জয়পুরহাটে জমে উঠেছে কোরবানির পশুর হাট। এবার গরুর হাটে ব্যাপক গরুর আমদানি লক্ষ্য করা গেছে। তবে আমদানির তুলনায় ক্রেতা অনেক কম। এজন্য গরু বিক্রি করতে পারছেন না বিক্রেতারা। এদিকে দাম নিয়ে ক্রেতারা খুশি হলেও অসন্তুষ্ট বিক্রেতারা। তবে অনেকের মধ্যে দাম নিয়ে রয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া। ব্যবসায়ীরা এখানকার গরু কিনে নিয়ে যাচ্ছেন রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলাতে।
সীমান্তবর্তী জেলা জয়পুরহাট। এই জেলায় এবার কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে ২০ হাজার খামারে প্রস্তুত করা হয়েছে ৩ লাখ ১৬ হাজার ৮২৮টি পশু। এর মধ্যে গরু ১ লাখ ২৩ হাজার ৭৪৫, ছাগল ১ লাখ ৪৬ হাজার ৩১২, ভেড়া ৪৬ হাজার ৫৭৪ ও মহিষ রয়েছে ১৯৭টি। জেলায় পশুর চাহিদা রয়েছে ১ লাখ ৯৭ হাজার ৬৪৮টি। আর চাহিদার অতিরিক্ত পশু বিক্রি হবে দেশের বিভিন্ন জেলায়। এরই মধ্যে জেলার হাটগুলোতে উঠতে শুরু করেছে কোরবানির পশু। এবার হাটে প্রচুর পশু আমদানি হলেও বেচাকেনা কম। উত্তরবঙ্গের সবচেয়ে বড় পশুরহাট হিসেবে পরিচিত জয়পুরহাট শহরের নতুনহাট পশুরহাট। এ হাটে প্রচুর দেশীয় জাতের গরু আমদানি হয়েছে।
জয়পুরহাট জেলা ছাড়াও নওগাঁ, বগুড়া, দিনাজপুরের বিভিন্ন উপজেলা থেকে খামারিরা গরু নিয়ে এসেছেন এখানে। কিন্তু আমদানির তুলনায় নেই কাঙ্ক্ষিত ক্রেতা। এতে গরু বিক্রি হচ্ছে কম। এদিকে দাম নিয়ে বিক্রেতারা অসন্তুষ্ট হলেও খুশি ক্রেতারা। তবে অনেকের মধ্যে দাম নিয়ে রয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া। কম দামে পাওয়ায় ব্যবসায়ীরা এখান থেকে গরু কিনে নিয়ে যাচ্ছেন রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলাতে। জয়পুরহাট সদরের ভুটিয়াপাড়ার হাসান বলেন, ‘হাটে প্রচুর গরু আমদানি হয়েছে। সে তুলনায় ক্রেতা নেই। এজন্য দামও কম। গরু বিক্রি করে লাভ হচ্ছে না। দূর-দূরান্ত থেকে অনেক ব্যাপারী হাটে আসছে না। গরুর দাম বাড়বে বলে মনে হচ্ছে না।
জয়পুরহাটের সদর উপজেলার খামারি রকি হোসেন বলেন, ‘হাটে ৪০টি গরু নিয়ে এসেছিলাম। বিক্রি হয়েছে ৩০টি। আমদানি বেশির জন্য গরু বিক্রি কম হচ্ছে। দামও কম। যেখানে একটা গরু বিক্রি করে ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা লাভ হতো। সেখানে ৩ থেকে ৪ হাজার টাকা লাভ হচ্ছে। নওগাঁর জেলার ধামুইরহাট এলাকার সাইফুল ইসলাম পলাশ বলেন, ‘নতুনহাটে ৮টি গরু নিয়ে এসেছিলাম। কিন্তু একটাও বিক্রি করতে পারিনি। যে দাম করছে, তাতে বিক্রি করলে জোড়া প্রতি ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা করে লোকশান হবে। এজন্য বিক্রি করিনি। তহবিল যদি উঠে তাও বিক্রি করব।’
বরিশাল থেকে আসা গরু ব্যবসায়ী শরিফুল ইসলাম বলেন, ১৮টি বলদ গরু কিনেছি। ক্রেতা না থাকায় গরুর দাম অনেক কম। ২৫ থেকে ২৬ হাজার টাকা মণ পড়ছে। এখান থেকে কিনে নিয়ে ফেনীর হাটে গিয়ে বিক্রি করব। ভোলার জেলার ব্যবসায়ী শাহিনুর ইসলাম বলেন, ‘বাজার কম হওয়ায় ২৮টি গরু কিনেছি। বলদ গরু ২৬ থেকে ২৭ হাজার টাকায় মণ হিসেবে পাওয়া যাচ্ছে। ষাঁড় গরুর দাম আরও কম। দামে আমরা খুব খুশি। ফেনীর আরেক ব্যবসায়ী নুরুল হক বলেন, জয়পুরহাটে ছোট গরু কেনার জন্য এসেছিলাম। তবে ছোট গরুর দাম বেশি চাচ্ছেন বিক্রেতারা। তবে বড় গরুর দাম কম। আমি ১২টা গরু কিনেছি। এখান থেকে গরু কিনে আমাদের জেলার হাটে বিক্রি করব।
জয়পুরহাট নতুনহাটের হাট ইজারাদার আব্দুল আলিম বলেন, হাটে বেচাকেনা ভালো হচ্ছে। আমরা হাটে পর্যাপ্ত নিরাপত্তার ব্যবস্থা করেছি। সিসি ক্যামেরা থেকে শুরু করে জাল নোট শনাক্তকরণসহ বিভিন্ন ব্যবস্থা আছে। পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী হাটে নিরাপত্তা দিচ্ছে। আমাদের লোকজনও দায়িত্ব পালন করছে।
জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মহির উদ্দীন বলেন, ‘জয়পুরহাট জেলায় এবার স্থায়ী গরুর হাট ১০টি ও অস্থায়ী ১৭টিসহ মোট ২৭টি হাটে কোরবানির গরু কেনাবেচা হচ্ছে। প্রতিটি হাটে প্রাণিসম্পদ দপ্তর থেকে ভেটেরিনারি টিম কাজ করছে। তাৎক্ষণিক কোনো পশু অসুস্থ হলে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। পাশাপাশি কোনো অসুস্থ পশু ক্রয়-বিক্রয় হলে ক্রেতা ও খামারিকে সহায়তা করা হচ্ছে।