বগুড়ায় লাভজনক ফসলে পরিণত হয়েছে মিষ্টি কুমড়া চাষ। একই জমিতে অন্য ফসলের পাশাপাশি সাথী ফসল হিসেবে চাষ করা হচ্ছে মিষ্টি কুমড়া। অল্প খরচে বেশি ফলন হওয়ায় মিষ্টি কুমড়ার চাষ দিন দিন বাড়ছে। বগুড়া যমুনার বালুচরে মিষ্টি কুমড়া চাষ করে ভাগ্যের চাকা ঘুরিয়েছেন অনেক কৃষক। এক সময় এ সব চর অনাবাদি থাকত। চাহিদার কারণে এখন চরগুলো নানা ফসলে ভরপুর। চরের কৃষকরা এখন তাদের উৎপাদিত ফসল বাজারজাত করে আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছেন। অনেকে চর ছেড়ে উপজেলা সদর এমনকি জেলা শহরেরও বসতি গড়েছেন। স্থানীয় কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, চাষাবাদে আধুনিক কৃষি যন্ত্রপাতির ব্যবহার ও উচ্চ ফলনশীল জাত উদ্ভাবনের ফলে এ সব সম্ভব হয়েছে। গ্রামাঞ্চলের মানুষ সামান্য পরিত্যক্ত জমিতেও চাষ করছে মিষ্টি কুমড়া। বগুড়া জেলার সব উপজেলাতেই ব্যাপক হারে মিষ্টি কুমড়ার চাষ হওয়ায় দাম ও রয়েছে নাগালের মধ্যে। বগুড়ার সবচেয়ে বড় সবজির হাট মহাস্থান থেকে প্রতিদিন কমপক্ষে ৩০ ট্রাক মিষ্টি কুমড়া যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে।
বগুড়ার শিবগঞ্জ উপজেলায় উৎপাদিত মিষ্টি কুমড়া সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়াসহ কয়েকটি দেশে রপ্তানি হচ্ছে। কৃষকদের ন্যায্য মূল্য পাওয়া এবং দেশে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের লক্ষ্যে কাজ করছে বাররুন এগ্রো ফার্ম নাম একটি প্রতিষ্ঠান। এ সব সবজি রপ্তানিতে সার্বিক সহযোগিতা করছে উপজেলা কৃষি বিভাগ। সারিয়াকান্দি উপজেলা কৃষি অফিসের সূত্র জানায় অতীতের সব রেকর্ড ভেঙে এবার ১৩০ হেক্টর জমিতে মিষ্টি কুমড়ার আবাদ হয়েছে। প্রতি হেক্টর জমিতে ১৫ থেকে ২০ টনের বেশি মিষ্টি কুমড়া উৎপন্ন হচ্ছে, যা বাজারে ৫০ টাকা কেজি পর্যন্ত বিক্রি হয়। কৃষক জমির বলেন, গত বছর তিনি ১৫ বিঘা জমিতে মিষ্টি কুমড়ার আবাদ করেন। মাত্র তিন মাসে সাড়ে ৫ লাখ টাকা লাভ পেয়েছিলেন। এ বছর ২৫ বিঘা জমিতে মিষ্টি কুমড়ার চাষ করেছেন। তার মতো এ চরেই মান্না মিয়া ৪০ বিঘা, হবিবর মিয়া ৭০ বিঘা এবং আমরুল মিয়া ৬০ বিঘা জমিতে মিষ্টি কুমড়ার আবাদ করেছেন। তিনি বলেন, দেশের দক্ষিণাঞ্চল ছাড়াও সিলেট, ময়মনসিংহ ও ঢাকা এলাকায় প্রতিদিন কমপক্ষে ২০ ট্রাক মিষ্টি কুমড়া মহাস্থান হাট থেকে যাচ্ছে। বাকি ১০ ট্রাক মিষ্টি কুমড়া বিক্রি হচ্ছে বগুড়া ও তার আশেপাশের জেলা গুলোতে। কৃষক আব্দুর রহিম জানান, মিষ্টি কুমড়া চাষ করতে তার ব্যয় হয়েছে মাত্র ৫৯০ টাকা। এর মধ্যে ৪৪০ টাকার বীজ এবং ১৫০ টাকার কীটনাশক। তিনি ৩২৫ পিস মিষ্টি কুমড়া বিক্রি করেছেন ১৫ হাজার টাকায়।
আব্দুর রহিম ছাড়াও এ অঞ্চলের কৃষক একই জমিতে অন্য ফসলের পাশাপাশি সাথী ফসল হিসেবে মিষ্টি কুমড়া চাষ করেছেন। বিভিন্ন এলাকার কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, হাইব্রিড জাতের এই মিষ্টি কুমড়া চাষ দিন দিন লাভজনক ফসলে পরিণত হচ্ছে। ফলে গ্রামের মানুষ বাড়ির উঠানেও মিষ্টি কুমড়ার বীজ বপন করে মিষ্টি কুমড়ার চাষ করছেন।
সারিয়াকান্দি উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আব্দুল হালিম বলেন, চরাঞ্চল এখন মানুষের জন্য অভিশাপ নয়। এটি এখন কৃষকদের জন্য আশীর্বাদ। আমাদের পরামর্শে নানা জাতের উচ্চ ফলনশীল ফসল চরের উর্বর মাটিতে প্রচুর পরিমাণে ফলছে। এ সব ফসল বিক্রি করে কৃষকরা ব্যাপকভাবে লাভবান হচ্ছেন। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর বগুড়ার উপ-পরিচালক মো. মতলুবর রহমান জানান এ জেলার কৃষক অত্যন্ত পরিশ্রমী ও উদ্যোগী। চাষাবাদে আধুনিক কৃষি যন্ত্রপাতির ব্যবহার ও উচ্চ ফলনশীল জাত জাতের শষ্য উৎপাদন করে নিজেদের ভাগ্য পরিবর্তনের পাশাপাশি ছেলে মেয়েদের শিক্ষিত করছেন।