মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানে ঈদুল আজহার ছুটিতে মাত্র তিন দিনে আড়াই হাজার পর্যটকের ঢল নেমেছে। এই উদ্যানের বন্যপ্রাণী ও বন দেখতে ফি বছর পর্যটকদের উপস্থিতি উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে। তবে অত্যাধিক পর্যটকের কারণে লাউয়াছড়া উদ্যানের বন্যপ্রাণীর সুরক্ষা নিয়ে উৎকণ্ঠা দেখা দিয়েছে। নানা প্রতিকূলতা উপেক্ষা করেও শত শত পর্যটকরা এক টুকরো বনে বিচরণ করেন।
জানা যায়, মনোরম প্রাকৃতিক পরিবেশে এখানকার বিলুপ্তপ্রায় উল্লুকসহ গাছে গাছে লাফালাফি-রত বানর, হনুমানের দৃশ্যাবলী উপভোগ করতে এ উদ্যানে পর্যটকরা বেশি আগ্রহ বোধ করেন। উপজেলার অন্যান্য পর্যটন কেন্দ্র সমূহে দর্শনার্থীর চেয়ে লাউয়াছড়া মিশ্র চিরহরিৎ বনে অত্যধিক পর্যটকের উপস্থিতি ঘটে। অন্যান্য সময়ের তোলনায় প্রকৃতির অনুকূল আবহাওয়ার কারণে এই ঈদেও ব্যাপক পর্যটকের সমাগম ঘটে। ঈদের দিন ৭ জুন থেকে ৯ জুন পর্যন্ত তিন দিনে ২ হাজার ৫২৮ জন টিকেট নিয়ে লাউয়াছড়া বন ঘুরেন। এদের বিপরীতে রাজস্ব আয় হয়েছে ২ লক্ষ ৯০ হাজার ৭৭৭ টাকা ৫০ পয়সা। অধিক পরিমাণে পর্যটকের উপস্থিতি বন্যপ্রাণির অবাধ বিচরনে বাঁধাগ্রস্ত হবে বলে স্থানীয় বাসিন্দা ও প্রকৃতি কর্মীরা দাবি করছেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, ১৯৯৬ সালে লাউয়াছড়াকে জাতীয় উদ্যান ঘোষণার পর থেকে সেখানে পর্যটকদের ঢল নামছে। বনকে পর্যটন কেন্দ্র হিসাবে গড়ে তোলতে রেস্টহাউস, কয়েকটি ইকো-কটেজ, বাঘমারা এলাকায় স্টুডেন্ট ডরমিটরি, ইউএসএআইডি’র অর্থায়নে প্রকৃতি সহ-ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে প্রকৃতি ব্যাখ্যা কেন্দ্র স্থাপনের ফলে পর্যটকের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। উদ্যানের গাঁ ঘেঁষে বনজঙ্গল ও মাটি কেটে স্থাপিত হচ্ছে বিভিন্ন কটেজ। ফলে বনের ভেতরে দল বেঁধে মানুষের অবাধ বিচরন বন্যপ্রাণীর জন্য খাবার সংগ্রহ ও চলাচলে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হচ্ছে। দল বেঁধে পর্যটকরা হইহুল্লোড় করে বনের ভেতরে প্রবেশ করছেন। পাশাপাশি বনে শত শত যানবাহন ও একাধিক ব্যবসা বাণিজ্য রীতিমতো বনকে বাণিজ্যিকীকরণে পরিণত করে তুলছে বলে অনেকেই মন্তব্য করছেন।
পরিবেশকর্মী ও স্থানীয় বাসিন্দা আহাদ মিয়া, সাজু মারচিয়াঙ, কয়েকজন পর্যটক বলেন, এখানে বন্যপ্রাণির দেখা পেতে পর্যটকরা ভিড় জমিয়েছেন। শহরের লোকজন প্রাকৃতিক বনের গাছগাছালি ও মনোরম দৃশ্যাবলী উপভোগ করেন। বিশেষত ছুটির সময়ে অত্যধিক পরিমাণে পর্যটক, যানবাহনের হুড়োহুড়ি ও লোকে লোকারণ্য এই বনের মধ্যে বিচরণকৃত বন্যপ্রাণীর দেখা পাওয়া দায়। দলবদ্ধ মানুষের হাল্লা-চিৎকার, যানবাহনের হর্ন সব মিলিয়ে উদ্যানের জীববৈচিত্র্য ও প্রকৃতি সুরক্ষা নিয়ে রীতিমতো উৎকণ্ঠা দেখা দেয়া স্বাভাবিক। বনে ঘুরতে আসা পর্যটক মাহফুজুর রহমান, শহীদুর রহমান, জয়নাল আবেদীন, শেখ রিপন বলেন, বনের মধ্যে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও মানুষের ভিড় জমানো মোটেও ঠিক নয়। এসব কারনে বন্যপ্রাণীর বিচরণক্ষেত্রে বাধাগ্রস্ত হবে।
এ ব্যাপারে বন্যপ্রাণি ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের লাউয়াছড়া বন রেঞ্জ কর্মকর্তা নাজমুল হক বলেন, তিন দিনে আড়াই হাজার পর্যটক হয়েছে। ঈদে পর্যটকদের উপস্থিতি সব সময়েই বেশি হয়ে থাকে। অত্যধিক পর্যটকের কারণে কিছুটা বিঘ্ন হলেও এখানে গাইডরাও রয়েছে, এদের বলে দেওয়া হয়েছে যাতে পর্যটকরা এর বাইরে ও কোনো বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে যাতে বন ও পরিবেশের ক্ষতি না হয় বিষয়ে খেয়াল রাখতে।