ঢাকা শনিবার, ২১ জুন ২০২৫, ৭ আষাঢ় ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

বগুড়ায় সূর্যমুখীর চাষ বাড়ছে

বগুড়ায় সূর্যমুখীর চাষ বাড়ছে

বগুড়ায় সূর্যমুখী চাষে ঝুঁকছেন কৃষক। সূর্যমুখী ফুলের বীজ থেকে তেল ও খৈল হয়। ফুলের খেতে মৌচাক বসিয়ে বাণিজ্যিকভাবে মধু সংগ্রহ করা যায়। আবার শুকিয়ে যাওয়া গাছ জ্বালানি হিসেবেও ব্যবহার করা যায়।

সূর্যমুখী বীজ বপনের প্রায় তিন মাসের মধ্যেই কৃষকরা ফুল থেকে বীজ ঘরে তুলতে পারেন। এক বিঘা জমিতে সূর্যমুখী ফুলের চাষ করে প্রায় সাত মণ বীজ পাওয়া যায়। এ পরিমাণ বীজ বিক্রি হয় ১০ থেকে ১২ হাজার টাকায়। বেশি লাভের আশায় তাদের মধ্যে আগ্রহ বেড়েছে। এ ফুলের চাষ বেড়ে গত কয়েক বছরে দ্বিগুণ হয়েছে। একসময় শুধু ধুনট ও সারিয়াকান্দি উপজেলায় সূর্যমুখীর আবাদ হলেও বর্তমানে বগুড়া সদরসহ সব উপজেলার কৃষক এর চাষাবাদ করছেন।

স্থানীয় বাসিন্দারা বলেন, এ ফুল থেকে উৎপাদিত তেলের দাম বেশি হওয়ায় কৃষকরা লাভের মুখ দেখছেন। ফলে অন্য রবিশস্যের তুলনায় সময় ও ব্যয়সাশ্রয়ী এ ফুল আবাদে জেলার কৃষকদের মাঝে আগ্রহ বাড়ছে। সূর্যমুখী ফুলের বীজ থেকে তৈরি তেল বাজারের অন্য তেলের চেয়ে ভালো মানের। সূর্যমুখীর বীজ থেকে উৎপাদিত তেল সোয়াবিনের বিকল্প হিসেবে রান্নার কাজে ব্যবহার করা যায়। সূর্যমুখীর তেল স্বাস্থ্যসম্মত, এন্টি অক্সিডেন্ট যুক্ত। ১০ কেজি সূর্যমুখীর বীজ থেকে প্রায় সাড়ে ৪ কেজি তেল উৎপাদন হয়। কোলেস্টেরলমুক্ত হওয়ায় এর পুষ্টিগুণও বেশি বলে জানান কৃষি কর্মকর্তারা। জেলা সদরের শাখারিয়া ইউনিয়নের গোপালবাড়ী গ্রামের কৃষক মজনু মিয়া প্রথমবার সূর্যমুখী চাষ করেছেন। সদর উপজেলা কৃষি অফিসের সার্বিক সহযোগিতায় এক বিঘা জমিতে তিনি চাষ করেন।

মজনু মিয়া বলেন, সব গাছে প্রচুর পরিমাণ ফুল ফুটেছে। নতুন করে কলি এসেছে। সেগুলোও ফোটার অপেক্ষায়। বীজ তৈরি হতে সব মিলিয়ে ছয় মাস লাগবে। তিনি আরো বলেন, কৃষি অফিস থেকে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করতে বিনা খরচে সূর্যমুখীর বীজ, সার ও অর্থ সহায়তা দেয়া হয়েছে। চাষের নানা দিক কৃষকদের বুঝিয়ে দেয়া হয়েছে। এছাড়া নিয়মিত খোঁজ রাখা হচ্ছে।

সরকারের এমন সহযোগিতা পেলে পর্যায়ক্রমে এ এলাকায় সূর্যমুখীর চাষ আরও বাড়বে বলে তিনি মনে করেন। অনেক কৃষক জানান, কৃষি অফিস থেকে বিনা মূল্যে বীজ ও সার সংগ্রহ করে চাষ শুরু করে তারা। একটি পরিণত গাছ ৯০ থেকে ১১০ সেন্টিমিটার লম্বা হয়। কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা যায়, অন্য ফসলের চেয়ে সূর্যমুখী চাষে খরচ কম। এতে সার ও ওষুধ কম লাগে। খুব বেশি পরিচর্যাও করতে হয় না। তাছাড়া অন্য তেল বীজের তুলনায় বেশি তেল পাওয়া যায়। পুষ্টিচাহিদা পূরণে সূর্যমুখীর বীজ আমদানি করতে হয়। চাষ বৃদ্ধি পেলে এ বীজ আমদানি করতে হবে না। এ ফুলের প্রতি কেজি বীজ থেকে কমপক্ষে আধা লিটার তেল উৎপাদন করা যায়। শতক প্রতি জমিতে আট কেজি বীজ উৎপাদন করা সম্ভব।

এতে তেল উৎপাদিত হবে সাড়ে তিন থেকে চার লিটার। প্রতি লিটার তেলের সর্বনিম্ন বাজারদর ২৫০ টাকা। প্রতি শতকে খরচ হয় সর্বোচ্চ ২০০ টাকা। জমিতে চাষ করা সূর্যমুখী ফুলের সৌন্দর্য দেখতে উপজেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে প্রতিদিনই ফুলপ্রেমি দর্শনার্থীরা ছুটে আসেন। কেউ কেউ সূর্যমুখী ফুল ঘুরে দেখছে, কেউবা আবার ফুলের সাথে সেলফি তুলছে, আবার কেউবা ভিডিও করছে। সূর্যমুখী ফুলবাগান দেখতে আসা কারিম উল্লাহ, সনেট, সাহেদ, ও রেজা জানান, সূর্যমুখী ফুলের অপূর্ব সৌন্দর্য মানুষের মন কেড়ে নেয়। বাড়ির পাশেই এরকম ফুল ফোটার খবর পেয়ে আমরা দেখতে এসেছি, সেলফি তুলছি খুব ভালো লাগছে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত