ঢাকা শুক্রবার, ২০ জুন ২০২৫, ৬ আষাঢ় ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

নারায়ণগঞ্জে পাইকারি বাজারে সয়াবিন নিয়ে কারসাজি

নারায়ণগঞ্জে পাইকারি বাজারে সয়াবিন নিয়ে কারসাজি

দুদিন বাদেই শুরু হবে পবিত্র রমজান মাস। নারায়ণগঞ্জের পাইকারি বাজারে জিনিসপত্রের সরবারহ বাড়ছে। এর সঙ্গে লাফিয়ে লাফিয়ে পণ্য দ্রব্যের দাম। ব্যবসায়ী নেতারা নীতিকথা বললেও অনেকে মজুদদারি শুরু করে দিয়েছেন। যার প্রভাব পড়বে খুচরা বাজারে। নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসন রমজানে বাজার স্থিতিশীল রাখতে নিয়মিত মনিটরিং করার ঘোষণা দিয়েছে। ক্রেতাদের অভিযোগ মজুদদারি করেই অসৎ ব্যবসায়ীরা কৃত্রিম সংকট তৈরি করে জিনিসপত্রের দাম বাড়িয়ে দেয়।

নারায়ণগঞ্জের পাইকারি বাজার নিতাইগঞ্জে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর সবেমাত্র অভিযান শুরু করেছে। অভিযানের শুরুতেই সয়াবিন তেলের দাম নিয়ে কারসাজি তাদের নজরে আসে। যথারীতি জরিমানা করা হয় দুই একটি প্রতিষ্ঠানকে। এতেও সয়াবিন তেলের দাম নিয়ে কারসাজির কোন কূল কিনারা হয়নি। একদিকে অভিযান শেষ অন্যদিকে ফের কারসাজি শুরু। সামনে আসছে রমজান মাস। পরিস্থিতি কিযে হবে-এ নিয়ে চরম উৎকণ্ঠায় দিন কাটাচ্ছেন নারায়ণগঞ্জবাসী। সয়াবিন তেলের দাম বাড়ায় ফের নিতাইগঞ্জে জেলা টাস্কফোর্স অভিযান আমিন এন্টারপ্রাইজের দোকানি সাগর হোসেন বলেন, সিন্ডিকেট ভাঙলে এমনিতেই সয়াবিন তেলের দাম কমে আসবে। পাইকপাড়ার বাসিন্দা কাজী শুভ বলেন, আমি সিঙ্গাড়া সমুচা বিক্রি করি। বেশির ভাগ সময়ই আমাকে তেল কিনে রাখতে হয় আগে থেকেই। গত তিন মাস আগে যে তেল খোলা বাজারে ১৫০ টাকায় কিনেছি, এখন সেটা কিনতে হচ্ছে ১৯২ টাকায়। কিন্তু আমার সিঙ্গাড়া, সমুচা, চপ এগুলোতে দাম বাড়াতে পারছি না।

এদিকে, ২৪ ফেব্রুয়ারি বিকেলে ফতুল্লার পাগলা ও নারায়ণগঞ্জ শহরের নিতাইগঞ্জ এলাকায় দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে অভিযান পরিচালনা করেছে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। এ সময় তিনটি প্রতিষ্ঠানকে ৩ লাখ ১২ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। অভিযান পরিচালনা করেন নারায়ণগঞ্জ জেলা ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর সরকারী পরিচালক হৃদয় রঞ্জন বনিক। তিনি জানান, অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে আমরা ছদ্মবেশে লোক পাঠিয়ে সয়াবিন তেল ক্রয় করি। এ সময় বোতলের গায়ে সরকার-নির্ধারিত দামের চেয়ে অতিরিক্ত দামে সয়াবিন তেল বিক্রি করায় মনির স্টোরকে ৩ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। পাশাপাশি যে তেল মজুদে আছে তা যেন গায়ে লেখা দামে বিক্রি করা হয় সে ব্যাপারে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।

তিনি আরো জানান, এছাড়াও ফতুল্লা পাগলা বাজার এলাকায় অভিযান চালিয়ে অতিরিক্ত দামে সয়াবিন তেল বিক্রি করায় দুটি প্রতিষ্ঠানকে ১২ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। দ্বিগুবাবু বাজারের কাঁচাবাজার ঘুরে দেখা গেছে, মুদি দোকানগুলোতে বোতলজাত সয়াবিন পর্যাপ্ত পরিমাণে আছে। খুচরা বিক্রেতারা জানিয়েছেন, বাজারে কয়েকটি কোম্পানি ছাড়া অন্য ব্র্যান্ডের বোতলজাত সয়াবিন তেল কিছুদিন পাওয়া যায়নি। সেটা ছিল দাম বাড়ানোর কৌশল। ক্রেতারা বলছেন, দোকানিরা আগেই কিনে স্টক করে রেখেছিলেন। যা এখন বেশি দামে বিক্রি করছেন। বিক্রেতারা বলছেন, আমাদের এখানে কিছুই নাই। কোম্পানি যেভাবে মাল সরবরাহ করছে। আমরা সেভাবেই বিক্রি করছি। মহিউদ্দীন নামে এক মুদি দোকানি বলেন, বাজারে চাহিদা বেশি থাকলেও কোম্পানি কিছুদিন সরবরাহ করতো কম। ফলে কোম্পানিও তেলের দাম বৃদ্ধি করেছে এই সুযোগে। বিক্রমপুর জেনারেল স্টোরের মালিক দুলাল হোসেন বলেন, ক্রেতারা গায়ের রেটে সয়াবিন তেলের বোতল কিনতে চান। তিনি বলেন, গায়ের মূল্য দেখে লাভ নেই। বেশি দামে কিনে আমি কম দামে তো বিক্রি করতে পারবো না। বউ বাজারের কাঁচাবাজারে, হাতেগোনা কয়েকটি দোকানে নির্ধারিত দামে বা সামান্য বাড়তি দামে তেল বিক্রি করা হচ্ছে। কিছুদিন আগে রূপচাঁদা এক লিটার সয়াবিন তেলের গায়ের দাম ছিল ১৬৭ টাকা, দুই লিটার ৩৩৪ টাকা ও পাঁচ লিটার ৮১৮ টাকা। বেশির ভাগ দোকানে এ দামের চেয়ে ২৫-৩০ টাকা বেশি নিচ্ছেন বিক্রেতারা। এখনতো বোতল তেলের দাম ১৯৫ টাকা লিটার। মাসদাইর বাজারের দোকানগুলোতে বোতলজাত সয়াবিন তেলের ঘাটতি ছিল কিছু দিন আগে। এখন কোন ঘাটতি নেই। তবে তেলের দাম কমানো হচ্ছেনা। সামনে আসছে পবিত্র রমজান মাস। দেওভোগ পানিরট্যাংকী এলাকার বাসিন্দা মোরশেদ আলম বলেন, এক লিটার তেল বিক্রি হচ্ছে ১৯৫ টাকায়।

ভোলাইল এলাকার স্বপন নামে এক ব্যবসায়ী বলেন, যদি কোনো কোম্পানি ২ পিস সয়াবিন তেলের বোতল দেয় সঙ্গে শর্ত জুড়ে দেয় যে সয়াবিন তেল নিতে হলে তেলের পাশাপাশি তার কোম্পানির মুড়ি, ময়দা, চা-পাতা মশলা ও অন্যান্য পণ্য নিতে হবে। বাজারের দোকানগুলোতে দেখা গেছে, বর্তমানে সয়াবিন তেলের সরবরাহ ভাল। খোলা সয়াবিন বেড়ে খোলা পাম অয়েল ১৭৮-১৮০ এবং সয়াবিন ১৯২-১৯৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বাংলাবাজারের পাইকারি ব্যবসায়ী কাওসার মিঞা জানান, পর্যাপ্ত সরবরাহের অভাবে তারা তেল বিক্রি পুরোপুরি বন্ধ রেখেছেন। সরকার সয়াবিন তেল আমদানিতে শুল্ক কর কমিয়েছে। সে হিসেবে তেলের দাম কমার কথা। অথচ ৬ মাসে সয়াবিন তেলের দাম লিটার প্রতি বেড়েছে ৫০ টাকা। নারায়ণগঞ্জসহ সারাদেশে এখন সেটা কিনতে হচ্ছে ১৯৫ টাকায়। এ বিষয়ে নারায়ণগঞ্জ জেলা টাস্কফোর্সের কর্মকর্তা ও কৃষি বিপনন কর্মকর্তা ইবনুল ইসলাম বলেন আমরা নিতাইগঞ্জে অভিযান চালিয়ে ছিলাম। ফের বাড়তি দামেই বিক্রি হচ্ছে সয়াবিন তেল। রমজান আসার আগেই সয়াবিন ২০০ টাকায় পৌঁছে যাবে। নিতাইগঞ্জসহ সারাদেশের পাইকারি তেল ব্যবসায়ীরা খোলা সয়াবিন বিক্রি হচ্ছে প্রতিকেজি ১৯২ টাকা। পামঅয়েল ১৭৮ টাকা, কোয়ালিটি সুপার ১৭০ টাকা কেজি ও বোতলজাত সয়াবিন বিক্রি হচ্ছে ১৯৫ টাকা দরে। গরীবের জন্য পামওয়েল বাজার থেকে উধাও। যখনি বাজারে তেলের দাম আকাশচুম্বি হয় তখনি পামওয়েল সরিয়ে ফেলে ব্যবসায়ীরা। সেই পামওয়েল সয়াবিনের সঙ্গে মিশিয়ে বেশি রাভ করেন অসৎ ব্যবসায়ীরা। পাইকারি বাজারে সয়াবিন ২০০ এর ঘরে চলে আসছে। তবে খুচরা ২০০ টাকা লিটার বিক্রি হচ্ছে পাড়া-মহল্লায়।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত