বগুড়ার লাল মরিচের খ্যাতি দেশ জুড়ে। যমুনা নদী বেষ্টিত জেলার সারিয়াকান্দি, সোনাতলা ও ধুনট উপজেলার চরাঞ্চল এখন পাকা মরিচের রঙে লালে লাল। মরিচ তোলায় ব্যস্ত সময় পার করছেন চাষিরা। কোথাও সবুজখেতে লাল মরিচের সমাহার। কোথাও বা পাকা মরিচ শুকানো হচ্ছে রোদে। আবার কেউবা শুকনো মরিচ বিক্রি করতে চরের বালিপথে হেঁটে যাচ্ছেন হাটে। কেউবা আবার ঘোড়ার গাড়িতে করে নিয়ে যাচ্ছেন। মরিচ নিয়ে বিশাল কমর্যঞ্জ চলছে এ অঞ্চলগুলোতে। বগুড়া কৃষি বিভাগ বলছে, জেলায় এবার প্রায় এক হাজার কোটি টাকার মরিচ উৎপাদন হয়েছে। বগুড়া কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, চলতি মৌসুমে জেলায় ৬ হাজার ৪০০ হেক্টর জমিতে মরিচ চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। উৎপাদন হয়েছে ৫ হাজার ৭৩৮ হেক্টর জমিতে। এ অঞ্চলে এবার মরিচের বাম্পার ফলন হয়েছে। প্রায় এক হাজার কোটি টাকার শুকনা মরিচ উৎপাদনের আশা করছেন জেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তারা। বগুড়ায় যে পরিমাণ মরিচ চাষ ও উৎপাদন হয়ে থাকে তার সিংহভাগ যমুনা নদীর চরে। জানা যায়, বগুড়া জেলার সারিয়াকান্দি, সোনাতলা, ধুনট ও গাবতলী উপজেলায় মরিচখেতগুলো এখন লাল মরিচে ভরপুর হয়েছে। গাছে গাছে থোকায় থোকায় লাল মরিচ দুলছে। সারা মাঠজুরে এখন লাল মরিচ তোলার মনোরোম দৃশ্য। লাল মরিচ জমি থেকে কৃষকেরা উত্তোলন করে তা বাছাই করে উঠানে বা ঘরের চালায় শুকাতে ব্যস্ত সময় পার করছেন। কৃষকদের টিনের চালা এবং উঠান এখন লাল মরিচে হাসছে। এছাড়া সারিয়াকান্দির যমুনা গোয়েন বাঁধে লাল মরিচ শুকাতে ব্যস্ত সময় পার করছেন তারা। কেউ আবার লাল মরিচ বাজারে বিক্রিও করেছেন। এ সব লাল মরিচ ক্রয় করে পাইকারি ব্যবসায়ীরা বিভিন্ন কোম্পানিতে সরবরাহ করার জন্য নিজেদের চাতালে শুকাতে দিয়েছেন। এ অঞ্চলের মরিচ শুধু নামে আর গুনেই নয় স্বাদে অতুলনীয়। যে কারণে নামী-দামী বিভিন্ন কোম্পানি বগুড়ার মচির বাজারজাত করছে। পলি পড়া চরে মরিচেই ভাগ্য ফিরেছে মরিচ চাষিদের। আবহাওয়া অনুকূল থাকায় এবার মরিচের ফলন ভাল হয়েছে। আর ভালো দাম পেয়ে খুশি এ অঞ্চলের চাষিরা। বগুড়ার সারিয়াকান্দি উপজেলার শোনপচা চরের বাসিন্দা মরিচ চাষি হযরত আলী জানান, বগুড়ায় সারা বছর মরিচের চাষ হলেও অক্টোবর থেকে মার্চ পর্যন্ত যে মরিচ চাষ হয়ে থাকে তা শুকিয়ে বাছাই করা হয়। বছরের অন্য মাসে যে মরিচ উৎপাদন হয় তা সাধারণত কাঁচা মরিচ হিসেবে বাজারজাত হয়। তাই বর্তমানে ওঠা লাল মরিচে সম্ভাবনার স্বপ্ন দেখছেন যমুনা নদীর চরাঞ্চলের কৃষকরা।
তিনি বলেন, মরিচের জমি থেকে লাল মরিচ উত্তোলন করা শুরু করেছেন। গত বছর মরিচ চাষ করে ভালো লাভ পেয়ে এ বছর তিনি ১৩ বিঘা জমিতে মরিচ চাষ করেছেন। খরচ হয়েছে ৩ লাখ টাকার বেশি। প্রথমের দিকে কাঁচা মরিচের ভালো দাম পাওয়ায় লাভবান হয়েছেন। এখন তিনি লাল মরিচ উত্তোলন করে বাড়িতে শুকিয়ে সংরক্ষণ করছেন। বাজারে এখন শুকনো মরিচ বিক্রি হচ্ছে ৪০০ থেকে সাড়ে ৪০০ টাকা কেজি। বগুড়া কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা ফরিদুর রহমান ফরিদ জানান, চলতি মৌসুমে জেলায় ৬ হাজার ৪০০ হেক্টর জমিতে মরিচ চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। উৎপাদন হয়েছে ৫ হাজার ৭৩৮ হেক্টর জমিতে। জেলায় এবার মরিচের বাম্পার ফলন হয়েছে। প্রায় এক হাজার কোটি টাকার শুকনা মরিচ উৎপাদনের আশা করা হচ্ছে। তিনি বলেন, যমুনা এবং বাঙালি নদী বিধৌত সারিয়াকান্দির মাটি বেলে দোআঁশ। তাই এ মাটিতে প্রাচীনকাল থেকেই মরিচ ভালো উৎপন্ন হয়। সারাদেশের মধ্যে বগুড়া সারিয়াকান্দির মরিচের ভালো সুনাম রয়েছে। কৃষকেরা এখন জমি থেকে লাল মরিচ উত্তোলন করা শুরু করেছেন।