গল আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামের পিচ বরাবরই রানপ্রসবা। এটি বোলারদের জন্য ‘বধ্যভূমি’ হলেও ব্যাটারদের কাছে স্বর্গরাজ্য হিসেবেই পরিচিত। গল টেস্টের প্রথম ও দ্বিতীয় দিনে সেই প্রমাণ দিয়েছেন বাংলাদেশের ব্যাটাররা। বিশেষ করে মুশফিকুর রহিম, নাজমুল হোসেন শান্ত এবং লিটন দাস ব্যাট করেছেন হাত খুলেই। তাতে বড় সংগ্রহই পেয়েছে টাইগাররা। অবশ্য ৫০০ ছুঁই ছুঁই রান করেও স্বস্তিতে নেই লাল সবুজের প্রতিনিধিরা। নিজেদের মাঠে ব্যাট হাতে সফরকারীদের পাল্টা জবাব দিচ্ছে স্বাগতিকরা। রক্ষণাত্মক আর আক্রমণাত্মক ক্রিকেটের পার্থক্যটাই এমন। দলের মানসিকতা বুঝিয়ে দেয়। লঙ্কানদের মানসিকতাই তেমন ছিল। তাই আক্রমণাত্মক খেলে দ্রুত রান তুলেছেন ব্যাটাররা। সেই লক্ষ্যে সফল হয়ে এখন বাংলাদেশকে লিডের চ্যালেঞ্জে ফেলতে যাচ্ছে শ্রীলঙ্কা।
টেস্টে ভালো করার তাড়নায় প্রায় দুই দিন ক্রিজে কাটিয়ে দিয়েছিলেন বাংলাদেশ ব্যাটাররা। দেড়শ ওভারের মতো খেলে বোর্ডে রান জমা হয়েছে ৪৯৫। রান তোলার গতি ওভারপ্রতি মাত্র ৩.২২। অথচ শ্রীলঙ্কা গল টেস্টের তৃতীয় দিন ৯৩ ওভার ব্যাট করেই তুলে নিয়েছে ৪ উইকেটে ৩৬৮ রান। ওভারপ্রতি রান এসেছে ৩.৯৫ করে। প্রথম ইনিংসে বাংলাদেশের করা সংগ্রহের চেয়ে ১২৭ রান দূরে স্বাগতিকরা। কামিন্দু মেন্ডিস ৩৭ ও ধনঞ্জয়া ডি সিলভা অপরাজিত আছেন ১৭ রানে। এক প্রান্তে উইকেট পেলেও দারুণ ব্যাটিংয়ে অপর প্রান্ত আগলে রেখেছিলেন পাথুম নিসাঙ্কা। তিন অঙ্ক ছোঁয়ার পর প্রায় পেয়ে যাচ্ছিলেন ডাবল সেঞ্চুরিও। তাতে দুশ্চিন্তার ভাঁজ ক্রমেই বড় হচ্ছিল টাইগারদের। তবে অবশেষে নতুন বল নিয়ে তাকে ফিরিয়েছেন পেসার হাসান মাহমুদ। কিন্তু তারপরও স্বস্তিতে নেই বাংলাদেশ। নিসাঙ্কাকে ফেরালেও বাংলাদেশের জন্য বর্তমান দুশ্চিন্তা কামিন্দু মেন্ডিস। দুই দলের সবশেষ সিরিজে এই কামিন্দুই ঘরের মাঠে বাংলাদেশকে নাস্তানুবাদ করে ছেড়েছেন। উইকেটে সেট হয়ে এই ব্যাটার আছেন ৩৭ রানে। তার সঙ্গে টিকে গেছেন অধিনায়ক ধনাঞ্জয়া ডি সিলভাও। ব্যাটিং করছেন ১৭ রানে। এরমধ্যেই তাদের জুটি ছাড়িয়েছে ৩৭ রানে।
মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়ানো নিসাঙ্কাকে দ্বিতীয় নতুন বল নিয়ে ফেরায় বাংলাদেশ। নতুন বল হাতে নিয়ে প্রথম ওভারেই সাফল্য পান হাসান মাহমুদ। তার স্টাম্পে রাখা বল কিছুটা দেরিতে শট নিতে গিয়ে বোল্ড হয়ে যান নিসাঙ্কা। তবে আউট হওয়ার আগে খেলেন ১৮৭ রানের ইনিংস। যা সাজিয়েছেন ২৫৬ বলে ২৩টি চার ও ১টি ছক্কায়।
লঙ্কানদের দ্রুত রান তোলায় ম্যাচও জমে উঠেছে। চতুর্থ দিন সকাল থেকে বাংলাদেশ বোলাররা নির্বিষ থাকলে শ্রীলঙ্কার লিড নেওয়া খুব কঠিন কিছু না। দ্বিতীয় সেশন থেকেই দ্রুত খেলে বাংলাদেশকে ২০০ বা আড়াইশ’-এর মতো লিড দিতে চাইবে স্বাগতিকরা। এরপর চতুর্থ দিন শেষের কিছু ওভার আর পঞ্চম দিনের উইকেটে বাংলাদেশ ব্যাটারদের টেস্ট বাঁচানোর পরীক্ষায় ফেলবে শ্রীলঙ্কা। বাংলাদেশের সামনে এই পরীক্ষা পাশ কাটানোর একটাই উপায়। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে প্রথম ইনিংসের লিড নিতে হবে। তা না হলেও ৫০০-এর বেশি রান নিতে দেওয়া যাবে না। তবেই বাংলাদেশ ম্যাচে থাকবে ভালোভাবে। দ্বিতীয় ইনিংসে ২০০-আড়াইশ’ রান করলেও শেষদিন গলের পিচে লঙ্কান ব্যাটারদের ভালো চ্যালেঞ্জ দিতে পারবে বাংলাদেশ।
এর আগে সকালে বাংলাদেশকে অলআউট করার পর এদিন নতুন ওপেনিং জুটি নামায় লঙ্কানরা। প্রায় সাড়ে ২৯ বছর পর এদিন শ্রীলঙ্কার ইনিংস উদ্বোধন করতে নামেন দুই ডানহাতি ব্যাটার পাথুম নিসাঙ্কা ও অভিষিক্ত লাহিরু উদারা। সবশেষ লঙ্কান দলে এমনটা দেখেছিল ১৯৯৫ সালে। সেবার অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে দলের গোড়াপত্তন করেছিলেন দুই ডানহাতি ব্যাটার ছিলেন রোশান মহানামা ও চান্দিকা হাথুরুসিংহে।
নতুন ওপেনিং জুটি শুরুটাও ভালো করে। ৪৭ রানের জুটির পর তা ভাঙেন তাইজুল ইসলাম। লেগ-মিডল স্টাম্পে রাখা দারুণ এক ফ্লাইটেড ডেলিভারিতে অভিষিক্ত উদারাকে ফেরান তাইজুল ইসলাম। লেগে ঘুরাতে চেয়ে বোলারের হাতে ফিরতি ক্যাচ দিয়ে ফেরেন ৩৪ বলে ছয়টি চারে ২৯ রান করা উদারা। এরপর দীনেশ চান্দিমালকে নিয়ে বাংলাদেশের হতাশা বাড়াতে থাকেন নিসাঙ্কা। শেষ পর্যন্ত চান্দিমালকে ফিরিয়ে এই জুটি ভাঙেন নাঈম হাসান। তার লেগ স্টাম্পের বাইরে বলে পা বাড়িয়ে ডিফেন্স করতে গেলে চান্দিমালে ব?্যাটের কানা ছুঁয়ে লেগ স্লিপে ক্যাচ চলে যায় সাদমান ইসলামের হাতে। তাতে ভাঙে ১৫৭ রানের জুটি। এরপর উইকেটে আসেন ক্যারিয়ারের শেষ টেস্ট খেলতে নামা অ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউস। তাকে গার্ড অব অনার দেন বাংলাদেশের ক্রিকেটার ও আম্পায়াররা।
খেলছিলেনও দারুণ। তবে পার্ট-টাইম স্পিনার মুমিনুল হকের বাড়তি বাউন্সের বল ম?্যাথিউসের ব?্যাটের কানা ছুঁয়ে চলে যায় লিটন দাসের গ্লাভসে। ৬৯ বলে ৩টি চার ও ১টি ছক্কায় ৩৯ রান করেন ম্যাথিউস। সকালে আগের দিনের ৯ উইকেটে ৪৮৪ রান নিয়ে ব্যাটিংয়ে নামে বাংলাদেশ। এদিন টিকতে পেরেছে শুধু ১৬ বল। তাতে আর ১১ রান যোগ করতে পারে টাইগাররা। নাহিদ রানাকে ফিরিয়ে বাংলাদেশের প্রথম ইনিংস গুটিয়ে দেন।