ঢাকা মঙ্গলবার, ২৪ জুন ২০২৫, ১০ আষাঢ় ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

আশার ফসল, হতাশার বাজার

আশার ফসল, হতাশার বাজার

লক্ষ্মীপুরের রায়পুর উপজেলায় এবারের বোরো মৌসুমে ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। মাঠভরা সোনালি ধান কেটে ঘরে তুলেছেন কৃষকরা, কিন্তু ফসলের ন্যায্য মূল্য না পেয়ে এখন তারা গভীর হতাশায়। উৎপাদন খরচ তো উঠছেই না, বরং অধিকাংশ কৃষক পড়েছেন লোকসানে। অনেকে ভাবছেন, এই ধানচাষই তাদের শেষ ধানচাষ। রায়পুরের দক্ষিণ চরআবাবিল, চরপাতা ও উত্তর চরবংশীসহ বিভিন্ন ইউনিয়ন ঘুরে দেখা গেছে, অনুকূল আবহাওয়ায় এবারে জমিতে ভালো ফলন হয়েছে। কিন্তু স্থানীয় বাজারে ধানের দাম এতটাই কম যে উৎপাদিত ফসল কৃষকের মুখে হাসি আনতে পারছে না। বর্তমানে স্থানীয় হাটে প্রতি মণ ধান বিক্রি হচ্ছে ৮০০ থেকে ৮৫০ টাকায়। অথচ কৃষকদের দাবি, প্রতি মণ ধান উৎপাদনে খরচ হয়েছে ১,১০০ থেকে ১,২০০ টাকা। বিঘাপ্রতি ১৫-১৬ হাজার টাকা খরচ করেও তারা পাচ্ছেন না এমনকি মূলধনও। দক্ষিণ চর আবাবিলের কৃষক আবদুর রশিদ বলেন, ‘এই মৌসুমে ৩ বিঘা জমিতে ধান করেছি। ফলন ভালো হলেও বাজারে ধানের দাম শুনে মাথা ঘুরে গেল। প্রতি মণ ধানে প্রায় ৩০০ টাকার বেশি লোকসান।’ একই হতাশা চরপাতা ইউনিয়নের রমজান আলীর কণ্ঠেও। ‘সরকার কাগজে কলমে দাম ঠিক করলেও বাস্তবে কৃষক তা পায় না। সরকারি ক্রয়কেন্দ্র শুধু নামেই আছে, সাধারণ কৃষকের ধান সেখানে পৌঁছায় না। কিছু দালাল আর বড় ব্যবসায়ীরাই লাভ পায়,’ বলেন তিনি। উপজেলার বিভিন্ন কৃষকের অভিযোগ, সরকারি ধান ক্রয়কেন্দ্রগুলোর কার্যক্রম সাধারণ কৃষকদের কাছে একরকম অপ্রাপ্য। স্থানীয় কিছু দালালের মাধ্যমেই মূলত ধান কেনাবেচা হয়, ফলে প্রকৃত কৃষকরা ওই সুবিধা পান না। খোলা বাজারে বিক্রি করেই চরম ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন তারা। রায়পুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মাজেদুল ইসলাম অবশ্য বলছেন, ‘সরকার নির্ধারিত দামে (প্রতি মণ ১,৪৪০ টাকা) কৃষকদের কাছ থেকে ধান কেনার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। মাঠপর্যায়ে নজরদারি বাড়ানো হয়েছে, সিন্ডিকেট রোধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।’ তবে কৃষক নেতারা মনে করেন, কেবল ঘোষণা দিয়ে লাভ হবে না। স্থানীয় পর্যায়ে তালিকাভুক্ত কৃষকদের কাছ থেকে সরাসরি ধান কেনার বাস্তবমুখী ব্যবস্থা গ্রহণ না করলে কৃষকদের সমস্যা দূর হবে না। উত্তর চরবংশী এলাকার কৃষক কামাল হোসেন জানান, ‘ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে চাষ করেছি। জমি ভাড়া, সেচ, সার, কীটনাশক, শ্রমিক সব খাতে প্রচুর খরচ হয়েছে। এখন যদি ধানের দাম না পাই, সংসার চালানোই অসম্ভব হয়ে যাবে।’ আরেক কৃষক হারুন অর রশিদ বলেন, ‘প্রতি বছর লোকসান হলে আর কৃষিকাজ করার মানে কী? অনেকে ভাবছে, এবারই শেষ ধানচাষ। সামনে অন্য কিছু করতে হবে।’ রায়পুর বাজার, রাখালিয়া বাজার ও বামনী বাজারে ঘুরে দেখা গেছে, এক শ্রেণির ব্যবসায়ী কৃষকদের কাছ থেকে কম দামে ধান কিনে বড় আকারে মজুত করছেন। পরে ওই ধান ভালো দামে বিক্রি হয় মিল মালিকদের কাছে। এতে কৃষক ঠকেন, লাভবান হন মধ্যস্বত্বভোগীরা। স্থানীয় নাগরিক মো. সুমন বলেন, ‘সিন্ডিকেটের দাপট এখন ওপেন সিক্রেট। কৃষক যে দামে ধান বিক্রি করেন, পরবর্তীতে সেই ধান দ্বিগুণ দামে বিক্রি হয়। এই ব্যবস্থায় শুধু কৃষকই ক্ষতিগ্রস্ত হন।’

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত