ঢাকা শনিবার, ২৬ জুলাই ২০২৫, ১১ শ্রাবণ ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

সুসংবাদ প্রতিদিন

টমেটো চাষে বিঘায় লাভ ৭০ হাজার

টমেটো চাষে বিঘায় লাভ ৭০ হাজার

পাবনায় পবিত্র রমজান মাসকে সামনে রেখে উন্নত জাতের টমেটো চাষে ব্যাপক সফলতায় বদলে গেছে গ্রামীণ অর্থনীতির চিত্র। বিঘা প্রতি জমিতে উৎপাদিত টমেটো বিক্রি করে কৃষকের লাভ হচ্ছে প্রায় ৭০ হাজার টাকা। ফলে অন্য ফসল আবাদ ছেড়ে টমেটো চাষে বেশি আগ্রহী হচ্ছেন চাষিরা। জেলার বেশ কয়েকটি প্রত্যন্ত গ্রাম ঘুরে এ চিত্র দেখা গেছে।

সরেজমিন ঘুরে জানা গেছে, পাবনা জেলার সুজানগর উপজেলার প্রত্যন্ত এলাকা সাগরকান্দি ইউনিয়নের চর খলিলপুরে বাণিজ্যিকভাবে টমেটো চাষ করে সফল হয়েছেন কৃষক আনসার আলী। তার সফলতা দেখে টমেটো চাষে ঝুঁকেছেন আশপাশের গ্রামের কৃষকরাও। ফলে এলাকার প্রায় পুরো জমি এখন টমেটো বাগানে রূপ নিয়েছে। গ্রামটি খ্যাতি পেয়েছে ‘টমেটো গ্রাম’ নামে।

সফল কৃষক আনসার আলী জানান, জৈব বালাইনাশক ও উন্নত জাতের টমেটো চাষ করলে সহজেই লাভের মুখ দেখা সম্ভব। তিনি প্রচলিত মিন্টু সুপার জাতের পাশাপাশি সুলতান সুলেমান ও মিরাক্কেল জাতের টমেটো চাষ করছেন। মিরাক্কেল জাতের টমেটো আকারে বড় ও দেখতে খুবই আকর্ষণীয়। ফলে অন্য টমেটোর চেয়ে দামও বেশি। প্রতিটি টমেটোর ওজন কমপক্ষে ৫০০ গ্রাম। টমেটো চাষে শুধু একা নয়, ভাগ্য বদলেছে গ্রামের অনেক চাষির।

তিনি আরো জানান, ১ বিঘা জমিতে টমেটো চাষ করতে সার, বীজ ও শ্রমিকসহ খরচ হয় ২৫-২৭ হাজার টাকা। এবার বিঘাপ্রতি ফলন হয়েছে ২০০-৩০০ মণ। বর্তমান বাজারে প্রতি মণ টমেটো বিক্রি হচ্ছে ৫০০-৬০০ টাকা দরে। উৎপাদন খরচ বাদে প্রতি বিঘা জমির টমেটো বিক্রি হচ্ছে প্রায় ৮০ হাজার থেকে ১ লাখ ৩০ হাজার টাকা। বিঘাপ্রতি ৬০-৭০ হাজার টাকা লাভের মুখ দেখছেন চাষিরা। এ কারণে অন্য ফসল ছেড়ে টমেটো চাষের দিকে বেশি আগ্রহী হচ্ছেন চাষিরা। তবে গ্রামগুলোয় টমেটো সংরক্ষণের ব্যবস্থা না থাকায় প্রতি বছর মৌসুমের শেষদিকে বিপুল পরিমাণ টমেটো নষ্ট হয়। এ সংকট কাটাতে গ্রামটিতে সবজি সংরক্ষণাগার নির্মাণের দাবি জানিয়েছেন চাষিরা।

খলিলপুর গ্রামের চাষি আবুল হোসেন বলেন, ‘টমেটো চাষে ভালোই দাম পাওয়া যায়। অনেক সময় ব্যবসায়ীরা পুরো জমির টমেটো কিনে নেন। ২ থেকে ৩ মাসের মধ্যে টমেটো নিয়ে জমি ছেড়ে দেন। তবে বেশিরভাগ চাষি নিজেরাই ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করেন। টমেটো ব্যবসায়ীরা মূলত বাইরের। তারা এসে এলাকা ঘুরে টমেটো কিনে ট্রাকে করে নিয়ে যান।’ একই গ্রামের চাষি ময়েন মোল্লা বলেন, ‘এ বছর আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় প্রতি বিঘা জমিতে ২০০ থেকে ৩৫০ মণ পর্যন্ত ফলন হয়েছে। হাট-বাজারে টমেটোর দামও বেশ ভালো। টমেটো চাষ করে অনেক ভালো দিন পার করছি।’

কেবল বাণিজ্যিক সফলতাই নয়, জৈব প্রযুক্তি ব্যবহারে বিষমুক্ত নিরাপদ টমেটো উৎপাদনেও অনন্য নজির সৃষ্টি করেছেন এসব গ্রামের চাষিরা। আকর্ষণীয় আকার, স্বাদের সুখ্যাতির জন্য এ গ্রামের টমেটো কিনতে দূর থেকে পাইকাররা আসেন। সরবরাহ হয় ঢাকাসহ সারাদেশে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা ভালো না থাকায় পন্য পরিবহনে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছেত তাদের।

পাবনা বড় বাজারের ব্যবসায়ী রমজান শেখ বলেন, ‘চরাঞ্চলের জমি থেকে কৃষিপণ্য ভ্যান গাড়িতে করে আনতে হয়। টমেটোর ভ্যান নিয়ে রাস্তায় চলতে অনেক কষ্ট হয়। কখনো গাড়ি উল্টে পড়ে যায়। ফলে সঠিক সময়ে কৃষিপণ্য বিক্রি করতে না পারায় অনেক লোকসান হয়। যদি প্রত্যন্ত ওই চর অঞ্চলে একটি পাকা রাস্তা নির্মাণ করা হয়, তবে আমাদের জন্য অনেক ভালো হয়।’

পাবনা জেলা কৃষি বিভাগ জানান, সুজানগর উপজেলার সাগরকান্দি ইউনিয়নের খলিলপুর, চর খলিলপুর এবং কালিকাপুর, ও নাজিরগঞ্জ পূর্ব গ্রামের বিস্তীর্ণ চরাঞ্চলে চলতি বছর ৩৫০ হেক্টরের মধ্যে প্রায় ৩০০ হেক্টর জমিতে টমেটো চাষ হয়েছে। যা জেলায় মোট উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রার প্রায় ২৫ শতাংশ। চাষিরা ভালো দামে চলতি মৌসুমে টমেটো চাষে ব্যাপক লাভের মুখ দেখেছেন।

এব্যাপারে পাবনা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ড. মো. জামাল উদ্দিন বলেন, ‘চরাঞ্চলের জমিতে টমেটো চাষ করে কৃষকের ভাগ্য বদলে গেছে। সরকারের পক্ষ থেকে প্রণোদনাও দেয়া হয়েছে। তারা আরো বেশি টমেটো আবাদ করতে পারেন। সে জন্য প্রশিক্ষণসহ ভালো মানের বীজ, সার-কীটনাশক, কৃষিপ্রণোদনা দিয়ে সহযোগিতা করা হচ্ছে। সামনে আরো সহযোগিতা করা হবে।’

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত