ঢাকা শুক্রবার, ২০ জুন ২০২৫, ৬ আষাঢ় ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

গ্লাভস-মাস্ক না পরেই কীটনাশক প্রয়োগ

গ্লাভস-মাস্ক না পরেই কীটনাশক প্রয়োগ

কিশোরগঞ্জের তাড়াইল উপজেলার কৃষক নুরুল হকের মরিচখেতে ছত্রাক আক্রমণ করেছে। তিনি পিঠে বালাইনাশকের জার নিয়ে জমিতে কীটনাশক স্প্রে করছিলেন। টি-শার্ট, হাতে গ্লাভস নেই, মুখে মাস্কও নেই। নুরুল হক বলেন, কীটনাশক স্প্রে করার ক্ষেত্রে কোনো বিধিনিষেধ আছে বলে শুনিনি। খালি হাতে ও মুখ না ঢেকেই স্প্রে করি। মাঝেমধ্যে মাথা ঘোরে, ব্যথা হয়। তখন বেশি পানি দিয়ে গোসল করি। দোকান থেকে মাথাব্যথার ওষুধ খাই। এভাবেই কাজ করছি বছরের পর বছর।

গতকাল রোববার সরেজমিনে দেখা যায়, ফসলের উর্বরতা বৃদ্ধি ও পোকামাকড় দমনে মরিচখেতে কীটনাশক স্প্রে করছেন উপজেলার দামিহা ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ডের হাছলা গ্রামের কৃষক নুরুল হক। ফসল সুরক্ষায় এতসব আয়োজন থাকলেও নিজের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় নেই কোনো ভ্রু-ক্ষেপ। কীটনাশক প্রয়োগের সময় মুখে মাস্ক, হাতে গ্লাভস, চোখে চশমা ব্যবহারের নিয়ম থাকলেও তা উপেক্ষিত। ফলে আক্রান্ত হচ্ছেন বিভিন্ন রোগে। এতে নিজের উদাসীনতাকেই দায়ী করছেন এই কৃষক।

তিনি বলছেন, নিয়ম থাকলেও তারা স্বাস্থ্য সচেতন না। যার কারণে কোনোরকম ‘সেফটি গ্যাজেটস’ বা সুরক্ষা সামগ্রী ছাড়াই জমিতে কীটনাশক স্প্রে করেন। শুধু নুরুল হকই নয়, তাড়াইল উপজেলাজুড়ে কৃষকদের এমন উদাসীনতার দেখা মিলছে। কৃষকদের অভিযোগ, কীটনাশক ব্যবহারে কৃষি দপ্তরের সহযোগিতা পান না তারা। এছাড়াও অনেকেই জানেনই না কীটনাশক প্রয়োগের সময় স্বাস্থ্য সুরক্ষায় কি কি ব্যবহার করতে হয়। দামিহা ইউনিয়নের ১, ৫, ৬ ও ৪নং ওয়ার্ডের কিছু অংশের দায়িত্বে থাকা কৃষি উপসহকারী কর্মকর্তা মোস্তাফিজুর রহমান রিপনের কৃষি বিষয়ক কোনো পরামর্শ ও সহযোগিতা না পাওয়ার অভিযোগ করে কৃষক নুরুল হক বলেন, কৃষি উপসহকারী কর্মকর্তা যদি আমাদের পরামর্শ দিয়ে সহযোগিতা করতো তাহলে আমরা রোগবালাই থেকে রেহাই পেতাম।

কীটনাশক ব্যবহারে কৃষি অফিসের কোনো রকমের পরামর্শ ও সহযোগিতা পাই না। আপনার কাছ থেকে জানতে পারলাম জমির ফসলে কীটনাশক দেয়ার সময় স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হয়। তাড়াইল উপজেলা কৃষি অফিসের তথ্যমতে, উপজেলার সাতটি ইউনিয়নে চাষযোগ্য জমির পরিমান ১৩ হাজার ৪৫০ হেক্টর। আরও জানা যায়, সমন্বিত বালাই ব্যবস্থাপনা (আইপিএম) নীতিমালার পরামর্শ হলো, রাসায়নিক সার বা কীটনাশক ব্যবহারের সময় মুখে মাস্ক ব্যবহার ও শরীরের অন্যান্য অংশে কীটনাশকের অনুপ্রবেশ রোধে প্রতিরোধ ব্যবস্থা থাকতে হবে। তাড়াইল উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা বিকাশ রায় বলেন, কৃষি অফিসের পক্ষ থেকে উপজেলার চাষিদের বিভিন্ন সময় স্বাস্থ্য সুরক্ষায় পরামর্শ দেয়ার পাশাপাশি কীটনাশক ছিটানোর আগে ব্যক্তিগত স্বাস্থ্যসচেতনতা নিশ্চিত করতে তাগিদ দিয়ে যাচ্ছি।

আইপিএম অনুযায়ী কীটনাশক ব্যবহারের পরামর্শ দিচ্ছি। কিন্তু অনেকেই বিষয়টি মানছেন না। ভবিষ্যতে বিষয়টি নিশ্চিত করতে আরও বিশেষ উদ্যোগ নেয়া হবে। তাড়াইল উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার-পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. অতিশ দাস রাজীব বলেন, রাসায়নিক ও কীটনাশক স্প্রে করার আগে সতর্কতা অবলম্বন করতে হয়। না হলে নিঃশ্বাসের মাধ্যমে মানবদেহে এ সব বিষ প্রবেশ করে দীর্ঘমেয়াদি মাথাব্যথা, বমি বমি ভাবসহ নানারকম জটিল রোগ হতে পারে। এমনকি ক্যান্সারের মতো মরণব্যাধিতেও আক্রান্ত হতে পারে মানুষ। তাই এখনি বিষয়টি নিয়ে সচেতনতা বাড়ানো দরকার।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত