ঢাকা বুধবার, ০৯ জুলাই ২০২৫, ২৫ আষাঢ় ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

দিনাজপুর থেকে বিলুপ্তির পথে কাউন চাষ

দিনাজপুর থেকে বিলুপ্তির পথে কাউন চাষ

সরকারি উদ্যোগ ও বাজার উৎসাহ না থাকায় দিনাজপুরের ১৩টি উপজেলা থেকে বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে এক সময়ের পুষ্টিতে ভরপুর সুস্বাদু ফসল কাউন চাষ। কাউন বা ফক্সটেল মিলেট যার বৈজ্ঞানিক নাম সেটারিয়া ইতালিকা। এর চাল দিয়ে এক সময় গ্রাম ও শহরের মানুষ বিভিন্ন রকমের মুখরোচক পিঠা, ক্ষির, পায়েস, খিচুরিসহ বিভিন্ন খাদ্যসামগ্রী তৈরি করতো। কিন্তু বর্তমান প্রজন্মের কাছে এ নামটি যেনো ইতিহাসের কোনো এক ফসলের নাম।

নতুন প্রজন্মের কাছে বিজ্ঞানভিত্তিক কৃষি চাষ ও কৃষিতে অধিক ফলনের বিভিন্ন আধুনিক ফসল আশায় কাউন চাষের প্রতি কৃষকরা দিনদিন নিরুৎসাহিত হচ্ছে। সময়ের ক্রমাগত পরিবর্তন ও প্রযুক্তির উৎকর্ষ কাউনের চাষকে পেছনে ফেলে নিয়ে এসেছে বছরে তিন-চার ফসলি উৎপাদন। নতুন প্রজন্মের কাছে এর পরিচিতি ধরে রাখতে কাউন চাষের প্রতি মনোযোগ বাড়ানো দরকার বলে অনেক কৃষক মনে করছেন। অধিক পুষ্টি, স্বল্প খরচ, সহজ চাষ পদ্ধতি ও পানি সাশ্রয়ী হওয়া সত্ত্বেও গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যের সঙ্গে জড়িয়ে থাকা কাউন ফসলটি আজ প্রায় বিলুপ্তির পথে। এক সময় প্রচুর কাউন চাষ হতো। আবার গরিবের প্রধান খাদ্যও ছিল এ কাউন। দিনের পর দিন মানুষের খাদ্যাভাস পরিবর্তনের পাশাপাশি মানুষের অবস্থারও পরিবর্তন ঘটেছে। ফলে এখন আর সেভাবে এসব অঞ্চলে কাউন চাষ হয় না। কাউন নিয়ে বীরগঞ্জ উপজেলার শিবরামপুর ইউনিয়নের নতুন উদ্যোক্তা মো. রেজানুর ইসলাম ইউটিউবে দেখে কাউন চাষ করে সফলতা পেয়েছেন। তার সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, দেশি জাতের এ ফসলটিকে আমাদের স্বার্থেই সংরক্ষণ করা উচিত। তা না হলে পরবর্তী প্রজন্ম জানতেই পারবে না কাউন নামটির কথা। কাউন নামের এ ফসলটি যাতে বিলুপ্ত না হয়ে যায় এ জন্য সরকারি সহযোগিতাসহ সবার এগিয়ে আসা উচিত। এছাড়াও কাউনের চালে কম গ্লাইসেমিক ইনডেক্স থাকার কারণে এটি ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য একটি ভালো বিকল্প হতে পারে, কারণ এটি রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। বিষয়টি নিয়ে দিনাজপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ আফজাল হোসেন জানান, আগে বন্যার কারণে ধান হতো না। তখন কাউনই ছিল ভাত।

এখন হাইব্রিড ধান, ভুট্টাসহ নানা জাতের ফসল আশায় সেই স্বাদ অনেকটাই ভুলে গেছে বর্তমান প্রজন্মের মানুষ। তবে কাউন পুরোপুরি হারিয়ে যায়নি। বর্তমানে এটি পাখির খাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। এখন পাখি প্রেমীরাই কাউনের বড় ক্রেতা। এক সময়ের নিত্য প্রয়োজনীয় শস্য আজ পরিণত হয়েছে প্রান্তিক পণ্যে, সংস্কৃতি ও অর্থনীতির দিক থেকেও। আমরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি যাতে কাউন তার হারানো গৌরব ফিরে পায়।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত