বগুড়ার সারিয়াকান্দি ও ধুনট উপজেলার চরাঞ্চলে যাতায়াত ও মালামাল পরিবহনের অন্যতম মাধ্যম হয়ে উঠেছে টাট্টু ঘোড়ার গাড়ি। বিশেষত শুকনো মৌসুমে যমুনার চরাঞ্চলে ধু ধু বালুর মধ্যে চলাচলের উপযোগী এই বাহন কৃষকদের জন্য বেশ সহায়ক হয়ে উঠেছে। কৃষিপণ্য পরিবহন সহজ ও সাশ্রয়ী হওয়ায় এটি চরাঞ্চলের মানুষের জীবনযাত্রায় ইতিবাচক পরিবর্তন এনেছে। জানা গেছে, একসময় চরাঞ্চলের মানুষের বর্ষাকালে নৌকা ও শুকনো মৌসুমে হাঁটা ছাড়া বিকল্প কোনো বাহন ছিল না। ফলে কৃষকদের উৎপাদিত ফসল বাজারে নিতে কষ্ট হতো, যা ন্যায্য মূল্যে বিক্রির ক্ষেত্রে বড় বাধা হয়ে দাঁড়াত। তবে ঘোড়ার গাড়ির জনপ্রিয়তা বেড়ে যাওয়ায় কৃষকরা সহজেই ফসল বাজারজাত করতে পারছেন, যা গ্রামীণ অর্থনীতিতেও ইতিবাচক প্রভাব ফেলছে।
স্থানীয় কৃষক ও চালকদের মতে, এই বাহন কম খরচে চালানো সম্ভব হওয়ায় যাত্রী ও পরিবহন দুটোর ক্ষেত্রেই এটি কার্যকর। প্রতিটি গাড়িতে ১৬ থেকে ২০ মণ কৃষিপণ্য বহন করা যায়, আর পাকা সড়কে ৩০ মণ পর্যন্ত মালামাল টানা সম্ভব। ফলে কৃষকেরা আগের তুলনায় কম খরচে তাদের উৎপাদিত পণ্য বাজারে নিতে পারছেন। গ্রামের টাট্টু ঘোড়া গাড়ির চালক রশীদ জানান, এ সব ছোট আকারের ঘোড়া খুব কষ্ট সহিষ্ণু এবং ভার বহনে দক্ষ। বালুর মধ্যে চলাচলের বিশেষ দক্ষতার কারণে চরাঞ্চলে এগুলোর কদর বেশি। স্থানীয় চালকদের মতে, দিনাজপুর, কুড়িগ্রাম ও টাঙ্গাইলের হাট থেকে এই ঘোড়া সংগ্রহ করা হয়। রশীদ বলেন, প্রতিদিন ৫০০-১০০০ টাকা আয় হয়। তবে বর্ষায় আয় কমে যায়, কারণ তখন সবাই নৌকা ব্যবহার করে। স্থানীয়দের মতে, সরকার যদি এই বাহনের উন্নয়নে সহায়তা করে, তাহলে এটি আরও মানুষের জন্য উপকার বয়ে আনতে পারে। বিশেষ করে ঘোড়ার খাদ্য, চিকিৎসা ও ঘোড়ার গাড়ির রক্ষণাবেক্ষণে কিছু সুযোগ-সুবিধা দিলে চরাঞ্চলের পরিবহন ব্যবস্থা আরও উন্নত হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। যমুনা নদীর চরাঞ্চলে মানুষের যাতায়াত ও কৃষি পণ্য পরিবহনের এই নতুন মাধ্যম স্থানীয় অর্থনীতিতে ইতিবাচক পরিবর্তন এনেছে।