ঢাকা ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ২৮ মাঘ ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

অপরিকল্পিত পুকুর খননে জীববৈচিত্র্য ও খাদ্য নিরাপত্তা হুমকিতে

অপরিকল্পিত পুকুর খননে জীববৈচিত্র্য ও খাদ্য নিরাপত্তা হুমকিতে

পাবনায় অপরিকল্পিতভাবে পুকুর খননে জীববৈচিত্র ও খাদ্য নিরাপত্তা হুমকীর মুখে পড়েছে। মাছ চাষে লাভ বেশি হওয়ায় কৃষি জমিতে পুকুর খনন করায় ব্যাপক হারে কমছে কৃষিজমি। আইন অমান্য করে রাতের আধারে কৃষি জমিতে খনন করা হচ্ছে পুকুর। কৃষি জমির শ্রেণি পরিবর্তন করে পুকুর খননের সঙ্গে স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তিরা জড়িত বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এদিকে কৃষি বিভাগ জানান, আবাদি জমিতে অপরিকল্পিতভাবে পুকুর খননে জলাবদ্ধতায় প্রতিবছর ফসলহানি হচ্ছে। চাপ বাড়ছে খাদ্যনিরাপত্তা ও পরিবেশের ওপর।

সরেজমিন পাবনা জেলার বিভিন্ন উপজেলা ঘুরে দেখা গেছে, অবাধে কৃষিজমির শ্রেণি পরিবর্তন করে পুকুর খনন করা হচ্ছে। জমির উপরিভাগের মাটি কেটে নেয়ায় দীর্ঘ মেয়াদি জলাবদ্ধতায় কমতে শুরু করেছে ফসল উৎপাদন। এছাড়া মাটিভর্তি ও খালি ট্রাক চলাচলের কারণে গ্রামীণ কাঁচা-পাকা সড়ক নষ্ট হচ্ছে। রাজনৈতিক দলের স্থানীয় নেতাদের যোগসাজশে ইটভাটার মালিক ও মাটি ব্যবসায়ীরা কৃষকদের অর্থের লোভ দেখিয়ে তিন-চার ফসলি জমির মাটি কেটে বাণিজ্যিক পুকুরে পরিণত করছে। স্কেভেটরে (ভেকু মেশিন) মাটি কাটা হচ্ছে। পরে ট্রাকে করে মাটি সরবরাহ করা হচ্ছে ইটভাটাসহ বিভিন্ন জায়গায়।

জেলার ৯টি উপজেলার মধ্যে সুজানগর, চাটমোহর, ভাঙ্গুড়া, বেড়া, ঈশ্বরদী, সাঁথিয়া, আটঘড়িয়া উপজেলায় কৃষিজমি কেটে বানিজ্যিক পুকুর খনন করা হয়েছে সব চেয়ে বেশি। পুকুর খননের কারণে আশপাশের জমি ভাঙনের মুখে পড়েছে। তাছাড়া মাটিবোঝাই ট্রাক চলাচল করায় সড়ক গুলোতে খানাখন্দের সৃষ্টি হচ্ছে। পাবনার মাধপুর-বেড়া আঞ্চলিক মহাসড়কের দুই পাশে কৃষিজমিতে শত শত পুকুর খনন করে মাছ চাষ করা হচ্ছে।

পুকুর খনন বন্ধে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেই বললেই চলে। প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে রাতের আধারে ভেকু মেশিন দিয়ে চলছে পুকুর খননের মহোৎসব। হারিয়ে যাচ্ছে গোচারণ ভূমি। কমছে কৃষিজমি, বাড়ছে কৃষিশ্রমিকের বেকারত্ব। ভেঙে পড়ছে গ্রামীণ নিরাপত্তা বেষ্টনী। গ্রামীণ অর্থনীতিতে পড়ছে বিরুপ প্রভাব। শ্রেণি পরিবর্তন করে আবাদযোগ্য জমিতে পুকুর খননের সুযোগ নেই আইনে। তারপরও এক শ্রেণির অসাধু ব্যক্তি নানান কৌশলে পুকুর খনন করে যাচ্ছে। বিশেষ করে বিল ও নিচু এলাকাগুলোকে অনাবাদি বিংবা এক ফসলি দেখিয়ে পুকুর খনন করছেন তারা। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিশারিজ বিভাগের অধ্যাপক এবিএম মহসিন বলেন, কোন এলাকায় কতগুলো পুকুর প্রযোজন আছে এবং পরিবেশের ওপর কী প্রভাব পড়তে পারে? সেসব বিবেচনা না করেই যথেচ্ছভাবে পুকুর খনন করা হচ্ছে। এ সব অপরিকল্পিত পুকুরে কৃষকের জীবন ও জীবিকা হুমকীতে পড়ছে।

পরিবেশ আইনজীবী তন্ময় সান্যাল বলেন, ভূমি ও পরিবেশ সংরক্ষণ আইনগুলোতে ভূমির ধরণ রুপান্তর করা নিষিদ্ধ। তাছাড়া ২০১৩ সালের বাংলাদেশ পানি আইনের প্রাকৃতিক জলাশয়ের প্রবাহকে বাধা দেয়া কঠোরভাবে নিষেধ করা আছে। কৃষিজমি সুরক্ষা ও ভূমি ব্যবহার আইনের খসড়া, যেখানে পরিস্কারভাবে কৃষিজমি রুপান্তর নিষেধাজ্ঞার কথা উল্লেখ আছে, সেটি এখনো পূর্ণতা পায়নি। পাবনা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের (খামারবাড়ি) উপ-পরিচালক ড. জামাল উদ্দিন বলেন, জেলায় গত কয়েক বছরে পুকুরের কারণে অনেক ধানি জমি কমেছে। তবে সরকারি নির্দেশনা থাকার পরেও পুকুরগুলো কিভাবে গড়ে উঠছে? সেটি বলতে পারবো না। জেলায় গত কয়েক বছরে মোট কী পরিমাণ ফসলি জমি পুকুরের কারণে নষ্ট হয়েছে? এমন প্রশ্নের কোনো উত্তর জানাতে পারেননি তিনি।

উল্লেখ্য, ১৯৮৯ সালের ইট পোড়ানো নিয়ন্ত্রণ আইন (সংশোধিত ২০০১) অনুযায়ী, কৃষিজমির টপ সয়েল বা উপরিভাগের মাটি কেটে শ্রেণি পরিবর্তন করা সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ রয়েছে। এ কাজে জড়িত ব্যক্তিদের দুই লাখ টাকা জরিমানা এবং দুই বছরের কারাদণ্ড দেয়ার বিধান আছে। এ ক্ষেত্রে এ কাজের সাথে জড়িত জমি ও ইটভাটার মালিক উভয়ের জন্যই সমান শাস্তির বিধান রাখা হয়েছে। পাবনার জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মফিজুল ইসলাম বলেন, সরকারি নির্দেশনা উপেক্ষা করে পুকুর খনন করা যাবে না। এ বিষয়ে আমাদের অভিযান চলমান আছে। এরই মধ্যে অনেককে জরিমানাসহ আইনের আওতায় আনা হয়েছে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত