ঢাকা শনিবার, ২৪ মে ২০২৫, ১০ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

সুসংবাদ প্রতিদিন

ভুট্টার ফলনে খুশি কৃষক

ভুট্টার ফলনে খুশি কৃষক

আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এ বছর টাঙ্গাইলে ভুট্টার বাম্পার ফলন হয়েছে। অল্প খরচে বাম্পার ফলন ও ভালো দাম পাওয়ায় খুশি ভুট্টা চাষিরা। জেলার ১২টি উপজেলায় সব এলাকায় কম বেশি ভুট্টা চাষ হয়েছে। বিশেষ করে চরাঞ্চলজুড়ে বিস্তীর্ণ বেশি হয়েছে। সরকারিভাবে কৃষকদের বিনামূল্যে ভুট্টার বীজ ও সার প্রদান করায় চলতি রবি মৌসুমে হাইব্রিড জাতের ভুট্টার আবাদ লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও বেশি জমিতে চাষ হয়েছে।

টাঙ্গাইল কৃষি সস্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, চলতি রবি মৌসুমে কৃষি বিভাগ ভুট্টা আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারন করেছিল ৭ হাজার ৮০০ হেক্টর। আর চাষ হয়েছে ৮ হাজার ৮১৫ হেক্টর জমিতে। লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১ হাজার ২৫১ হেক্টর বেশি জমিতে ভুট্টা আবাদ হয়েছে। চরাঞ্চলে অন্য ফসলের তুলনায় ভুট্টা চাষ বেশি হওয়ায় লাভবান হচ্ছেন ভুট্টা চাষিরা।

সরেজমিন ভুয়াপুর উপজেলার গাবসারা, গোবিন্দাসী, নিকরাইল ও অজুনা ইউনিয়নের বিভিন্ন মাঠ ঘুরে দেখা যায়, কৃষকরা দলবদ্ধভাবে গাছ থেকে ভুট্টা সংগ্রহ ও মাড়াই কাজে ব্যস্ত সময় পাড় করছেন। কেউ গাছ কাটছেন, কেউ ভুট্টা ছাড়াচ্ছেন, আবার কেউবা ভুট্টার ছড়া রোদে বিছিয়ে দিচ্ছেন শুকানোর জন্য। পুরুষের পাশাপাশি নারী ও শিশুরাও এ কাজে আনন্দের সাথে অংশ নিচ্ছে। ভোর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত কাজ করেন তারা। ভুট্টার খেতে কাজ করে প্রতিদিন একজন পুরুষ শ্রমিক পাচ্ছেন ৬০০ থেকে ৭০০ টাকা এবং একজন নারী শ্রমিক পাচ্ছেন ৪০০ থেকে ৪৫০ টাকা।

জানা যায়, গো-খাদ্য হিসেবেও ভুট্টার চাহিদা অনেক। তাছাড়া পোল্ট্রি শিল্পের জন্যও এর চাহিদা অপরিসীম। যেখানে প্রতি বিঘা জমিতে ১৫ থেকে ১৬ মণ ধান চাষ হয়, সেখানে প্রতি বিঘা জমিতে ভুট্টা চাষ হয় ৪০ থেকে ৪৫ মণ। বিঘা প্রতি আট থেকে ১০ হাজার টাকা খরচ করে চাষিরা বিক্রি করতে পারেন ৩০ থেকে ৫০ হাজার টাকার ভুট্টা।

যমুনা তীরবর্তী চরাঞ্চলের ভুট্টা চাষিরা জানান, গত বছরের চেয়ে এবছর প্রতি বিঘাায় ৪/৫ মণ বেশি উৎপাদন হয়েছে। গড়ে বিঘা প্রতি ভুট্টার ফলন হয়েছে ৩৫ থেকে ৪০ মণ। প্রতি বিঘা ভুট্টা চাষে খরচ হয়েছে প্রায় ১৪-১৫ হাজার টাকা। বর্তমান বাজার মূল্যে বিঘা প্রতি লাভ হচ্ছে ২৫-৩০ হাজার টাকা। চলতি বছর ভুট্টার ফলন ভালো হওয়ায় এবং বাজারে আশানুরুপ দাম পাওয়ায় তারা খুশি।

গোপালপুর উপজেলার হায়দার আলী জানান, তিনি দুই বিঘা জমিতে যুবরাজ ও গঙ্গা-পদ্মা জাতের হাইব্রিড ভুট্টা চাষ করেছেন। এতে ওজন ও ফলন ভালো পেয়েছেন তিনি। ঘাটাইল উপজেলার পাঁচটিকরি দক্ষিণপাড়া গ্রামের ভুট্টাচাষি হাছেন আলী জানান, ভুয়াপুর ইব্রাহিম খাঁ কলেজে অনার্সে পড়ুয়া ছেলে রাকিবকে সঙ্গে নিয়ে জমি থেকে ভুট্টা সংরক্ষণ করছেন, এই সব জমিতে ধান চাষ হতো না। তিনি এক বিঘা জমি বর্গা নিয়ে দুই বছর ধরে ভুট্টা চাষ করছেন। এ বছর ভুট্টার খুব ভালো ফলন হয়েছে। ধানের চেয়ে ভুট্টা চাষে পরিশ্রম একটু বেশি হলেও ভুট্টা চাষে খরচ অনেক কম লাভ তিনগুণ। ভুট্টা চাষে ফলন ভালো হওয়াতে তারা খুশি।

সখীপুর উপজেলার যাদবপুর ইউনিয়নের ঘেচুয়া গ্রামের নুরুল ইসলাম জানান, এক বিঘা জমিতে গত বছরও ভুট্টা চাষ করে ছিলেন তিনি। তবে গত বছরের চেয়ে এবছর ফলন ভালো হয়েছে।

গোপালপুর উপজেলার আলমনগর ইউনিয়নের বাগুয়াটা গ্রামের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. নুরুল ইসলাম জানান, বিগত কয়েক বছর ধরে ক্রমাগতভাবে ভুট্টার আবাদ বৃদ্ধি পাচ্ছে। নতুন ফসল হিসেবে কৃষক যেন চাষাবাদের ক্ষেত্রে সমস্যায় না পড়ে, সেজন্য তারা সরাসরি কৃষককে সঠিকভাবে ভুট্টাচাষ করার পদ্ধতি শিখিয়ে দিচ্ছেন। ভুট্টায় বিভিন্ন রোগ ও পোকা আক্রমণ করলে সেগুলো দমনে কৃষকদের প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেন তারা।

টাঙ্গাইল খামার বাড়ি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপ-পরিচালক কৃষিবিদ মো. আশেক পারভেজ জানান, চলতি মৌসুমে জেলার ভূট্টা চাষের লক্ষমাত্রা নির্ধারন করা হয়েছিল ৭ হাজর ৮০০ হেক্টর; কিন্তু চাষ হয়েছে ৮ হাজার ৮১৫ হেক্টর জমিতে। আর এতে উৎপাদন হয়েছে ৮৩ হাজার ৬৬৩ টন। গত বছর চাষ হয়েছিল ৭ হাজার ৭৫৬ হেক্টর জমিতে এবং উৎপাদন হয়েছিল ৭৩ হাজার ৩২০ টন। এ বছর জেলায় এক হাজার পাঁচশত কৃষককে প্রণোদনা দেওয়া হয়েছে বলেও জানান তিনি।

ভুট্টা
আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত