ঢাকা রোববার, ২৫ মে ২০২৫, ১১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

এখনও বই পায়নি সব শিক্ষার্থী

এখনও বই পায়নি সব শিক্ষার্থী

নতুন শিক্ষাবর্ষের সাড়ে চার মাস চলছে। অথচ এখনও দেশের সব শিক্ষার্থীর হাতে বই যায়নি। আবার অনেকের হাতে বই গেলেও তারা আংশিক পেয়েছেন। শিক্ষার্থীদের বই পাওয়ার দিক থেকে স্কুলের শিক্ষার্থীরা এগিয়ে থাকলেও মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা অনেক পিছিয়ে রয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্র এসব তথ্য জানিয়েছে।

জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) সূত্র জানায়, এবার প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরে শিক্ষার্থীদের জন্য ৪০ কোটির বেশি বিনামূল্যের পাঠ্যবই ছাপানো হচ্ছে। এর মধ্যে প্রায় ৩৮ কোটির বেশি বই শিক্ষার্থীদের হাতে গিয়েছে। আর প্রায় দুই কোটির মতো বই এখনও শিক্ষার্থীদের হাতে যায়নি। এর সিংহভাগই মাধ্যমিক পর্যায়ের। সেই হিসাবে এখনও প্রায় ৫ শতাংশ শিক্ষার্থী বই পায়নি।

সংশ্লিষ্টরা জানান, দেশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সব বই না পৌঁছার কারণে বেশকিছু বিষয়ে এখনও পড়ালেখা শুরু করতে পারেনি শিক্ষার্থীরা। এতে শ্রেণিভিত্তিক মূল্যায়নে জটিলতার পাশাপাশি শিখন ঘাটতিসহ নানাভবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে তারা।

জানা যায়, কক্সবাজারের ঈদগাঁও উপজেলার চার হাজারেরও বেশি মাদ্রাসা শিক্ষার্থী চলতি বছরের পঞ্চম মাসেও কোনো বই পায়নি। এ নিয়ে অভিভাবকরা শিশুদের শিক্ষাজীবন নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন। এমন চিত্র বাংলাদেশের অনেক জায়গায় দেখা গিয়েছে।

ঈদগাঁও উপজেলার অনুমোদিত ও অনুমোদনহীন ছোট-বড় ২৭টি মাদ্রাসার ইবতেদায়ী শাখার চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণির কোমলমতি চার হাজারেরও বেশি শিক্ষার্থী এখনও কোনো বই পায়নি। যার কারণে শিশুদের সম্ভাবনাময় শিক্ষাজীবন হুমকির মুখে পড়েছে।

সচেতন অভিভাবকরা জানান, চলতি শিক্ষাবর্ষের পাঁচ মাস অতিবাহিত হতে চলছে। আগামী মাসে অর্ধবার্ষিকী পরীক্ষা অনুষ্ঠানে বোর্ডের নির্দেশনা রয়েছে। পাঠ্যপুস্তক ছাড়া কী শিক্ষা নিয়ে শিশুরা পরীক্ষায় অংশ নেবে তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন তারা।

ঈদগাঁও আলমাছিয়া ফাজিল ডিগ্রি মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মাওলানা হেফাজত উল্লাহ নদভী জানান, বিগত চার মাসেও ইবতেদায়ী চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা কোনো বই পায়নি। যার কারণে পাঠদান চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে।

ইসলামপুর ইসলামিয়া দাখিল মাদ্রাসা সুপার মাওলানা মো, নজিবুল ইসলাম জানান, পার্শ্ববর্তী সব উপজেলার শিক্ষার্থীরা বই পেলেও এ উপজেলার শিশু শিক্ষার্থীরা একটিও বই না পাওয়ায় অভিভাবকরা শিক্ষকদের ওপর অসন্তোষ প্রকাশ করছেন। তিনি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে দ্রুত বই সরবরাহের দাবি জানান।

উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা (অতিরিক্ত দায়িত্ব) মো. ইসমাইল জানান, এনসিটিবি থেকে এখনও পর্যন্ত উপজেলার জন্য বই সরবরাহ না করায় এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। তিনি বারবার সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে এটি জানিয়েছেন।

ঈদগাঁও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বিমল চাকমা জানান, তাকে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি কেউ এ পর্যন্ত অবগত করেননি। তিনি দ্রুত এ বিষয়ে খোঁজ নিচ্ছেন।

মুদ্রণসংশ্লিষ্টরা বলছেন, নতুন শিক্ষাবর্ষের বই ছাপার কাজ এবার দেরিতে হলেও সেই কাজে গতি দিতে পারেনি এনসিটিবি। এনসিটিবির চেয়ারম্যানসহ সব সদস্য নতুন হওয়ায় তাদের সবকিছু বুঝে উঠতে সময় লেগে গেছে বেশি। নভেম্বর থেকে বই ছাপা শুরু করলেও এখনও তা শেষ হয়নি। এছাড়া বই ছাপানোর কাগজের এক ধরনের কৃত্রিম সংকট তৈরি করেছেন ব্যবসায়ীরা। অন্যদিকে জানুয়ারি থেকে বইমেলা ও সহায়ক নোট-গাইড ছাপানোর কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়েন বাঁধাই শ্রমিকরা। এতেও একধরনের সংকট তৈরি হয়। শেষ সময়ে এসে বিদেশ থেকে কাগজ আমদানির উদ্যোগ নেয় এনসিটিবি। ফলে এনসিটিবির নানা অদূরদর্শী সিদ্ধান্ত ও ধীরগতির কারণে শিক্ষার্থীরা বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

সূত্র জানায়, নতুন বছরে প্রাক-প্রাথমিক থেকে নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের বিপুল সংখ্যক বই ছাপতে প্রথমে ১২০০ কোটি টাকা বাজেট নির্ধারণ করা হলেও পরে তা বাড়িয়ে দাঁড়িয়েছে ১৭৫০ কোটি টাকা। গত বছর নতুন বই ছাপার খরচের চেয়ে তা ৩৫০ কোটি টাকা বেশি।

এনসিটিবি কর্মকর্তারা জানান, এবার প্রাক-প্রাথমিক থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত ৪ কোটি ৩৪ লাখ ৩ হাজার ২৮৩ শিক্ষার্থীর জন্য ৯৬৪ লটে ছাপা হবে ৪০ কোটি ১৫ লাখ ৬৭ হাজার ২০২ কপি বই। এর মধ্যে প্রাথমিকের ২ কোটি ৯ লাখ ৪৪ হাজার ৪৭৯ শিক্ষার্থীর জন্য ছাপানো হচ্ছে ৯ কোটি ১৯ লাখ ৫০ হাজার ৪৯২ কপি বই। অন্যদিকে মাধ্যমিকের ২ কোটি ২৪ লাখ ৫৮ হাজার ৮০৪ শিক্ষার্থীর জন্য ছাপানো হচ্ছে ৩০ কোটি ৯৬ লাখ ১২ হাজার ৮৪৭ কপি বই। এর মধ্যে ইবতেদায়ি ও ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর বইও যুক্ত করা হয়েছে। এ ছাড়া ব্রেইল বই রয়েছে সাড়ে ৮ হাজার।

বাংলাদেশ মুদ্রণ সমিতির সাবেক সভাপতি তোফায়েল খান বলেন, নতুন শিক্ষাবর্ষের বই ছাপানোর জন্য শেষ মুহূর্তে কাগজ আমদানি করে এনসিটিবি। এ ধরনের উদ্যোগ আগে নিলে এই সমস্যা কেটে যেত। এতে শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার ক্ষতিও কম হতো।

মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা (মাউশি) বিভাগের সিনিয়র সচিব সিদ্দিক জোবায়ের বলেন, আগামী বছরের জন্য আমরা এমনভাবে পরিকল্পনা সাজিয়েছি, যেন এ বছর ডিসেম্বরে বার্ষিক পরীক্ষার শেষ দিন শিক্ষার্থীরা বই নিয়ে বাড়ি ফিরতে পারেন।

তিনি বলেন, আপনারা জানেন গত বছর একদম শেষ সময়ে এসে আমাদের বইয়ের কারিকুলামে পরিবর্তন করতে হয়েছে। ফলে বই মুদ্রনের কাজটা আমরা দেরিতে শুরু করেছি। কিন্তু দেখবেন বিগত ২০ বছরের ইতিহাসে ২০১৭ সাল ছাড়া একটি বছরও এপ্রিল মাসের আগে পুরোপুরি বই বিতরণ করা যায়নি।

সিদ্দিক জোবায়ের আরও বলেন, আগামী ২০২৫-২৬ শিক্ষাবর্ষে শিক্ষা খাতে সর্বোচ্চ বাজেট বরাদ্দ হবে। শিক্ষাপদ্ধতি শুধু পাঠদানের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। শিক্ষাক্ষেত্রে যেসব উপকরণ আছে যেমন- শিক্ষকদের প্রশিক্ষিত করা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অবকাঠামোগত উন্নয়নের জন্য আমরা বেশ কয়েকটি প্রকল্পের আওতায় কাজ শুরু করেছি। নতুন নতুন ভবন নির্মাণ, আধুনিক ল্যাবরেটরি ও কম্পিউটার ল্যাবরেটরির কাজ হচ্ছে। প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এক বা একাধিক মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম চালু করতে কাজ করছি।

এনসিটিবি,বই,শিক্ষার্থী
আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত