দেশের ভোজ্যতেলের বড় একটি অংশ আমদানি করা হয়। তাই আমদানিনির্ভরতা কমিয়ে আনতে সরিষার ব্যাপক চাষাবাদে উদ্বুদ্ধ করছে ফেনী জেলার দাগনভূঞা উপজেলা কৃষি বিভাগ।
স্বল্প খরচ আর কম সময়ে উৎপাদন হওয়ায় সরিষা চাষে ঝুঁকছে দাগনভূঞার কৃষকরা। উন্নত জাতের সরিষা চাষ করে লাভবান হচ্ছে তারা। প্রচলিত দেশি সরিষার চেয়ে ফলন বেশি হওয়ায় উন্নত জাতের সরিষা চাষে কৃষকরা আগ্রহী হচ্ছে। উন্নত জাতের সরিষা বারি-১৪ ও বারি-১৫ গাছের উচ্চতা হয় দেড় থেকে দুই ফুটের মতো। আগে সরিষা গাছ বড় হলেও ফলন কম হতো। নতুন জাতের ছোট আকারের সরিষা গাছের গোড়া থেকে মাথা পর্যন্ত ফল আসছে। বীজ বপনের ৭০ দিনের মধ্যেই জমি থেকে সরিষা সংগ্রহ করা যায়। সরিষার বড় শত্রু জাব পোকা।
দাগনভূঞায় এখন পর্যন্ত জাব পোকা আক্রমণ দেখা যাচ্ছে না বলে জানান কৃষকরা। উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে উপজেলায় ২৩০ হেক্টর জমিতে সরিষার আবাদ হয়েছে। গত বছরের চেয়ে প্রায় তিনগুণ আবাদ বেড়েছে। যদিও উপজেলায় লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২২৫ হেক্টর। সরিষা প্রণোদনা দেয়া হয়েছে ৬০০ বিঘার জন্য ৬০০ জন কৃষককে। তাদেরকে সরিষা বীজ সহায়তা প্রদান করা হয়। কৃষি অফিস আরো জানায়, সরিষার পাতা মাটিতে ঝরে পড়ে জৈব সারের কাজ করায় জমির উর্বরতা শক্তি বৃদ্ধি পায়। সরিষা আবাদের পর ওই জমিতে ফসল আবাদে সারের পরিমাণ কম লাগে। তাই এ জাতের সরিষা চাষের জন্য আমরা কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করে থাকি। এবার প্রতি বিঘা জমি থেকে ৬-৭ মণ সরিষা উৎপাদন আসা করছেন তারা। লাভজনক এবং সরিষা চাষের অনুকূল পরিবেশের কারণে এবার চলতি রবি মৌসুমে লক্ষমাত্রার চেয়ে কিছুটা বেশি জমিতে সরিষা চাষ হয়েছে। উপজেলার রামনগর ইউনিয়নের সেকান্দরপুর এলাকায় কৃষক আবদুল মান্নানের সরিষা প্লটে গিয়ে দেখা গেছে, কৃষক আবদুল মান্নান সরিষার পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করছেন। কৃষক আবদুল মান্নান বলেন, উপজেলা কৃষি অফিসের পরামর্শে ২২০ শতক জমিতে উন্নত জাতের সরিষার আবাদ করেছি। সরিষার জমিতে ধানের আবাদ ভালো হয় এবং বোরো চাষে খরচ কম হয়। একই এলাকার কৃষক আবদুল খালেক বলেন, তেলের দাম বাড়তি থাকায় এবার উপজেলা কৃষি অফিসের সহায়তায় ১২০ শতক জমিতে সরিষা চাষ করেছি।
আশা করি, আর্থিকভাবে লাভবান হবো। তিনি আরো বলেন, সরিষা বিক্রির টাকা দিয়ে চলতি মৌসুমে ধান আবাদ করব। এছাড়া একই এলাকার কৃষক আবদুস শহীদ ৫৫ শতক ও কৃষক জসিম উদ্দিন ৫০ শতক জমিতে সরিষার আবাদ করেছেন। উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা সফিক উল্যাহ ও সুলতান নিগার রহমান বলেন, সরিষা চাষে কৃষকদের যথাযথ পরামর্শ ও পরিচর্যার বিষয়ে পরামর্শ দেয়া হচ্ছে প্রতিনিয়ত। বারি-১৪ সহ অন্যান্য সরিষা বপনের মাত্র ৭০ দিনের মাথায় ফলন পাওয়া যায়। সরিষা উত্তোলনের পর একই জমিতে ফের বোরো আবাদ করা সম্ভব। সে জন্য এটাকে কৃষকরা ‘লাভের ফসল’ হিসেবে অভিহিত করে থাকেন।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো: কামরুজ্জামান বলেন, আমাদের দেশে ভোজ্যতেলের বড় একটি অংশ আমদানি করা হয়। এই আমদানিনির্ভরতা কমিয়ে আনতে সরিষা চাষে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে। তারই প্রেক্ষিতে কৃষকদের সরিষা বীজ ও সার প্রণোদনা দেয়া হয়েছে। কম খরচে অধিক মুনাফা হওয়ায় সরিষা চাষে কৃষকদের আগ্রহ দিন দিন বাড়ছে।