দীর্ঘদিন ধরে অকেজো হয়ে রয়েছে ফেনী পৌরসভার ১৫০টি স্থানে স্থাপিত ২৪০টি সিসি ক্যামেরা। এতে করে অপরাধীরা নির্দ্বিধায় চালিয়ে যাচ্ছে অপরাধ কর্মকাণ্ড। বেড়েছে চুরি, ছিনতাইকারী ও ডাকাতের আতঙ্কে তটস্থ শহরের ব্যবসায়ী ও সাধারণ মানুষ। শহরের অনেক এলাকায় মানুষ সন্ধ্যার পর রাস্তায় চলাচল করতে নিরাপত্তাহীনতায় ভোগছে। সিসি ক্যামেরা না থাকায় পর্যবেক্ষণ করা যাচ্ছে না অপরাধমূলক বিভিন্ন ঘটনার ভিডিও চিত্র। ফলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের চুরি, ছিনতাই ও ডাকাতির ঘটনা তদন্ত এবং অপরাধীকে শনাক্ত করা কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, ২০১৫ সালে ৩৮ লাখ টাকা ব্যয়ে ফেনী পৌর এলাকার বিভিন্ন জায়গায় ২৪০টি সিসি ক্যামেরা বসানো হয়। ইউ-টাচ নামে ফেনীর একটি প্রতিষ্ঠান সিসি ক্যামেরা বসানোর কাজ করেন। প্রথম দুই বছর চলার পর সেগুলো অকেজো হয়ে যায়। পরবর্তীতে ২০২২ সালে ঢাকার গোল্ডেন ট্রেড নামে একটি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে এক কোটি ৫০ লাখ টাকা চুক্তিতে এই ক্যামেরাগুলো পুনরায় স্থাপন করার উদ্যোগ নেন তৎকালীন পুলিশ সুপার ও পৌর মেয়র। অর্ধেক কাজ করার পর মাঝপথে অর্থনৈতিক জটিলতায় সেই প্রকল্প বন্ধ হয়ে যায়। বন্যায় নষ্ট হয়ে গেছে যন্ত্রপাতি ও কন্ট্রোলরুমের সরঞ্জাম। এখন ইউ-টাচ প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে নতুন করে ১৮ লাখ টাকা ব্যয়ে অকেজো সিসি ক্যামেরাগুলো মেরামত করে নতুন করে কাজে লাগাতে কাজ করছে পৌর কর্তৃৃপক্ষ।
জানা যায়, পৌর এলাকার বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে সিসি ক্যামেরা স্থাপনের জন্য ফেনী শহর ব্যবসায়ী সমিতির বিলুপ্ত কমিটির সাধারণ সম্পাদক পারভেজ হাজারীর মাধ্যমে প্রতিটি মার্কেটের মালিক ও ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে প্রায় তিন কোটি টাকা চাঁদা আদায় করা হয়েছিল। বর্তমানে তিনি পলাতক। ফেনী জেলার অপরাধ পরিসংখ্যান সূত্র জানান, ফেনীতে গত জানুয়ারী মাসে চুরি-ডাকাতি, ছিনতাই, নারী নির্যাতন, মাদকদ্রব্যসহ মোট ১৪০টি ও ফেব্রুয়ারি মাসে ১২২টি অপরাধ সংঘঠিত হয়েছে। যা গত বছরে ছিল জানুয়ারীতে ৯৯টি ও ফেব্রুয়ারিতে ১০৭টি অপরাধ।
এই ক্যামেরাগুলোর অকেজো হয়ে যাওয়ায় শুধু আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কার্যক্রমকে ব্যাহত করছে না, বরং অপরাধীদের জন্য নিরাপত্তার একটি শূন্যতা তৈরি করছে। অকেজো ক্যামেরাগুলো দ্রুত মেরামত করা এবং নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণের ব্যবস্থা গ্রহণ করা জরুরি বলে মনে করেন ব্যবসায়ী ও পৌরসভার বাসিন্দারা। এটি না করলে রাস্তায় অপরাধের সঠিক তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করা অসম্ভব হয়ে পড়বে। পাশাপাশি নতুন এবং উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করে সিসিটিভি ব্যবস্থাকে আরও কার্যকর ও শক্তিশালী করতে হবে বলে শহরবাসী মনে করেন। ফেনী শহরের ব্যবসায়ী রেজাউল গনি পলাশ বলেন, সিসি ক্যামেরাগুলো দীর্ঘদিন অকেজো থাকায় শহর এলাকায় চুরি, ডাকাতি, ছিনতাইয়ের মতো অপরাধ কর্মকাণ্ড বাড়ছে। সড়কে সিসি ক্যামেরা না থাকায় অপরাধীরা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিয়ে সহজে পার পেয়ে যাচ্ছে। নিরাপত্তা জোরদার এবং অপরাধ বন্ধে পদক্ষেপ নেয়া জরুরি।
ক্যাব ফেনী জেলা শাখার সভাপতি অ্যাডভোকেট পার্থ পাল চৌধুরী বলেন, সিসিটিভি ক্যামেরা জনগণের মধ্যে নিরাপত্তা বোধ সৃষ্টি করে এবং অনেক সময় অপরাধীদের অপরাধ থেকে বিরত রাখতে প্রভাব ফেলে। ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ এবং দুর্ঘটনা কমানোর ক্ষেত্রেও এর কার্যকারিতা অনেক। তবে সিসিটিভির যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করতে প্রয়োজন সঠিক রক্ষণাবেক্ষণ এবং ডেটা সুরক্ষা। এটি প্রযুক্তির মাধ্যমে আধুনিক নিরাপত্তা ব্যবস্থার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। তাই অকেজো সিসি ক্যামেরা চালু করতে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন।
ফেনী মডেল থানা সূত্র জানায়, অপরাধপ্রবণ এলাকা হিসেবে শহরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানের পাশা-পাশি সহদেবপুর, কালিপাল, রেল গেইট, একাডেমি, বিসিক, রামপুর রাস্তার মোড়, ফলেস্বর এলাকাকে গণ্য করা হচ্ছে। বর্তমানে এমন পরিস্থিতিতে অপরাধ নিয়ন্ত্রণে পুলিশকে বাড়ির মালিকদের লাগানো সিসি ক্যামেরা ও সাধারণ মানুষের ভিডিও করা ছবির ওপর নির্ভর করতে হচ্ছে। ফেনীর পুলিশ সুপার হাবিবুর রহমান বলেন, সিসি ক্যামেরা অপরাধী ধরার জন্য সবচেয়ে বেশি কাজে আসে। ছবি দেখে গ্রেপ্তারের পর অপরাধীর অস্বীকার করার সুযোগ থাকে না। তাতে পুলিশের তদন্ত কাজের অনেক সুবিধা হয়। তাছাড়া অপরাধীর অপরাধও আদালতে সহজে প্রমাণ করা যায়। এখন পুলিশকে নির্ভর করতে হচ্ছে ব্যক্তিগত ক্যামেরার ওপর। অথচ শুধু অপরাধী শনাক্ত কিংবা রহস্য উদঘাটন করার ক্ষেত্রেই নয়, অপরাধ নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রেও সিসি ক্যামেরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
স্থানীয় সরকার বিভাগ ফেনীর উপ-পরিচালক ও ফেনী পৌরসভার প্রশাসক গোলাম মো. বাতেন বলেন, পৌর নাগরিকদের নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে আমরা নতুন করে সিসি ক্যামেরা চালু করার ব্যবস্থা হাতে নিয়েছি। আশা করি শিগগিরই তা কার্যক্রর হবে।