ঢাকা শুক্রবার, ২০ জুন ২০২৫, ৬ আষাঢ় ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

কেশবপুরে মৎস্যঘেরের বাঁধ হিসেবে সরকারি রাস্তা ব্যবহার

হুমকিতে শতাধিক পাকা সড়ক
কেশবপুরে মৎস্যঘেরের বাঁধ হিসেবে সরকারি রাস্তা ব্যবহার

সরকারি রাস্তা ঘেরের ভেড়ি/বাঁধ হিসেবে ব্যবহারসহ পানি নিষ্কাশন পথ বন্ধ করে যশোরের কেশবপুরে প্রভাবশালী মৎস্য ঘের ব্যবসায়ীরা সাড়ে ৪ হাজার মাছের ঘের গড়ে তুলেছেন। এতে একদিকে যেমন জলাবদ্ধতার কারণে বিলে কোনো ফসল আবাদ হচ্ছে না, অন্যদিকে শত শত হতদরিদ্র মৎস্যজীবী পরিবার বিলে মাছ শিকার করতে ব্যর্থ হয়ে মানবেতর জীবনযাপণ করছেন। অপরিকল্পিতভাবে ঘেরের ভেড়ি করার কারণে হুমকিতে পড়েছে শতাধিক গ্রামীণ সড়ক। যুগ যুগ ধরে ঘের ব্যবসায়ীরা রাস্তাকে ঘেরের বাঁধ হিসেবে ব্যবহার করছে।

কেশবপুর পৌরসভাসহ ১১টি ইউনিয়নে ৪ হাজার ৬৫৮টি মাছে ঘের রয়েছে। এরমধ্যে বলদালি, টেপুর বিল, বিল গরালিয়া, পদ্মবিল, ঘোচমারার বিল, কাদার বিল, হাজোয়ার বিল, বিল খুকশিয়া, বিষ্ণুপুর বিল, বাগমারার বিল, কালিচরণপুর বিল, নারায়নপুর, কাকবাধাল, ময়নাপুর বিল উল্লেখযোগ্য। আশির দশকে এসব বিলে মাছ শিকার করে জীবিকা নির্বাহ করতো এলাকার হাজারও জেলে সম্প্রদায়। এছাড়া বিলের পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা থাকায় ধান, পাট, কলাই, মশুড়ি, শাকসবজিসহ বিলে বিভিন্ন ধরনের ফসল আবাদ হতো। নব্বইয়ের দশকে এসব বিল, খাল, নদ-নদী অববাহিকার জমি দখল করে সমাজের কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তি মাছ চাষ শুরু করেন। ঘের ব্যবসায়ীরা গ্রামীণ প্রধান সড়কগুলো ঘেরের ভেড়ি/বাঁধ হিসেবে ব্যবহার করে মাছ চাষ শুরু করেন। ফলে বিলের ওপর নির্ভরশীল হাজারও জেলে সম্প্রদায় ও হতদরিদ্র মানুষ মাছ শিকার করতে ব্যর্থ হয়ে বাধ্য হয় অন্যপথ বেছে নিতে। ঘের মালিকরা সরকারি খালের পানি নিষ্কাশন পথে ব্যক্তিগতভাবে পাকা কালর্ভাট নির্মাণ করে পানি নিষ্কাশন পথ বন্ধ করার পাশাপাশি খালের মুখে পানি উন্নয়ন বোর্ড পোল্ডার নির্মাণ করায় উপজেলা ব্যাপী দেখা দেয় স্থায়ী জলাবদ্ধতা। বন্ধ হয়ে যায় বিলে কৃষকের স্বপ্নের ফসল আবাদ।

জলাবদ্ধতার কবল থেকে মুক্তি পেতে ২০০০ সালের দিকে এসব বিলের ওপর নির্ভরশীল হাজার হাজার কৃষক ঘের মালিকদের কাছ থেকে বিল উদ্ধারে আন্দোলন-সংগ্রাম করে আসছেন। যা আজও অব্যাহত আছে।

কিন্তু ঘের মালিকরা ধনাঢ্য হওয়ায় প্রশাসন ও পুলিশকে ম্যানেজ করে কৃষকদের দাবিয়ে রাখা হয়। ঘের মালিকরা সরকারি খাল, পাকা সড়ক, গ্রামীণ শত শত পাকা ও ইটের সোলিং সড়ক ঘেরের ভেড়ি/বাঁধ হিসেবে ব্যবহার করায় হুমকির মুখে পড়েছে এসব সড়ক। এরমধ্যে যশোর-সাতক্ষীরা মহাসড়ক, কেশবপুর-পাঁজিয়া সড়ক, কেশবপুর ভেরচি সড়ক, কেশবপুর ভান্ডারখোলা সড়ক, কলাগাছি-চুকনগর সড়ক, মঙ্গলকোট-হিজলডাঙ্গা সড়ক, ভান্ডারখোলা ভায়া আঠারো মাইল সড়ক, পরচক্রা সড়কসহ হাজারও গ্রামীণ ইটের সোলিং সড়ক ঘেরে ধসে বিলীন হয়ে গেছে। এসব সড়ক দিয়ে সাধারণ মানুষ, হাটুরেসহ ছোট-বড় যানবাহন চলাচলে সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।

এছাড়া, ঘের মালিকরা সরকারি খালের পানি নিষ্কাশন পথে ব্যক্তিগতভাবে পাকা কালর্ভাট দিয়ে পানি নিষ্কাশন পথ বন্ধ করায় উপজেলার বাগডাঙ্গা, মনোহরনগর, কালিচরণপুর গ্রামসহ ৮ থেকে ৯টি গ্রামের শত শত পরিবার বছরের অধিকাংশ সময় পানিবন্ধি জীবনযাপণ করে থাকে। কলাগাছি-চুকনগর সড়কের পাশে সরকারি রাস্তা মাছের ঘেরের বাঁধ হিসেবে ব্যবহার করতে দেখা যায়।

উপজেলা প্রকৌশলী নাজিমুল হক বলেন, ঘের মালিকরা সড়ক অবৈধভাবে বাঁধ হিসেবে ব্যবহার করে মাছ চাষ করার ফলে সড়কের পাশের ঢাল, সোল্ডারসহ পিচের রাস্তা ভেঙে গেছে। সরকারি বিধি অনুযায়ী সড়ক থেকে ৬ ফুট দূরত্বে পৃথক ভেড়ি/বাঁধ নির্মাণ করে মাছ চাষের বিধান রয়েছে। ঘের মালিকরা তা অমান্য করে সড়কের ব্যাপক ক্ষতিসাধন করে চলেছে। এসব সড়কের দু’পাশে ঢাল না থাকায় ঠিকাদারও কাজ করতে চায় না। উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা সুদীপ বিশ্বাস বলেন, এ উপজেলায় ৪ হাজার ৬৫৮টি মাছের ঘের রয়েছে। যার মধ্যে সাড়ে ৭ হাজার হেক্টর জলাকার। এরমধ্যে ১৫০০ ঘের ১২ মাসের। ঘের মালিকরা ২১টি সরকারি খাল দখল করে মাছ চাষ করছেন। অপরিকল্পিত ঘেরের জন্যে একদিকে যেমন জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হচ্ছে, অন্যদিকে তেমনি স্রোত সৃষ্টির অভাবে নদীগুলো মরে যাচ্ছে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রেকসোনা খাতুন বলেন, এরইমধ্যে, সরকারি রাস্তা ঘেরের ভেড়ি হিসেবে ব্যবহার করার অপরাধে মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে প্রায় ৩ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। এ অভিযান অব্যহত থাকবে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত