ঢাকা শুক্রবার, ২০ জুন ২০২৫, ৬ আষাঢ় ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

পাবনায় আমন মৌসুমের অভিযানে এক কেজি ধানও সংগ্রহ হয়নি

পাবনায় আমন মৌসুমের অভিযানে এক কেজি ধানও সংগ্রহ হয়নি

পাবনায় আমন মৌসুমে ধান-চাল সংগ্রহ অভিযানের শেষ দিন পর্যন্ত এক কেজি ধানও কিনতে পারেনি জেলা খাদ্য বিভাগ। তবে চাল সংগ্রহে অগ্রগতি হয়েছে। ফলে ধান সংগ্রহের ব্যর্থতা নিয়েই ২৮ ফেব্রুয়ারি এ বছরের আমন মৌসুমের ধান-চাল সংগ্রহ অভিযান শেষ হয়েছে। বাজারে ধানের দাম বেশি থাকায় সরকারি ক্রয়কেন্দ্রে ধান বিক্রিতে কৃষক আগ্রহ দেখাচ্ছেন না বলে খাদ্য বিভাগ দাবি করেছে। পাবনা জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, গত বছরের ১৭ নভেম্বর থেকে চলতি আমন মৌসুমে ধান-চাল সংগ্রহ অভিযান শুরু হয়। অভিযানে জেলার ৯ উপজেলা থেকে ৪ হাজার ৮২৭ টন ধান ও ৮ হাজার ৪৮২ দশমিক ১৩০ টন সিদ্ধ চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ধারা হয়। চাল সংগ্রহের জন্য ১৭৩টি চালকল মালিকের চুক্তি করা হয়। একই সঙ্গে গত বছরের তুলনায় ৩ টাকা দাম বেশি দিয়ে প্রতি কেজি ধানের সরকারি দাম ধরা হয় ৩৩ টাকা এবং প্রতি কেজি চালের দাম ধরা হয় ৪৭ টাকা।

জেলা খাদ্য বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, অভিযান শুরুর পর থেকে শেষ দিন গত ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত এক কেজি ধানও সংগ্রহ হয়নি। তবে চুক্তি থাকায় চালকল মালিকেরা ৫ হাজার ৪৯৯ দশমিক ৯২০ টন চাল সরবরাহ করেছেন। সে অনুযায়ী ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা শূন্য শতাংশ ও চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা প্রায় ৬৫ শতাংশ পূর্ণ হয়েছে। স্থানীয় কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সরকারিভাবে ধান দিতে গেলে আর্দ্রতা, চিটার কথা বলে প্রতি মণে এক-দুই কেজি করে বেশি নেয়াসহ অনেক সময় ধান ফেরতও দেয়া হয় কৃষকদের। তবে স্থানীয় হাট-বাজারে এ সব ঝক্কি-ঝামেলা নেই। এ সব কারণে কৃষকেরা বাজারে বিক্রি করেছেন।

আতাইকুলা এলাকার কৃষক রমজান মোল্লা বলেন, ‘গ্রেডিং, শুষ্কতা, পরিবহন খরচ, মজুরি খরচের হিসাব বিবেচনা করলে বাড়ি থেকে পাইকারের কাছে অথবা পার্শ্ববর্তী বাজারে কাছাকাছি দামে বিক্রি করাই অনেক সুবিধাজনক। সাঁথিয়ার কৃষক আব্দুস সালাম জানান, পাইকারেরা বাড়িতে এসে ধান মেপে কিনে নিয়ে গেছেন। সেই সঙ্গে সাপ্তাহিক হাটেও ধান বিক্রি করেছেন। সরকারি গুদামে ধান সরবরাহ না করে এ পদ্ধতিতেই তারা স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন। আটঘরিয়া উপজেলার কৃষক মোফাজ্জল হোসেন বলেন, সরকারি ক্রয় কেন্দ্রে ধান দিলে তাদের প্রতি মণ ধানে ২০০ থেকে ২৫০ টাকা পর্যন্ত লোকসান হয়। তাই অধিকাংশ কৃষকই পাইকারি বাজারে বিক্রি করেছেন। ঈশ্বরদীর ধান-চাল ব্যবসায়ী মিজান মহলদার বলেন, বর্তমানে মণপ্রতি ১৪শ টাকার বেশিতে ধান বিক্রি হচ্ছে। তারপরও আশানুরূপ ধান মিলছে না পাইকারি বাজার গুলোয়।

ঈশ্বরদীর চালকল মালিক মো. ফজলুর রহমান বলেন, মৌসুমের শুরু থেকে বাজারে ধানের দাম বেশি থাকায় প্রতি কেজি চালের উৎপাদন খরচ ৫০ টাকার বেশি। প্রথম দিকে লোকসান দিয়ে সরকারি ক্রয়কেন্দ্রে চাল বিক্রি করলেও এখন সরকার নির্ধারিত দামে চাল বিক্রি সম্ভব না।’ এ বছর তিনি ১৫ টন চাল সরবরাহের চুক্তি করেছেন। সংগ্রহ অভিযানের শুরুতেই তিনি বেশিরভাগ চাল সরবরাহ করেছেন জানিয়ে আরও বলেন, ‘প্রায় ২০ হাজার টাকা লোকসান দিয়ে চাল সরবরাহ করেছি। ‘আরেকজন চালকল মালিক বলেন, বর্তমানে বাজারে মোটা চাল বিক্রি হচ্ছে প্রায় ৬০ টাকা কেজি দরে। এ অবস্থায় সরকারি দামে চাল কিনতে পারছেন না তার মতো অন্যান্য চালকল মালিকরাও। খাদ্য বিভাগ কর্মকর্তাদের দাবি, বাজারে ধানের দাম বেশি থাকায় কৃষক সরকারি ক্রয়কেন্দ্রে ধান বিক্রিতে আগ্রহ দেখাচ্ছেন না। অন্যদিকে চালের দাম বেশি থাকায় মিল মালিকেরাও ঠিকমতো চাল সরবরাহ করছেন না। এতেই অভিযানে ব্যর্থতা তৈরি হয়েছে।

পাবনা জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক হাসান আল নাঈম বলেন, সরকার নির্ধারিত ধানের সংগ্রহ মূল্য ও বাজারে ধানের দামের খুব বেশি পার্থক্য না থাকায় কৃষকেরা গুদামে ধান দিতে আগ্রহী হননি। সরকারের ধান সংগ্রহের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে, কৃষক যেন ন্যায্যমূল্য পায়। কৃষক যেহেতু বাজারে ভালো দাম পাচ্ছেন, সে কারণে আমাদের সংগ্রহ কম। কৃষকদের ধানের যথাযথ দাম দিতেই সরকার ক্রয়মূল্য নির্ধারণ করেছে। সরকারের মূল উদ্দেশ্য সফল হয়েছে বলে দাবি করেন তিনি।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত