সামান্য বৃষ্টি হলেই জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয় কিশোরগঞ্জের তাড়াইল উপজেলা সদর বাজারে। সংস্কার আর সচেতনার অভাবে তাড়াইল উপজেলার প্রধান এই বাজারের ড্রেনগুলো ময়লা-আবর্জনায় ভরে গিয়ে পানি নিষ্কাশনের পথ বন্ধ রয়েছে। একদিকে জলাবদ্ধতা অন্যদিকে জমে থাকা ময়লা-আবর্জনার দুর্গন্ধে অতিষ্ট হয়ে পড়েছে বাজার ব্যবসায়ীরা। পাশাপাশি বাজারে আসা ক্রেতাদেরও চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।
গতকাল বুধবার সরেজমিন তাড়াইল সদর বাজারে গিয়ে দেখা যায়, সংস্কারের অভাবে ড্রেনগুলো নোংরা ময়লা-আবর্জনায় ভরে গিয়ে পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা বন্ধ থাকায় সামান্য বৃষ্টি হলেই জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। ফলে বাজারের অলিগলি দিয়ে জনগণ চলাচলে অনুপযোগী হয়ে পড়ে। ব্যবসায়ীরা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ড্রেনেজ ব্যবস্থা নষ্ট। নেই প্রয়োজনীয় সংখ্যক টিউবওয়েল ও ল্যাট্রিন। বাজারে ক্রেতা-বিক্রেতা ও জনগণের নেই কোনো নাগরিক সুবিধা। আমরা বিষয়টি বাজার কমিটি ও প্রশাসনকে অনেকবার জানিয়েছি। কিন্তু কোনো কাজ হয়নি। বর্ষা মৌসুমে এবারও বৃষ্টি শুরু হয়েছে। বৃষ্টিতে বাজারের যে পরিস্থিতি হয় তাতে দ্রুত ড্রেনগুলো সংস্কার না করা হলে ব্যবসা করা অসম্ভব হয়ে যাবে। তারা আরও বলেন, কাঁচা বাজার, মাছ বাজার, চাল মহল, খলিফাপট্রি ও বাজারের সদর গলিসহ প্রতিটি অলিগলির ড্রেনেজ ব্যবস্থা খুবই নাজুক। বাজারের ফুটপাতের ব্যবসায়ীরা প্রকাশ্যে ড্রেনের ভেতর দোকানের ময়লা-আবর্জনা, পচা মাছ-সবজি ও পচা খাবার ফেলছে। আর সেই ময়লা-আবর্জনার ওপর বা পাশে দাঁড়িয়ে মূত্রত্যাগ করছে অনেকে। ফলে ড্রেনগুলো ভরে গেছে। ড্রেনের পাশ দিয়ে চলাচল করতে গেলেই দম বন্ধ হয়ে আসে পঁচা ময়লা-আবর্জনার দুর্গন্ধে। প্রতি সপ্তাহে শনিবার ও মঙ্গলবার এ বাজারে হাট বসে। হাটের দিন বৃষ্টি হলে ক্রেতা-বিক্রেতাদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয়। এ বাজারে অনেকগুলো ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। আছে কয়েকটি ব্যাংকের শাখা, উপশাখা বিভিন্ন কোম্পানির শো রুম। প্রতিদিন সকাল থেকে রাত পর্যন্ত এ বাজারে জনসমাগম থাকে। তাড়াইল সদর বাজারের কাঁচামাল ব্যবসায়ী আলতাফ মিয়া বলেন, এ কাদার মধ্যে দোকান করা যায় না। কয়েক বছর ধরে বৃষ্টি নামলেই আমাদের পড়তে হয় ভোগান্তিতে। বাজারের অন্য কাঁচামাল ব্যবসায়ী জামাল মিয়া বলেন, এ মৌসুমে আমাদের কষ্টের শেষ নেই। একটু বৃষ্টি হলেই সড়কে হাঁটু পরিমাণ কাদা হয়। বাজারের কাপড় ব্যবসায়ী শরীফ অ্যান্ড বুলবুলের দোকানের ম্যনেজার আবু বক্কর বলেন, বর্ষা মৌসুমে শুধু বাজারের প্রধান সড়কই নয়, পাশাপাশি কয়েকটি গলির সড়কও হাঁটা-চলার অনুপোযোগী হয়ে যায়। কাদাযুক্ত সড়কের কারণে আমাদের যেমন সমস্যা, এর চেয়ে বেশি সমস্যা হয় বাজারে আসা ক্রেতাদের। একই দোকানের টেইলার্সের কাটিং মাস্টার নুরুজ্জামান খান প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন, এত সুন্দর একটা বাজার। কাদাপানির কারণে বাজারে হেঁটে চলাও কষ্টকর। বৃষ্টি হলেই বাজারে পানি জমে। তাড়াইল সদর বাজারের প্রাণকেন্দ্রেই রয়েছে তাড়াইল পাইলট সরকারি মডেল উচ্চ বিদ্যালয়। শিক্ষার্থীরা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, বই-খাতা নিয়ে আমাদের বিদ্যালয়ে আসতে হয়। বৃষ্টির দিন এলেই পোহাতে হয় আমাদের চরম দুর্ভোগ।
বাজারের ড্রেনগুলো ময়লা-আবর্জনায় ভরপুর বিষয়টি স্বীকার করে তাড়াইল-সাচাইল সদর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান সাইম দাদ খান নওশাদ বলেন, অতিদ্রুত বাজারের সব ড্রেনগুলো পরিষ্কার করা হবে। বাজারের এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে ব্যবসায়ী ও জনগণের অসচেনতার কারণে। প্রতিদিন ময়লা-আবর্জনা দিয়ে ড্রেনগুলো ভরে রাখেন তারা। এজন্য মূলত পানি নিষ্কাশনে সমস্যা হয়। সবাই যদি নির্দিষ্ট স্থানে ময়লা ফেলে তাহলে জলাবদ্ধতা সৃষ্টির আশঙ্কা কমে যাবে।