উত্তরবঙ্গের প্রবেশদ্বার হিসেবে পরিচিত ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের চন্দ্রা ত্রিমোড়। সেখানে নিরাপদে মহাসড়ক পারাপারের জন্য রয়েছে তিনটি ফুটওভার ব্রিজ। এছাড়াও নিরাপত্তার জন্য পর্যাপ্ত সিসি ক্যামেরা ও দুটি পুলিশ বক্স থাকলেও রয়েছে নিয়মিত চুরি-ছিনতাইয়ের ঝুঁকি। এটা এড়াতে ডিভাইডার কেটে ফ্লাইওভারেইযেন বাস স্টেশন। আর কাটা ডিভাইডার দিয়েই জীবনের ঝুঁকি নিয়ে চলছে মানুষ।সরেজমিন খোঁজ নিয়ে এবং এলাকাবাসী, পরিবহন শ্রমিক ও যাত্রীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, দেশের গুরুত্বপূর্ণ মহাসড়কগুলোর একটি ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক। এ মহাসড়কের গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার চন্দ্রা ত্রিমোড় হয়ে উত্তরবঙ্গের ২০টি জেলার লাখ লাখ মানুষ। যার কারণে ঢাকা-টাঙ্গাইল ও চন্দ্রা-নবীনগর মহাসড়কের চন্দ্রা ত্রিমোড়টি উত্তরবঙ্গের প্রবেশদ্বার হিসেবে পরিচিত।
এক সময়ের যানজটে এ মহাসড়কে নাকাল অবস্থা ছিল। এখানে ঘণ্টার পর ঘণ্টা যানজটে আটকে চরম দুর্ভোগে পড়তেন পরিবহন শ্রমিক ও যাত্রীরা। মানুষের দুর্ভোগ লাঘবে বিভিন্ন পয়েন্টে ফ্লাইওভার, আন্ডারপাস, ফুটওভার ব্রিজসহ গুরুত্বপূর্ণ এ মহাসড়কের উন্নতিকরণ করা হয়েছে। ফলে এ মহাসড়কে চিরচেনা সেই যানজট আর চোখে পড়ে না। তারপরও অদক্ষ চালক, এলোমেলো গাড়ি চলাচল, যত্রতত্র গাড়ি পাকিং, ওভারটেকিং, যত্রতত্র যাত্রী উঠা-নামা করায় এ মহাসড়কের বিভিন্ন পয়েন্টে জটলার সৃষ্টি হচ্ছে। এছাড়াও নিরাপদে মহাসড়ক পারাপারের জন্য সেখানে তিনটি ফুটওভার ব্রিজ এবং মানুষের নিরাপত্তার জন্য পর্যাপ্ত সিসি ক্যামেরা ও দুটি পুলিশ বক্স বসানো হয়েছে। ওই দুটি পুলিশ বক্সে গাজীপুর জেলা ও নাওজোর হাইওয়ে পুলিশ দায়িত্ব পালন করে থাকে। কিন্তু যানজট নিয়ন্ত্রণ করতে পারলেও এ মহাসড়কে যেন অনিয়ন্ত্রিত রয়েছে চুরি, ছিনতাই, ডাকাতিসহ বিভিন্ন অপরাধ। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি অপরাধ সংঘঠিত হচ্ছে ঢাকা-টাঙ্গাইল ও চন্দ্রা-নবীনগর দুটি মহাসড়কের চন্দ্রা ত্রিমোড়কে ঘিরে। বিশেষ করে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের চন্দ্রা বন অফিসের পাশে এবং চন্দ্রা-নবীনগর মহাসড়কের চন্দ্রা মাছের আড়ত এলাকায় বেশি চুরি ও ছিনতাই হচ্ছে। প্রায় নিয়মিতি এসব অপরাধীদের কবলে পড়ছেন সাধারণ মানুষসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরাও। ছিনিয়ে নেওয়া হচ্ছে টাকা-পয়সা, স্বর্ণালংকারসহ তাদের বিভিন্ন মালামাল। তারা সর্বস্ব হারিয়ে নিঃস্ব হওয়াসহ আহত হয়েছেন অনেকে। চন্দ্রা ত্রিমোড়ে দুটি পুলিশ বক্সের মাত্র এক থেকে ১৫০ মিটার দুরেই চন্দ্রা বন অফিসের সামনে গাজীপুর থেকে টাঙ্গাইলগামী ও গাজীপুর থেকে সাভার-ঢাকাগামী যাত্রীবাহী বাসস্টেশন। সেখানে সন্ধ্যা নামনেই শুরু হয় চুরি ছিনতাইসহ বিভিন্ন অপরাধ, এসব অপরাধ গভীর রাত থেকে ভোররাত পর্যন্ত চলে থাকে। আর পরিবহন শ্রমিকদের সুবিধার্থে ও চুরি-ছিনতাইয়ের ঝুঁকি এড়াতে সপ্তাহখানেক আগে ডিভাইডার কেটে ফ্লাইওভারের উপরেই অবৈধভাবে বাসস্টেশন তৈরি করা হয়েছে। সেখানে হুট করে যাত্রীবাহী বাস থামিয়ে যাত্রী নামানো হচ্ছে। আর কাটা ডিভাইডার দিয়েই জীবনের ঝুঁকি নিয়ে চলছে মানুষ। এতে পেছনের যানবাহনগলোর গতি কমে যাচ্ছে। অনেক সময় দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যদের সামনে ফ্লাইওভারের ওপর এমন অবৈধ বাসস্টেশনে নিয়মিত বাস থামলেও তারা যেন পুরোপুরি রয়েছেন নিরব ভুমিকায়। ফলে সেখানে বাড়ছে দুর্ঘটনার ঝুঁকি। স্থানীয়দের অভিযোগ, পরিবহন শ্রমিকদের সুবিধার জন্য পুলিশসহ সড়ক সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে যোগসাজসে করে ফ্লাইওভারের ওখানে ডিভাইডার কাটা হয়েছে। এছাড়াও দুটি পুলিশ বক্সের পাশে নিয়মিত চুরি ছিনতাই ঝুঁকি থাকায় ওই কাটা ডিভাইডার দিয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়েই লোকজন চলাচল করছেন বলেও স্থায়ীদের অভিযোগ। তবে ফ্লাইওভারের ওপরে বাসস্টেশনের বিষয়ে মুখ খুলতে নারাজ পরিবহন শ্রমিকরা।
ঝুঁকি নিয়ে চলাচলরত নাজমুল হাসান বলেন, আগে চন্দ্রা বনবিভাগের অফিসের পাশে বাস থামিয়ে আমাদের নামানো হতো। কিন্তু এখন বাস চালকরা ফ্লাইওভারের ওপরে নামিয়ে দিলে ওই কাটা ডিভাইডার দিয়ে পারাপার হচ্ছি। আরিফ হোসেন নামে অন্য এক ব্যক্তি বলেন, আমাদের কি করার আছে। বাস চালকরা আমাদের ফ্লাইওভারের ওপরে নামিয়ে দিচ্ছে, তাই আমরাও বাধ্য হয়েই এখান দিয়ে যাচ্ছি। পাশের দোকানদার মোস্তফা কামাল বলেন, ডিভাইডার কারা কেটেছেন তা জানি না। কিন্তু আগে যেখানে বাস থামতো সেখানে প্রায় নিয়মিত চুরি ছিনতাই হয়। হয়তো এ কারণেই ওই ডিভাইডার কাটা হয়েছে। এর চেয়ে বেশি কিছু বলতে পারছি না। গাজীপুর সড়ক বিভাগের সাব ডিবিশনাল ইঞ্জিনিয়ার আনোয়ার হোসেন জানান, মহাসড়কের ডিভাইডার কেটে ফেলার বিষয়টি আমার জানা নেই। তবে সেখানে আমাদের লোক পাঠিয়ে বিষয়টি খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।