টানা বৃষ্টি, নদী-খালের অপরিকল্পিত খনন ও দখলের কারণে ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে সাতক্ষীরা পৌর এলাকার জলাবদ্ধতা। ঘরবাড়ি, রান্নাঘর, টয়লেট সবই পানিতে ডুবে যাচ্ছে। দূষিত পানি ও স্যানিটেশন সমস্যায় এরইমধ্যেই ছড়িয়ে পড়েছে পানিবাহিত রোগ। অনেকে এলাকা ছেড়ে নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। এদিকে, বৃষ্টির কারণে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন নিম্ন আয়ের মানুষগুলো। বিশেষ করে দৈনন্দিন উপার্জনের উপর নির্ভরশীল দরিদ্র পরিবারগুলো নিদারুণ কষ্টে পড়েছেন। বৃষ্টির কারণে উপার্জন বন্ধ থাকায় স্ত্রী-সন্তান নিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন তারা। গতকাল শনিবার সকালে সাতক্ষীরা জেলা আবহাওয়া অফিসের ইনচার্জ জুলফিকার আলী রিপন জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় সাতক্ষীরায় ১২৯ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। যা আরও দুই-একদিন চলবে বলে জানিয়েছেন আবহাওয়া অফিস। আগামীকাল সোমবার থেকে এ অবস্থার কিছুটা উন্নতি হতে পারে বলে জানান তিনি। শহরের কুখরালি এলাকার আমির হোসেন, তৌহিদুর রহমানসহ একাধিক ব্যক্তিরা বলেন, পৌরসভার কুখরালী উত্তরপাড়ার রাস্তাটি প্রায় ১ মাস যাবৎ ১০০ পরিবারের ৫০০ শতাধিক মানুষ পানিবন্দি হয়ে আছেন। শহরের ইটাগাছা, গড়েরকান্দা, কুখরালী ও বাঁকাল বারুইপাড়া এলাকার পানি আসে যে বিলে, সেই বিলের পানি বেরোনোর পথ বন্ধ করে রেখেছে স্থানীয় প্রভাবশালীরা। বিগত পাঁচ বছর ধরে চলছে এই অবস্থা।
তারা আরও জানান, বছরের চার থেকে পাঁচ মাস ওই এলাকায় হাঁটু পানি জমে থাকে। দীর্ঘ দিন পানি আটকে থাকায় চলাচলের রাস্তাটি গেছে নষ্ট হয়ে গেছে। পঁচা পানির কারণে দেখা দিয়েছে চর্মরোগ। স্থায়ী জলাবদ্ধতায় রূপ নিয়েছে এলাকাটি। গোসল, পায়খানা, খাওয়ার পানি সংগ্রহে খুব কষ্ট হচ্ছে মানুষের। এ অবস্থায় শিশুরাও ঠিকমত স্কুলে যেতে পারছে না পঁচাপানি ও সাপের ভয়ে।
একই অবস্থা সাতক্ষীরা-আশাশুনি সড়কের পূর্বপাশে রামচন্দ্রপুর বিলের পানি উঠেছে উঠোনে। সেখানে অন্তত অর্ধশতাধিক বাড়ি-ঘরে ও উঠোনে পানি থৈ থৈ করছে। নারী ও শিশুরা রয়েছে চরম ঝুঁকিতে। পানিবন্দি এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, সাতক্ষীরা পৌরসভার কামালনগর, ইটাগাছা, মেহেদীবাগ, রসুলপুর, বদ্দীপুর কলোনি, রইচপুর, মধ্য কাটিয়া, রথখোলা, রাজার বাগান, মুনজিতপুর, গদাইবিল ও পুরাতন সাতক্ষীরার নিম্ন এলাকাগুলোতে ভয়াবহ জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। সাতক্ষীরা জেলা নাগরিক কমিটির যুগ্ম সদস্য সচিব ও জেলা গণফোরামের সভাপতি আলীনুর খান বাবুল বলেন, সবার আগে প্রভাবশালীদের কবল থেকে পানি নিষ্কাশনের পথ জনস্বার্থে উন্মুক্ত করতে হবে। নদী-খাল খননে প্রকৃত গভীরতা বজায় রেখে এবং আদি ম্যাপ অনুযায়ী সঠিকভাবে প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে হবে। সরকারি খাল ও জলমহাল থেকে অবৈধ দখল, নেট-পাটা উচ্ছেদ করতে হবে। তিনি আরও বলেন, ইজারা বাতিল ও পরিবেশবান্ধব জলব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করতে হবে। অপরিকল্পিত ঘের নিষিদ্ধ ও বিকল্প ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। অকেজো স্লুইস গেট সংস্কার ও ত্রুটিপূর্ণ বাঁধ মেরামত করতে হবে। সাতক্ষীরা সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শোয়াইব আহমাদ বলেন, জলাবদ্ধতা নিরসনে আমরা ঘের মালিকসহ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে একাধিকবার আলোচনা করেছি। আশা করছি দ্রুত সময়ের মধ্যে পরিস্থিতি কিছুটা উন্নত।