ফেনী-দরবেশেরহাট, ফেনী-সোনাইমুড়ি বিকল্প মহাসড়কের ফেনীর অংশে তেমুহানী হয়ে দাগনভূঞা, নোয়াখালী, সেনবাগ ও সোনাইমুড়ি এবং কুমিল্লার দাউদকান্দির গৌরিপুরে গিয়ে মিলিত হয়েছে। ভারী যানবাহন চলাচলের কারণে বর্তমানে ফেনী সোনাইমুড়ি বিকল্প মহাসড়ক চলাচলের অনুপোযোগী হয়ে পড়ায় জনদুর্ভোগ এখন চরমে। ফেনী মাইজদী আন্তঃসড়কের তেমুহানী থেকে দাগনভূঞার রাজাপুর ইউনিয়নের ছোট ফেনী নদী কূলঘেঁষা গনিপুর হতে রাজাপুর স্কুল অ্যান্ড কলেজের পূর্বপাশ অর্থাৎ বানাপুকুরের পশ্চিমপাশ পর্যন্ত গর্তসহ ভাঙ্গাচুরা বিধায় যানবাহন চলাচল কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে। সিন্দুরপুর ইউনিয়নের অলাতলী বাজার ও মাছিমপুরের ঈদগাহ এবং কোরবানপুর রাস্তার মাথা পর্যন্ত সড়কটিতে চলাচলে কোমরভাঙা অবস্থা। ২০২৪ সালে ভারতের ত্রিপুরার ডোম্বু সুইসগেট খুলে দেওয়ায় ফেনী ভয়াবহ বন্যার ছোবলে এ সড়কটি তলিয়ে যায়। যার ফলে সড়কটি ক্ষত বিক্ষত হওয়ায় সম্পূর্ণ আপদ মাথায় নিয়ে প্রায় পাঁচ লাখ যাত্রী এ সড়ক দিয়ে চলাচল। এ বছরের জানুয়ারি মাসে ফেনী অংশের সড়কের কিছু জায়গায় সংস্কার কাজ করা হয়। কিন্তু সড়কটির রাজাপুর কলেজের পূর্ব পাশ থেকে শরীফপুর রাস্তার মাথা পর্যন্ত বাজেট না হওয়ায় সংস্কার কাজ হয়নি। বর্তমানে ওই অংশে বড় বড় গর্ত সৃষ্টি হয়ে যান চলাচল অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। বাধ্য হয়ে চালকেরা গাড়ি নিয়ে গেলে রাস্তায় বিকল হয়ে পড়ছে অধিকাংশ যান। হাসান নামে এক গাড়ি চালক ক্ষোভের সাথে বলেন, মনে হয় যেন সড়কটির কোন অভিভাবক নাই। আমরা বাধ্য হয়ে গাড়ি চালাচ্ছি। অনেক সময় রাস্তার কারণে যানবাহন নষ্ট হয়ে অর্থ খরচের পাশাপাশি বেকার থাকতে হয়।
সংস্কারের তিন মাসের মাথায় অধিকাংশ জায়গায় টপ লেয়ার উঠে গিয়ে ইট দেখা যাচ্ছে। এ সড়কে চলাচলকারী যাত্রীরা শহর বন্দরে প্রতিনিয়ত নিরাপদে আসা-যাওয়ায় এখন মহাচিন্তিত এবং আতঙ্কিত।
ফেনীর পশ্চিমাঞ্চলের পাঁচ লাখ লোকের যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম ফেনী সোনাইমুড়ী সড়ক তথা বিকল্প বিশ্ব রোড। প্রতিদিন ভারি, মাঝারি ও হালকা ৩ হাজার অধিক যানবাহন এ বিকল্প বিশ্বরোড দিয়ে চলাচল করে। বর্তমানে সড়কটি খানাখন্দক ও কার্পেটিং উঠে যাওয়ার কারণে ফেনীর পশ্চিমাঞ্চলবাসী এই জনপদে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে। রাস্তার খানা খন্দকের কারণে দুর্ঘটনা ঘটছে অহরহ। ফেনীর তেমুহানী হতে বিরলী, রাজাপুর, সিন্দুরপুর, অলাতলী, দরবেশেরহাট, গাজিরহাট ও কানকিরহাট পর্যন্ত জনসাধারণের একমাত্র চলাচলের সড়ক এই রাস্তাটি।
তিনটি জেলার সড়ক ও জনপদ বিভাগের তত্ত্বাবধানে এই সড়কটি বিকল্প বিশ্ব রোড হিসাবে অনুমোদিত। ফেনীর তেমুহানী হতে কুমিল্লার গৌরিপুর পর্যন্ত ৭০ কিমি. রাস্তাটি অত্যন্ত জনগুরুত্বপূর্ণ রাস্তা হিসেবে স্বীকৃত। প্রতিনিয়ত হাজার হাজার যাত্রী জীবনের ঝুঁকি নিয়ে প্রয়োজনের তাগিদে এ রাস্তা দিয়ে চলাফেরা করছে। সড়কটি ফেনী পশ্চিমাঞ্চলবাসীর থানা, জেলা সদর ও শহর বন্দর নগরে যাওয়ার একমাত্র চলাচলের ভরসা বিধায় দীর্ঘদিনের জনগনের দুর্দশায় এই সড়কটি তেমুহানী হইতে বিরলী, রাজাপুর, সিন্দুরপুর, দরবেশেরহাট, গাজিরহাট, কানকিরহাট, সোনাইমুড়ী হয়ে গৌরিপুরের সঙ্গে মিশেছে। সরকার সড়কটিকে বিকল্প বিশ্বরোড হিসাবে ঘোষণা দিলেও নোয়াখালীর সীমানা পর্যন্ত কিয়দংশ বর্ধিত আকারে প্রশস্তের কাজ হয়েছে। ফেনী সোনাইমুড়ী রাস্তাটির লাগ দাগনভূঞার গনিপুর গ্রামের অংশে ছোট ফেনী নদী। রাস্তার এমন বিপজ্জনক অবস্থা যেকোনো সময়ে বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। কোনো মরনাপন্ন রোগী যদি চিকিৎসার জন্য শহরে হাসপাতাল বা বিশেষজ্ঞের নিকট নিতে হয় রাস্তায় রোগের কারণে রোগী পথে মৃত্যুবরণ করেছে এমন নজিরও আছে। ১৯৮৯ সন হতে এপর্যন্ত অনেক যাত্রীর দুর্ঘটনার শিকার হয়ে মারা গেছে পঙ্গুত্ব¡ বরন করেছে।
পরিবহন সমিতি সূত্র জানায়, এরাস্তা দিয়ে প্রতিদিন ৩ হাজার অধিক ছোট মাঝারী ও ভারী যানবাহন চলাচল করে। ঢাকা চট্টগ্রাম মহাসড়ক নিয়ে সরকার যতটুকু অগ্রাধিকার প্রকল্পে হাজার হাজার কোটি টাকা ব্যয় করে যে সুফলের আশা করছে। তার চাইতে ফেনী সোনাইমুড়ি বিকল্প বিশ্বরোড নিয়ে অগ্রাধিকার প্রকল্প হিসেবে চিহিৃত করলে যানজটমুক্ত, দূরত্ব হ্রাসসহ আরামদায়ক ভ্রমণে নিশ্চয়তা বেশি পাওয়া যেত বলে বিশেষজ্ঞরা মতামত ব্যক্ত করেছেন। কেন জানি এক অজ্ঞাত কারণে যৌক্তিক জনস্বার্থের এ দাবি নিয়ে সংশ্লিষ্ট বিভাগ বেখবরে আছে।
ফেনীস্থ সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী সুনীতি চাকমা এ প্রতিবেদককে জানান, মানুষের দুর্ভোগ কমাতে তাৎক্ষণিক সংস্কারে কিছু কিছু বড় গর্তে ইট বসানো হয়েছে। জনগুরুত্বপূর্ণ সড়কটির বিষয়ে তিনি অগ্রাধিকার দিয়ে সমস্যা নিরসনের আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাবেন।