জীবন-সংগ্রামে একজন সফল মানুষের নাম ছাদেক আলী। নিজে একজন দৃষ্টি প্রতিবন্ধী হয়েও অন্যান্যদের মতো ভিক্ষা না করে বাদাম বিক্রি করে সংসার চালাচ্ছেন তিনি। ছাদেক আলী দুই মেয়ে ও স্ত্রী নিয়েই তার সংসার। সে জন্ম থেকেই সম্পন্ন দৃষ্টি প্রতিবন্ধী হয়েও শুধু মাত্র একটি লাঠির সাহায্যে চলাচল করেন। মাথায় বাদামের বস্তা নিয়ে হাতের লাঠির উপর ভরসা করে কখনো উপজেলা চত্বরে, কখনো বা থানার সামনের রাস্তায়, আবার কখনো হাসপাতালের সামনে, কখনো বা আল্লাদর্গা বাজারে, সকাল থেকে সন্ধ্যা অবধি রাস্তায় পায়ে হেঁটে বাদার বিক্রি করেন তিনি। এই ছোট্ট বাদামের ব্যবসা থেকে যে আয় হয় তা দিয়েই চলে তার সংসার। কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলার মহিষকুন্ডি এলাকার বাঁধের বাজার গ্রামের দৃষ্টি প্রতিবন্ধী ছাদেক আলী। ছাদেক আলী অন্ধ হয়েই দরিদ্র পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। দৌলতপুর উপজেলার মহিষকুন্ডি এলাকার বাঁধের বাজার গ্রামের নুর ইসলামের ছেলে সে। প্রায় বিশ বছর ধরে পায়ে হেঁটে উপজেলার বিভিন্ন জায়গায় মাথায় করে বস্তায় ভোরে বাদাম বিক্রি করেন তিনি, পলিথিন দিলে বেশি খরচ পড়বে বলে কাগজের ঠোঙ্গায় করে বাদাম বিক্রি করে সে। যদি কেউ বেশি করে বাদাম নেন সেই জন্য সামান্য কিছু পলিথিন রাখেন। তিনি উপজেলার চরাঞ্চল থেকে কাঁচা বাদাম সংগ্রহ করেন তার পর বাড়িতে এনে ভেঁজে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত বিভিন্ন এলাকা ঘুরে ঘুরে বিক্রি করেন। প্রতিদিন দুই থেকে আড়াইশ টাকার মতো আয় হয়। তা দিয়েই মোটামুটি চলে তার সংসার। এভাবে বাদাম বিক্রি করতে গিয়ে প্রায়ই বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হতে হয় তাকে। রাস্তায় চলার পথে গাড়ি-ঘোড়াসহ বিভিন্ন জিনিসের সঙ্গে ধাক্কা খায় সে। ছোট বড় দুর্ঘটনা মাঝে মধ্যেই ঘটে, তবুও জীবিকার জন্য এভাবেই বাদাম বিক্রি করেন সে। উপজেলার ডাংমড়কা এলাকার বিশিষ্ট ব্যবসায়ী আব্দুল আলীম বলেন, আমি অনেক আগে থেকে দেখে আসছি উনি অন্ধ হয়েও পায়ে হেঁটে উপজেলার বিভিন্ন জায়গায় বাদাম বিক্রি করেন। কারো কাছে ভিক্ষা চান না সে। আমিও মাঝে মাঝে উনার কাছ থেকে বাদাম কিনি। একান্ত আলাপকালে মো. ছাদেক আলী বলেন, আমি প্রায় বিশ-একুশ বছর ধরে বিভিন্ন জায়গায় পায়ে হেঁটে বাদাম বিক্রি করি। এক প্রশ্নে তাকে দৃষ্টি প্রতিবন্ধী হয়েও ভিক্ষা না করে বাদাম বিক্রির কথা জিজ্ঞাসা করলে, তিনি বলেন ভিক্ষা করা খারাপ কাজ। কেন ভিক্ষা করবো? বাদাম বিক্রি করেই আল্লাহ বরকত দেয়। কষ্ট হলেও এই দিয়েই মোটামুটি সংসার চালিয়েনি। তিনি আরো বলেন, আমি ভিক্ষা না করে বাদাম বিক্রি করে সংসার চালায়। অন্য যারা প্রতিবন্ধী আছেন তাদের বলছি আপনারা কেউ ভিক্ষা করবেন না। কাজ করে টাকা উপার্জন করুন। তাতে আল্লাহও খুশি হবেন, সুখে থাকবেন সবাই। খাস মথুরাপুর ডিগ্রি কলেজের প্রফেসর আতাউর রহমান বলেন, ভিক্ষাবৃত্তি সমাজের জন্য একটি অভিশাপ। তাই প্রতিবন্ধী হয়েও ছাদেক আলীর মতো কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করা সম্ভব। ছাদেক আলীর কাছ থেকে শিক্ষা নেয়া উচিত সমাজের অন্যান্য খেটে খাওয়া সাধারণ মানুষ ও ভিক্ষুকদের।