ঢাকা বুধবার, ২১ মে ২০২৫, ৭ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

শিশুদের প্রিয়জন

পূর্ণতার এক অমর চিত্র রাসুল (সা.)-এর জীবন। তিনি জীবনের বাঁকে বাঁকে পথহারা মানুষকে পথের দিশা দিয়েছেন। রেখে গেছেন চিরায়ত আদর্শ। আদর্শ সমাজ গঠন, মানবতার দীক্ষা, নববি সৌরভ ছড়িয়ে দেওয়ার দায়িত্বে মগ্ন থাকা এ মহামানব কখনও ভুলে যাননি শিশুদের কথা। সময়ে-অসময়ে, চলতি পথে তাদের সঙ্গে মিশেছেন। করেছেন খুনসুটি। সব সময় খেয়াল রেখেছেন তাদের। শিশুদের সঙ্গে কাটানো নবীজি (সা.)-এর কয়েকটি দিক নিয়ে লিখেছেন- বাইজিদ বোস্তামি
শিশুদের প্রিয়জন

শিশুদের জন্য বরকতের দোয়া : আনাস (রা.) বলেন, একবার আবু তালহা আনসারির ঘরে এক পুত্র সন্তান জন্ম নিল। তাকে নিয়ে রাসুল (সা.)-এর কাছে এলাম। রাসুল (সা.) চাদর গায়ে দাঁড়িয়ে আছেন। নিজের উটটি প্রস্তুত করছিলেন। নবজাতককে দেখে বললেন, ‘আনাস! তোমার কাছে খেজুর আছে?’ ‘জী’ বলে কিছু খেজুর তার হাতে দিলাম। রাসুল (সা.) তা মুখে পুরলেন। হালকা করে চিবালেন। তারপর জিহ্বা দিয়ে বাচ্চাটির মুখে দিলেন সেই খাবার। শিশুটি চুষে খাচ্ছিল। রাসুল (সা.) তখন বললেন, ‘আনসাররা খেজুর বড্ডো ভালোবাসে।’ বাচ্চাটির নাম রেখে দিলেন আবদুল্লাহ। (মুসলিম : ২১১৪)।

শিশুদের সালাম দেওয়া : মদিনার পথে রাসুল (সা.) হাঁটছেন। হঠাৎ দেখলেন, কিছু বাচ্চা খেলছে একসঙ্গে। রাসুল (সা.) ধীর পায়ে এগিয়ে গেলেন। মিষ্টি করে সালাম দিলেন তাদের। তাদের চোখেমুখে ছড়িয়ে পড়ল বিস্ময় এবং আনন্দের হিল্লোল। (সুনানে আবি দাউদ : ৫২০২)।

শিশুদের আদর করা : গল্পটা জাবের বিন সামুরা (রা.)-এর। তিনি বলেন, ফজরের সালাত আদায় করলাম রাসুল (সা.)-এর সঙ্গে। রাসুল বেরুলেন মসজিদ থেকে। ঘরে যাবেন। তার সঙ্গে আমিও বেরুলাম। দু’টি ছেলে তখন রাসুল (সা.)-কে স্বাগত জানাল। রাসুল (সা.) কাছে ডাকলেন তাদের। গাল টিপে দিলেন। আমিও বাদ পড়লাম না। রাসুল (সা.) যখন আমার গালে হাত দিলেন, তার হাতের সুতীব্র মোহময় ঘ্রাণ পেলাম। মনে হচ্ছিল, যেন আতরের আস্ত একটি ডিব্বা। (মুসলিম : ২৩২৯)।

শিশুদের সঙ্গে খুনসুটি : জাবের (রা.) বলেন, আমরা রাসুল (সা.)-এর সঙ্গে ছিলাম। খাবারের সময় হলে খাবারের ডাক পড়ল। হুসাইন তখন বাচ্চাদের সঙ্গে মদিনার পথে খেলছে। রাসুল (সা.) তাকে দেখলেন। সাহাবিদের সামনেই তিনি একটু দ্রুত এগুলেন। এরপর দু’হাত বাড়িয়ে দিলেন। বাচ্চারা এখানে-ওখানে লুকোতে শুরু করল। রাসুল (সা.)-এর মুখভর্তি হাসি। তিনি হুসাইনকে ধরে ফেললেন। এক হাত দিয়ে তার চিবুক আর অন্য হাত দিয়ে মাথা ধরে তাকে কোলে তুলে নিলেন। চুম্বন করলেন হুসাইনকে। এরপর বললেন, ‘হুসাইন আমার অংশ। আমি তার অংশ। হুসাইনকে যে ভালোবাসবে, আল্লাহ তাকে ভালোবাসবে। হাসান হুসাইন হলো জান্নাতের সরদার।’ (বোখারি : ৩১৪৬)। রাসুল (সা.)-এর যয়নাব বিনতে উম্মে সালামা রাসুল (সা.)-এর কাছে এলো। রাসুল (সা.) তখন গোসল করছেন। তাকে দেখেই রাসুল (সা.) পানি ছিটিয়ে দিলেন তার মুখে। এ পানির বরকত কখনও পরিবর্তন হয়নি। যয়নাব যখন বৃদ্ধা হন, তখনও এ পানির ঔজ্জ্বল্য ছিল তার মুখজুড়ে। (মাওয়াহিবে দিনিয়্যা : ২/৩৫৪)।

শিশুর হক পূর্ণ করা ও সম্মান করা : সাদ বিন সাহল (রা.) বলেন, রাসুল (সা.) মজলিসে বসে আছেন। পানির পাত্র দেওয়া হলো তাকে। রাসুল (সা.) পান করলেন। তার ডান পাশে ছিল এক বালক, আর বাম পাশে বৃদ্ধরা। রাসুল (সা.) বালককে জিজ্ঞেস করলেন, ‘এ বৃদ্ধদের আগে পানি দেওয়ার অনুমতি দেবে আমাকে?’ বালক সঙ্গে সঙ্গে বলে উঠল, ‘হে আল্লাহর রাসুল! আপনার থেকে প্রাপ্ত অংশে কাউকে ভাগ বসাতে রাজি নই।’ রাসুল (সা.) তার হাতে পাত্র তুলে দিলেন। (বোখারি : ২৩৬৬)।

রাসুল (সা.)
আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত