কুমিল্লা নগর ভবনের দ্বিতীয় তলায় মেয়রের কক্ষ। ২০২২ সালে তিন তলা বিশিষ্ট নগর ভবনের সেই দ্বিতীয় তলায় মেয়রের অফিস কক্ষে যেতে প্রায় ৬০ লাখ টাকা ব্যয়ে তৈরি করা লিফট এখন তালাবদ্ধ অবস্থায় পড়ে আছে, লিফটটি এখন আর কোনো কাজেই আসছে না। প্রয়াত সাবেক মেয়র আরফানুল হক রিফাত মেয়র হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর তার অসুস্থতার খোঁড়া যুক্তিতে তাকে খুশি করতে সেই বিলাসী লিফট স্থাপন করা হয়। কিন্তু মেয়রের মৃত্যুর পর সেই লিফট এখন আর কেউ ব্যবহার করছেন না। সাবেক কাউন্সিলরদের ভাষ্য, একজন ব্যক্তির দোতলায় উঠার জন্য এ লিফট একেবারেই অপ্রয়োজনীয়, জনগণের ট্যাক্সের টাকার অপব্যবহার। গতকাল বুধবার সরেজমিনে গিয়ে সেই লিফটটি তালাবদ্ধ অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখা গেছে।
কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশন (কুসিক) সূত্রে জানা গেছে, ২০২২ সালের ১৫ জুন অনুষ্ঠিত কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশনের (কুসিক) ৩য় নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ও দলটির কুমিল্লা মহানগরের সাধারণ সম্পাদক আরফানুল হক রিফাত মেয়র নির্বাচিত হন। কুসিকের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা জানান, মেয়র রিফাত শারীরিকভাবে অসুস্থতার কারণে নগর ভবনের সিঁড়ি দিয়ে দ্বিতীয় তলায় উঠতে কষ্ট পেতেন। তাই নিচতলা থেকে সহজে দোতলায় উঠার জন্য দ্রুত লিফট বসানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়। তখন মেয়র রিফাতকে খুশি করতে ‘বিলাসী’ লিফট স্থাপনে ভূমিকা রাখেন কুসিক কর্তৃপক্ষ। সেই লিফট স্থাপনের জন্য কার্যাদেশ দেওয়া হয় ‘ড্রিমস আন লিমিটেড’ নামক একটি প্রতিষ্ঠানকে। কোম্পানিটিকে লিফট সরবরাহ ও স্থাপনের জন্য দেওয়া হয় ২৭ লাখ ৯ হাজার ৯৯০ টাকা এবং লিফট স্ট্রাকচার নির্মাণে আরও ৩১ লাখ ৭৫ হাজার ৩৫০ টাকাসহ মোট ৫৮ লাখ ৮৫ হাজার ৩৪০ টাকা দেওয়া হয়। দ্বিতীয় তলায় ওঠার জন্য এত টাকা ব্যয় অস্বাভাবিক ও অপ্রয়োজনীয় মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। এদিকে, ২০২৩ সালের ১৩ ডিসেম্বর মেয়র রিফাত সিঙ্গাপুরের মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। তার মৃত্যুর পর লিফটটি কার্যত পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে।
এদিকে, গত বছরের ৯ মার্চ অনুষ্ঠিত কুসিকের মেয়র পদে উপনির্বাচনে নির্বাচিত মেয়র হন সদর আসনের সাবেক এমপি আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহারের জ্যেষ্ঠ কন্যা মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ডা. তাহসিন বাহার সূচনা। ঐ বছরের ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর তিনি অপসারিত হন এবং এরপর থেকে তিনি আত্মগোপনে আছেন। এদিকে লিফট সরবরাহকারী ড্রিমস আন লিমিটেডের মালিক মনু মিয়া নগরীর দেশওয়ালীপট্টির বাসিন্দা। সম্প্রতি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতা তাকে ধরে পুলিশের হাতে তুলে দেয়, বর্তমানে তিনি কারাগারে আছেন। তাই তাদের বক্তব্য জানা যায়নি। নাম প্রকাশ না করার শর্তে নগরীর ছয়টি ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলররা বলেন, আরফানুল হক রিফাত মেয়র নির্বাচনের কিছুদিন পরই গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং বেশিরভাগ সময় বাসায় থেকেই তিনি অফিসের কাজ চালাতেন। কুসিকের নিচ তলায় অফিস করার মতো পর্যাপ্ত কক্ষ রয়েছে। এরপরও ভবনের দুইতলায় উঠার জন্য লিফট স্থাপন একেবারেই অযৌক্তিক ও অপ্রয়োজনীয়। জনগণের ট্যাক্সের টাকা এভাবে ব্যয় করে স্থাপিত সেই লিফট এখন অব্যবহৃত অবস্থায় পড়ে আছে।
কুসিকের নির্বাহী প্রকৌশলী আবু সায়েম ভূঁইয়া সাংবাদিকদের বলেন, প্রয়াত মেয়র আরফানুল হক রিফাত এতোটাই অসুস্থ ছিলেন যে, তিনি একটি সিঁড়িও উঠতে পারতেন না। তাই মেয়রের অফিস করার সুবিধার্থে সেই লিফট স্থাপন করা হয়। এখন আমরা তা ব্যবহার করি না। এমনকি সর্বশেষ মেয়র ডা. তাহসিন বাহার সূচনাও এ লিফট ব্যবহার করেননি। তবে কোনো ভিআইপির আগমনে বা বিশেষ প্রয়োজনে লিফটখানা ব্যবহৃত হয়ে থাকে।