ঢাকা শুক্রবার, ২০ জুন ২০২৫, ৬ আষাঢ় ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

নওগাঁর চামড়া ব্যবসায়ীরা দুশ্চিন্তায়

নওগাঁর চামড়া ব্যবসায়ীরা দুশ্চিন্তায়

কয়েকদিন পরই ঈদুল আজহা। কুরবানির এ ঈদে গবাদিপশুর চামড়া দিয়ে চামড়াজাত পণ্যের চাহিদা পুরণ করা হয়। কিন্তু নওগাঁর চামড়া ব্যবসায়ীরা চামড়া কেনা নিয়ে দুশ্চিন্তায়। চামড়া প্রস্তুতের মূল উপকরণ লবনের দাম বেড়েছে বস্তায় ১৫০-২০০ টাকা বৃদ্ধি এবং ট্যানারি মালিকদের কাছে বিগত ৫ বছরের অন্তত ৫ কোটি টাকা বকেয়া পাওনা রয়েছে ব্যবসায়িরা। নওগাঁ শহরের গোস্তহাটির মোড়ের পাশে চামড়া পট্টি। সারা বছর এ এলাকা শুনশান নিরবতা থাকলেও কুরবানি ঈদে জমজমাট হয়ে উঠে। আর কয়েকদিন পরেই এসব চামড়া আড়তে ব্যবসায়িদের হাকডাকে মুখরিত হয়ে উঠবে। কিন্তু কোররবানি উপলক্ষে চামড়া কেনার প্রস্তুতি এখনও শুরু করেননি ব্যবসায়িরা। গত কয়েক বছর আগেও জেলায় ছোট-বড় মিলিয়ে প্রায় ২৫টি চামড়া গুদাম ছিল। যেখানে সারা বছর প্রায় শতাধিক শ্রমিকদের কর্মসংস্থান হয়েছিল। বর্তমানে রয়েছে ৩টি গুদাম। যেখানে কাজ করেন ৫ জন। তবে কোরবানির মৌসুমি প্রায় এক হাজার শ্রমিক কাজ করেন। এ বছর ৫ টাকা বাড়িয়ে ঢাকায় লবণযুক্ত গরুর চামড়া প্রতি বর্গফুট ৬০ থেকে ৬৫ টাকা এবং ঢাকার বাইরে ৫৫ থেকে ৬০ টাকা দাম নির্ধারণ করেছে সরকার। এছাড়া ২ টাকা বাড়িয়ে সারা দেশে খাসির চামড়া প্রতি বর্গফুট ২২ থেকে ২৭ টাকা এবং বকরির চামড়া ২০ থেকে ২২ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। এ বছর চামড়ার নতুন যে দাম নির্ধারণ করা হয়েছে তাতে খুশি নয় চামড়া ব্যবসায়িরা। কোরবানি সময়ে চামড়া দাম কমে যায় বলে অভিযোগ করেন তারা। ব্যবসায়িদের অভিযোগ- জেলায় ছোট-বড় মিলিয়ে অন্তত ১৫০ জন চামড়া ব্যবসায়ি রয়েছে। কয়েকজন ট্যানারি মালিকের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছে। সরকার চামড়ার দাম নির্ধারণ করে দিলেও ট্যানারি মালিকরা সে দামে কিনে না। বছরের পর বছর অনেকে টাকা না পেয়ে ব্যবসায় ধ্বস নেমে অনেকে পথে বসেছে। জীবিকার তাগিতে বিভিন্ন পেশায় চলে গেছে। চামড়া ব্যবসায়ী তসলিম উদ্দিন বলেন- বিভিন্ন মাধ্যমে শুনা যায় চামড়ার দাম ভালো যাবে। কিন্তু আমরা সে দাম পাই না। আবার চামড়া বিক্রি করা হলে এক মাস পর টাকা দেওয়ার কথা থাকলেও বছরেও সে টাকা পাওয়া যায়না। ঈদে চামড়া কেনার সময় বিভিন্ন জায়গায় ধারদেনা করতে হয়। গত আড়াই বছরে ট্যানারি মালিকদের কাছে আমার প্রায় ৭ লাখ টাকা পাওনা আছি। আমি ছোট ব্যবসায়ি এভাবে টাকা আটকে থাকলে ব্যবসায় ধ্বস নামবে। এরমধ্যে আবার লবনের দাম বস্তায় ১৫০-২০০ টাকা বেড়েছে। চামড়া কেনা নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছি। জেলা চামড়া ব্যবসায়ি গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ আলী বলেন- সারাবছর চামড়ার বাজার ভালো থাকলেও কোরবানির সময়ে দাম কমে যায়।

তারা জানায়, কোরবানির অনেক চামড়া নষ্ট থাকায় দাম কম হয়। ট্যানারি মালিকদের কাছে আমার প্রায় ৫০ লাখ টাকা অনাদায়ি আছে। বছরের পর বছর অনাদায়ি থেকে এ পরিমাণ টাকা হয়েছে। নওগাঁ জেলা চামড়া ব্যবসায়ি গ্রুপের সভাপতি মোমতাজ হোসেন বলেন, সরকার শুধু কুরবানির সময় চামড়া নিয়ে তৎপর হয়। তবে প্রান্তিক চামড়া ব্যবসায়িদের সঙ্গে সারা বছর যোগাযোগ রাখাসহ সুযোগ-সুবিধা বাড়ানো গেলে চামড়া শিল্প আরও এগিয়ে যাবে। গত ৫ বছরে জেলার প্রায় ১৫০ জন চামড়া ব্যবসায়ি ট্যানারি মালিকদের নিকট প্রায় ৫ কোটি টাকা বকেয়া পাওনা রয়েছে। দেশের সম্পদ রক্ষা করতে গিয়ে নিজেদের সম্পদ নষ্ট করে চামড়া কিনত হয়। ধারদেনা করে ঋণগ্রস্ত হয়ে নগদ টাকায় চামড়া কিনে নগদ টাকায় বিক্রি করা সম্ভব হয় না। বছরের পর বছর দেনা পড়ে থাকে। আর আমরা ঋণগ্রস্থ হয়ে পড়ি। তিনি বলেন, চামড়া শিল্পকে রক্ষা করতে বকেয়া টাকা পরিশোধসহ সরকারের নজরদারি বাড়ানো গেলে আবারো চামড়া শিল্প ঘুরে দাঁড়াবে। নওগাঁ জেলা প্রশাসক আব্দুল আউয়াল বলেন- চামড়া সংরক্ষণ নিয়ে এরইমধ্যে চামড়া ব্যবসায়িদের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। শিল্প মন্ত্রণালয় থেকে এবার বিনামূল্যে লবণ সরবরাহ করা হবে। সে বিষয়টি নিয়ে জেলার ৬টি বড় মাদ্রাসায় চামড়া প্রক্রিয়াজাত করণ বিশেষ করে লবনজাত ও সংরক্ষণ করতে হয় তা তাদের বুঝিয়ে দেয়া হয়েছে।

এছাড়া ইউনিয়ন পরিষদগুলোতে চামড়া সংগ্রহে পয়েন্ট করে দেয়া হবে। এতে দেরিতে চামড়া সংগ্রহ করার কারণে যে নষ্ট হতো তা আর হবে না। এছাড়া সচেতন করতে মাইকিং করার ব্যবস্থা করা হয়েছে। বিনামূল্যে যে লবন সরবরাহ করা হবে সঠিকভাবে ব্যবহার হচ্ছে কি না তা তদারকি করা হবে বলে তিনি। জেলা চামড়া ব্যবসায়ি সমিতির তথ্যমতে- গত বছর জেলায় গরু-মহিষ ও ছাগল-ভেড়াসহ প্রায় ১ লাখ ৭০ হাজার পিস চামড়া প্রস্তুত করা হয়েছিল। যার বাজারদর প্রায় ৬ কোটি টাকা। এ বছরও একই পরিমাণ চামড়া প্রস্তুত করার আশা।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত