ঢাকা শুক্রবার, ২০ জুন ২০২৫, ৬ আষাঢ় ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

‘ফ্যাসিস্ট আমলে পাবিপ্রবিতে সব নিয়োগে দলীয়করণ হয়েছে’

‘ফ্যাসিস্ট আমলে পাবিপ্রবিতে সব নিয়োগে দলীয়করণ হয়েছে’

পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (পাবিপ্রবি) নতুন যোগদানকৃত উপাচার্য অধ্যাপক এসএম আব্দুল আওয়াল বলেন, ফ্যাসিস্ট আওয়ামী সরকারের আমলে যত্রতত্র বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে তোলা হলেও শিক্ষার মান রক্ষা করা হয়নি। মানসম্মত শিক্ষক নিয়োগ দেয়া হয়নি। ফলে সামগ্রিক শিক্ষা ব্যবস্থা ব্যর্থ হয়েছে। একটা জেনারেশন টোটালি ব্যর্থ হয়েছে।

তিনি আরো বলেন, পাবিপ্রবিতে নানা অনিয়ম, দুর্নীতি ও বিশৃঙ্খলাসহ শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগে দলীয়করণ করা হয়েছে। শিক্ষক না থাকলেও ইচ্ছামতো বিভাগ খোলা হয়েছে। প্রশাসনিক কার্যক্রমে নিয়মকানুন মানা হয়নি। কোনো আচরণ বিধি তৈরি করা হয় নাই। বিশ্ববিদ্যালয়কে নিয়ন্ত্রণ করত একটি অসাধু চক্র; শিক্ষার্থীদের নির্যাতন করা হয়েছে। এখানে গত ১৬ বছরেও কোন সিস্টেম গড়ে ওঠেনি। গতকাল শুক্রবার সকালে পাবনার স্থানীয় সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় তিনি এ সব কথা বলেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. নজরুল ইসলাম ও কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মো. শামীম আহসান। পাবিপ্রবির প্রশাসনিক ভবনে উপাচার্যের অফিস রুমে অনুষ্ঠিত মতবিনিময় সভার শুরুতে উপাচার্য অধ্যাপক ড. এসএম আব্দুল আওয়াল জুলাই-আগস্টে শহীদদের আত্মর মাগফেরাত কামনা করেন। আহতদের প্রতি সমবেদনা জানান। এছাড়া গত ১৭ বছরে ফ্যাসিস্ট বিরোধী আন্দোলনে খুন, গুম এবং আহতদের শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করেন। তিনি বলেন, আমরা বিশ্ববিদ্যালয়কে সঠিক পথে আনার জন্য এবং একটি আদর্শ বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে নানা পরিকল্পনা হাতে নিয়েছি। সেই পরিপরিকল্পনা অনুযায়ী রিসার্চ সেল গড়ে তোলার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। শিক্ষার্থীদের গ্রন্থাগার-মেডিকেল সুবিধা বাড়ানো, খেলাধুলার পরিবেশ বাড়ানো, আবাসিক হলের সুযোগ সুবিধা বাড়ানো, এক্সট্রা কারিকুলার অ্যাকটিভিজ বাড়ানোর পাশাপাশি শিক্ষার মান তথা শিক্ষার পরিবেশ উন্নয়নে সার্বক্ষণিক একাডেমিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। আধুনিক যুগোপযোগী বিভাগ খোলার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীদের প্রশিক্ষণ দিয়ে দক্ষ জনবল তৈরি করা হচ্ছে। যেসব বিভাগের অ্যাক্রিডিটেশন নাই সেসব বিভাগের অ্যাক্রিডিটেশন নেয়ার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। বন্ধ একাডেমিক স্কলারশিপ চালু করা হয়েছে। শিক্ষার্থীদের প্রশিক্ষণ, ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীরা যাতে মুক্তমনে চলাফেরা, সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড করতে পারে তার ব্যবস্থা করাসহ বিভিন্ন ক্লাব গড়ে তোলার কাজ চলছে। আমরা এমন পদ্ধতি গড়ে তুলতে চাই যাতে একদিন বিশ্ববিদ্যালয়টি পাবনাবাসীর গর্ব হয়ে ওঠে।

উপাচার্য অধ্যাপক এসএম আব্দুল আওয়াল বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের আয়তন বাড়ানোর জন্য জমি অধিগ্রহণ প্রক্রিয়াধীন। পাবনার ঐতিহ্য কৃষি, পশুপালন, এগুলো নিয়ে গবেষণা করা হবে। সর্বোপরি বিশ্ববিদ্যালয়কে একটি সম্পদ হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে কাজ চলছে। যার মাধ্যমে নতুন একটি ফ্লেভার তৈরি হবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

উপাচার্য বলেন, আমাদের শিক্ষার্থীদের মানসম্মত পাঠদান করার পাশাপাশি ভালো মানুষ হিসেবে গড়ে তোলার যাবতীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। শুধু অবকাঠামোগত নয় তাদের মনোজাগতিক পরিবর্তনে বিভিন্ন ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে। যাতে তারা দক্ষ গ্র্যাজুয়েট হিসেবে গড়ে ওঠে। শিক্ষা, গবেষণা, জ্ঞান সৃষ্টির উপযোগী হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয়কে গড়ে তোলা হবে। উপাচার্য জানান, পাবনায় ছাত্র জনতার আন্দোলনে শহীদ মাহবুব হাসান নিলয়ের স্মরণে এরই মধ্যে ফুটবল টুর্নামেন্টের আয়োজন করা হয়েছে। আগামী ১২ ফেব্রুয়ারি থেকে শহীদ জাহিদের নামে ক্রিকেট টুর্নামেন্ট অনুষ্ঠিত হবে। এছাড়া কয়েকজন শহীদের বাড়িতে গিয়ে স্বজনদের সঙ্গে দেখা করা ও তাদের কবর জিয়ারতের কথা উল্লেখ করেন তিনি। মতবিনিময় সভায় পাবনা প্রেসক্লাবের সভাপতি আখতারুজ্জামান আখতার, সম্পাদক জহুরুল ইসলাম, পাবিপ্রবির প্রক্টর অধ্যাপক ড. কামরুজ্জামান খান, ছাত্র উপদেষ্টা দপ্তরের পরিচালক অধ্যাপক ড. মো. রাশেদুল হক, রেজিস্ট্রার বিজন কুমার, জনসংযোগ দপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক মো. ফারুক হোসেন চৌধুরী, পাবনা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাবেক সাধারণ সম্পাদক কাজী মাহবুব মের্শেদ বাবলা, পাবিপ্রবি প্রেসক্লাবের সভাপতি জাহিদুল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক নাজমুল হুদা শিথিলসহ পাবনা প্রেসক্লাব ও পাবিপ্রবি প্রেসক্লাব সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত