচনা করা হয়। তাল শাঁসের সুমিষ্ট স্বাদ আমাদের অনেকেরই প্রিয়। সাধারণত গ্রীষ্মকালে দেশের বাজার গুলোতে কচি তাল দেখতে পাওয়া যায়। আর এলাকা ভেদে একটি তালের দাম ২০ থেকে ২৫ টাকা। কুষ্টিয়া শহরের মজমপুর, হাসপাতাল মোড়, পাবলিক লাইব্রেরির সামনে, কোর্ট ষ্টেশনের পিছনের মোড়, ছয় রাস্তা মোড়, জেলখানা মোড়, পেয়ারাতলা, মঙ্গলবাড়ীয়া বাজার, থানা ট্রাফিক মোড়, কাটাইখানা মোড়, সিঙ্গার মোড়, মজমপুর গেট, চৌড়হাসমোড়সহ বিভিন্ন এলাকায় এসব তালশাঁস বিক্রি করতে দেখা গেছে। শহরের কাটাইখানা মোড়ের তালশাঁস বিক্রেতা মাসুদ। তিনি কুমারখালী উপজেলার বানিয়াকান্দি এলাকার বাসিন্দা। বছরের অন্যান্য সময় ইটভাটায় কাজ করলেও এখন তিনি আর একজন সহকারী মিলে তালের শাঁস বিক্রি করেছেন। এতে পাঁচণ্ডসাতশ’ টাকা লাভ থাকে, যা দিয়ে মাসুদ ও তার সহযোগীর সংসার মোটামুটি ভালোভাবেই চলে যায়।
কুমারখালী উপজেলার মির্জাপুর গ্রামের মতিয়ার রহমান জানান, আমরা বিভিন্ন এলাকার কোনো তালগাছ এক হাজার আবার কোনটা দেড় হাজার টাকায় মালিকের কাছ থেকে ক্রয় করে থাকি। চুক্তি অনুযায়ী বাঁশের তৈরি (বিশেষ কায়দায়) মই দিয়ে গাছ থেকে নামিয়ে এনে তা আবার শহরে এসে বিক্রি করি। দিনশেষে ৫০০-৮০০ টাকা লাভ হয় আমাদের। বছরের এসময়টা এলেই কেবল তালশাঁসের বিক্রিটা বাড়ে। মিরপুর উপজেলার মশান বাজারের তালশাঁস বিক্রেতা রমজান আলী জানান, একটি তাল থেকে দুটি বা তিনটি শাঁস হয়। প্রতি পিস এখন ২০টাকায় বিক্রি করছি। অথচ গত বছরে ১৫ টাকায় বিক্রি করেছি। এই দাম বাড়ার কারণ হিসেবে তিনি বলেন, গ্রামে গ্রামে ঘুরে এসব কচি তাল কিনে আনতে হয় আর তালের সংকট থাকায় এর দাম বেড়েছে। প্রতিদিন দুই হাজার টাকার তাল শাঁস বিক্রি করেন তিনি। এতে সব খরচ বাদ দিয়ে ৫০০ টাকা আয় হয় বলে জানান তিনি। তাল শাঁস কিনতে আসা ক্রেতা ফিরোজ ও রিপন বলেন, গত বছরের থেকে এবার তাল শাঁসের দাম অনেকটাই বেশি। গত বছর যে তালের শাঁস ৩-৪ টাকায় কিনেছি এবার সেই তাল শাঁস প্রথমে ১০ টাকা এবং এখন ৭-৮ টাকায় কিনতে হচ্ছে। তারপরও মৌসুমি ও সুস্বাদু হওয়ায় এর প্রতি আগ্রহের কমতি নেই বলেও জানান তিনি। শহরের এনএস রোডের কিং টেইলার্সের মালিক তালশাঁস কিনতে আসা রমজান আলী রাজা বলেন, এ বছর প্রচণ্ড গরম। এই গরমে আখের রসের পাশাপাশি তালশাঁসের জুড়ি নেই। তালশাঁস প্রতিনিয়তই আমরা খাচ্ছি। তবে গতবছরের থেকে এ বছর তালশাঁসের দাম দ্বিগুণ হয়েছে বলেও জানান তিনি।
কুষ্টিয়ার সিভিল সার্জন ডা. শেখ মোহাম্মদ কামাল হোসেন বলেন, তাল শাঁস একে সুস্বাদু, অন্যদিকে কচি তালের শাঁসে জলীয় অংশ বেশি থাকায় তা দেহের পানিশূন্যতা অনেকটাই পূরণ করে। ফলে জ্যৈষ্ঠের এ গরমে কুষ্টিয়ার হাট-বাজারে বেশ কদর বেড়েছে তাল শাঁসের।