ঢাকা ১৯ জানুয়ারি ২০২৫, ৫ মাঘ ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

তাড়াইল হাসপাতালে জনবল চিকিৎসক সংকট

তাড়াইল হাসপাতালে জনবল চিকিৎসক সংকট

জনশুমারি ও গৃহগণনা ২০২২ সালের তথ্যানুযায়ী কিশোরগঞ্জের তাড়াইল উপজেলায় মোট জনসংখ্যা ১ লাখ ৭০ হাজার ৮৪ জন। পুরুষ ৮২ হাজার ৫৩৯ জন, মহিলা ৮৭ হাজার ৫৪৫ জন। উপজেলার সাতটি ইউনিয়নের জন্য ১৯৬৮ সালে তাড়াইল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি প্রতিষ্ঠিত হয়। গতকাল শনিবার তাড়াইল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গিয়ে দেখা যায়, রোগী আছে, চিকিৎসক নেই, অকার্যকর যন্ত্রপাতি, ডাক্তার সংকট ও নানাবিধ সমস্যায় জর্জরিত উক্ত স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি। এ অবস্থায় চিকিৎসা নিতে আসা লোকজন নানা ধরনের হয়রানির শিকার হচ্ছেন। দূরত্ব কম হওয়ায় পাশের উপজেলা করিমগঞ্জ, নান্দাইল, কেন্দুয়া, ইটনা ও মদন থেকেও অনেক রোগী আসেন তাড়াইল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। অথচ চিকিৎসক সংকটে ধুঁকে ধুঁকে চলছে হাসপাতালের সেবা কার্যক্রম। তাড়াইল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা যায়, অত্র স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ১৪৭টি পদ সংখ্যা রয়েছে। প্রথম শ্রেণির অনুমোদিত পদ সংখ্যা ২১টি, পূরণকৃত পদ সংখ্যা ৮টি। এর মধ্যে দুইজন অনুমোদনহীনভাবে অনুপস্থিত বিভাগীয় মামলা চলমান। একজন কিশোরগঞ্জ সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সংযুক্তিতে কর্মরত রয়েছেন, আরেকজন সপ্তাহে দুইদিন কিশোরগঞ্জ সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে কাজ করেন। ২য় শ্রেণির অনুমোদিত পদ সংখ্যা ৩৬ জন, পূরণকৃত পদ সংখ্যা ৩১টি। এর মধ্যে শিক্ষা ছুটিতে সংযুক্তিতে আছেন ৫ জন। তৃতীয় শ্রেণির অনুমোদিত পদসংখ্যা ৬৬ জন, পূরণকৃত পদ সংখ্যা-৩৮ জন, এর মধ্যে সংযুক্তিতে অন্য প্রতিষ্ঠানে রয়েছেন ৩ জন। চতুর্থ শ্রেণির অনুমোদিত পদসংখ্যা ২৫ জন, পুরণকৃত পদ সংখ্যা ১১ জন, এর মধ্যে সংযুক্তিতে অন্য প্রতিষ্ঠানে রয়েছেন দুইজন। বর্তমানে হাসপাতালে সিজারিয়ান কার্যক্রম চালু রয়েছে, অপারেশন থিয়েটার, ইসিজি, আল্ট্রাসোনোগ্রাম ও এনালাইজার মেশিন আছে। এক্সরে আছে কিন্তু এক্সরে টেকনিয়াশান নাই। যার জন্য এক্সরে করা যায়না এবং অবকাঠামোগতভাবে এক্সরে করার উপযুক্ত রুম নাই। বাড়তি টাকা খরচ করে রোগীদের প্রাইভেট ক্লিনিকে এক্সরে করতে হচ্ছে। ছোটখাটো অস্ত্রোপচারের জন্য রোগীদের যেতে হচ্ছে জেলার হাসপাতালগুলোতে কিংবা প্রাইভেট ক্লিনিকে। আরো জানা যায়, ২০২৪ সালের জানুয়ারির ১ তারিখ থেকে নভেম্বরের ৩০ তারিখ পর্যন্ত ৬২ জন প্রসূতি রোগীকে সিজার করা হয়েছে। ইনডোর বিভাগে ৭ হাজার ৯৮১ জন, জরুরি বিভাগে ২১ হাজার ৮২২ জন এবং আউটডোরে ১ লাখ ৮ হাজার ৯৭১ জন রোগী সেবা নিয়েছে। ৮৩ জন রোগীকে কুকুরের কামড়ের চিকিৎসা দেয়া হয়েছে। ২ জন রোগীকে কুষ্ঠ ও ২৫৯ জন যক্ষা রোগীকে চিকিৎসাসেবা দেয়া হয়েছে। ২০২৩ সালে ৮ হাজার ২০৫ জন এবং ২০২৪ সালে ১ হাজার ৭৫২ জন রোগীকে এইচপিভি টিকা দেয়া হয়েছে। হাসপাতালের বহির্বিভাগ ও জরুরি বিভাগে প্রতিদিন প্রায় সহস্রাধিক ব্যক্তি চিকিৎসা নিতে আসেন। চিকিৎসক সংকট থাকায় যেকোনো রোগী এলেই জরুরি বিভাগ থেকে তাদের স্থানান্তর করা হয় জেলা হাসপাতাল গুলোতে। গুরুতর রোগী স্থানান্তর নিয়ে বিপাকে পড়ে যায় দরিদ্র পরিবারগুলো। স্থানীয় হাসপাতালে চিকিৎসা না হওয়ায় মৃত্যুঝুঁকিতে পড়েন অনেক রোগী। চিকিৎসা নিতে আসা বেশ কয়েকজন রোগী অভিযোগ করে বলেন, আমরা শতকষ্ট করে দূর-দূরান্ত থেকে আসলেও ডাক্তারের দেখা পাইনা। সিরিয়ালে দুই-তিন ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে টিকিট কেটে অনেক সময় ডাক্তার না দেখিয়েই বাড়ি ফিরতে হয়। আবার কখনো দুই একটা প্যারাসিটামল ও গ্যাস্টিকের বড়ি দিয়ে সান্তনা দেয় তারা। তাড়াইল উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার-পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আলমাস হোসেন বলেন, জনবল সংকট ও প্রয়োজনের তুলনায় খুব কম চিকিৎসক রয়েছে অত্র ৫০ শয্যা হাসপাতালটিতে। কর্তৃপক্ষের কাছে চিকিৎসক সংকট নিরসনের আবেদন করা হয়েছে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত