কুমিল্লার গৌরীপুর-বাঞ্ছারামপুর ৩০ কিলোমিটার আঞ্চলিক সড়কের যানজ্বটের বিষফোঁড়া তিতাসের বাতাকান্দি ও কড়িকান্দি বাজার এবং দাউদকান্দির গৌরীপুর বাজার। প্রতিদিন এই সব স্থানে যানজ্বটে ঘন্টার পর ঘণ্টা আটকে থাকছে যানবাহন। বিশেষ করে গত রোববার গৌরীপুর বাজারে ও গতকাল বুধবার বাতাকান্দি বাজারে সাপ্তাহিক হাট থাকায় যানজ্বট যেন আরো ভয়াবহ আকার ধারণ করে। ফলে কুমিল্লার তিতাস, মেঘনা, হোমনা, মুরাদনগর, দাউদকান্দি ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুরের যাত্রীদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।
এই ছয়টি উপজেলার মানুষের এবং দূরপাল্লার বাস ও অন্যান্য যানের প্রধান সড়ক এটি। ঢাকার সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ স্থাপন করতে ১৯৯৪ সালে গৌরীপুর-তিতাস-হোমনা-বাঞ্ছারামপুরের ৩০ কিলোমিটার সড়ক নির্মাণ করা হয়। এই সড়কে তৎকালীন প্রায় ১৩টি বেইলি ব্রিজ্ব স্থাপন করা হয়। বর্তমানে এসব স্থানে পাকা সেতু নির্মাণ শোভা পাচ্ছে। এই সড়কটি ব্যবহার করে কুমিল্লার তিতাস, মেঘনা, হোমনা, মুরাদনগর, দাউদকান্দি ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুরের মানুষ ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক হয়ে রাজ্বধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে যাতায়াত করে। এলাকার ব্যবসায়ীরা এই সড়ক ব্যবহার করে তাদের পণ্য আনা নেয়া করে। সড়কটি নির্মাণের সময় সড়ক ও জ্বনপদ বিভাগ বাজার এলাকায় রাস্তার দুই পাশে ৩০০ ফুটেরও বেশি জায়গা অধিগ্রহণ করে। বিগত আওয়ামীলীগ সরকারের ১৫ বছরের শাসন আমলে কোন উচ্ছেদ অভিযান না হওয়ায় বেশিরভাগ অংশ বিভিন্ন প্রভাবশালী ব্যক্তি দখল করে স্থাপনা নির্মাণ করেছে। কড়িকান্দি ও বাতাকান্দি বাজারে একাধিক বহুতল ভবনও নির্মাণ করা হয়েছে। এ সব জাগয়া থেকে দখলদকার ভাড়া নিয়ে এবং পজিশন হস্তান্তর করে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে। সরেজ্বমিনে দেখা যায়, বিগত ২০ বছরে ৩০ কিলোমিটার সড়কের উভয়পাশে অসংখ্য সংযোগ রাস্তা স্থাপন হওয়ায় স্টেশনগুলোতে তৈরি হয়েছে অবৈধ সিএনজি ও অটোরিক্সা ষ্ট্যান্ড। ফুটপাত দখল করে যানবাহনের স্ট্যান্ড তৈরি হওয়ায় যানজ্বন আরো মারাত্মক আকার ধারণ করে। যানজ্বটের অনেক সময় যাত্রীদের সঙ্গে স্থানীয় ফুটপাতের ব্যবসায়ীদের তর্কাতর্কি হচ্ছে।
গত রোববার দাউদকান্দির গৌরীপুর বাজারে সাপ্তাহিক হাটের দিন লাখ লাখ ক্রেতা-বিক্রেতার সমাগম ঘটে। এ সময় আধা কিলোমিটার সড়ক অতিক্রম করতে ৩ থেকে ৪ ঘণ্টা পর্যন্ত সময় ব্যয় করতে হচ্ছে। এছাড়াও বাজার এলাকায় রাস্তা সরু হওয়ায় এবং ফুটপাতে ভাস্যমান দোকান থাকায় প্রতিদিন ঘণ্টার পর ঘণ্ট যাত্রীদের বসে থাকতে হচ্ছে সিএনজি চালক লিয়াকত আলী জানান, গৌরীপুর যেতে ও আসতে আমাদের অতিরিক্ত এক থেকে দুই ঘণ্টা ব্যয় হচ্ছে। বিশেষ করে গৌরীপুর, কড়িকান্দি ও বাতাকান্দি বাজারে প্রতিদিনই যানজ্বট লেগে থাকে। এই যানজ্বটের কারণে আমাদের আয় অনেক কমে গেছে।
ট্রাকচালক হুমায়ুন কবির জানান, সপ্তাহে চার দিন আমরা এই সড়ক ব্যবহার করে দেশের বিভিন্ন জায়গায় পণ্য নিয়ে যাই এবং নিয়ে আসি। কিন্তু যানজ্বটের কারণে আমাদের সময় এবং খরচ দুটোই বেড়ে গেছে। এতে করে আমরা যে টাকা ভাড়া নেই তাতে আমাদের পোষাচ্ছে না। বাতাকান্দি ও কড়িকান্দি বাজারের একাধিক ব্যবসায়ী জানান, বাতাকান্দি, কড়িকান্দি ও গৌরীপুর বাজারে যানজ্বট প্রতিদিনের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। রাস্তার জায়গা দখল করে দোকান ভাড়া দেয়া হয়েছে। আবার ভাড়াটিয়া তার দোকানের সামনের অংশ ভ্রাম্যমাণ ব্যবসায়ীদের কাছে ভাড়া দিচ্ছে। এতে রাস্তা সরু হয়ে পড়েছে। মালামাল পরিবহনে আমাদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।
সড়ক ও জ্বনপথ বিভাগের গৌরীপুর অঞ্চলের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মো. শফিকুল ইসলাম ভূঁইয়া মুঠোফোনে জানান, আমরা বর্তমানে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ অভিযান চালাচ্ছি।