ঢাকা শনিবার, ২১ জুন ২০২৫, ৭ আষাঢ় ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

ফেনীতে নির্মাণের ২৫ বছর পরেও চালু হয়নি সুইমিংপুল

ফেনীতে নির্মাণের ২৫ বছর পরেও চালু হয়নি সুইমিংপুল

ফেনীতে সাড়ে ৩ কোটি টাকা ব্যয়ে শহরের দাউদপুর এলাকায় জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের উদ্যোগে নির্মাণ করা হয় সাঁতার প্রশিক্ষণের জন্য মাহবুবুল হক পেয়ারা সুইমিংপুল। জেলা ক্রীড়া সংস্থার তত্ত্বাবধানে তিন একর জায়গা জুড়ে নির্মিত সুইমিংপুলটি নির্মাণের ১৪ বছর পর নামকরণ করা হয় মাহবুবুল হক পেয়ারা সুইমিংপুল। কিন্ত নির্মানের ২৫ বছর পার হলেও ফেনীর মাহবুবুল হক পেয়ারা সুইমিংপুলটি চালু হয়নি। অযত্ন আর অবহেলায় নষ্ট হয়ে যাচ্ছে মোটর ও যন্ত্রপাতি। দেয়ালে ধরেছে ফাটল, খসে পড়ছে পলেস্তারা। জনমানবশূন্য তিন একরের এ জায়গায় এখন মাদকের আখড়া পরিণত হয়েছে। এছাড়াও সৃষ্টি হয়েছে বখাটেদের অভয়ারণ্যে।

জেলা পর্যায়ে সাতার শেখানো, জাতীয় ও স্থানীয় পর্যায়ে বিভিন্ন সাঁতার প্রতিযোগিতার আয়োজন এবং আশপাশের জনসাধারণের জন্য সুইমিংয়ের ব্যবস্থা করতেই সুইমিংপুলটি ২০০০ সালে নির্মাণ করা হয়। আধুনিক সুযোগ-সুবিধায় নির্মিত সুইমিংপুলটি সাঁতার প্রতিযোগিতার জন্য জাতীয় একটি গুরুত্বপূর্ণ ভেন্যু হওয়ার কথা থাকলেও ক্রীড়া সংস্থার উদাসীনতায় এটি চালু করা হয়নি। বন্দরনগরী চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন শহরে সাঁতার শেখার লক্ষ্যে সুইমিংপুল নির্মিত হয়। কথা ছিল দেশের সাঁতারুরা এখান থেকে শিখে শুধুমাত্র দেশে নয়- এসএ গেমস, এশিয়ান গেমস, এমনকি অলিম্পিক গেমসেও অংশ নিয়ে দেশের মুখ উজ্জ্বল করবে।

বর্তমানে সুইমিংপুলের মূল ভবনের সামনে বড় আকারের মাঠে ক্রিকেট অনুশীলনের জন্য একটি মাঠ রয়েছে। সুইমিংপুলটি এখন ধূমপান ও বখাটেদের আড্ডার নিরাপদ স্থান। দীর্ঘদিন পরিষ্কার না করায় পূর্ব ও পশ্চিম দিক আগাছায় ভরে ওঠেছে। মূল ভবনের ভেতরে থাকায় সুইমিংয়ের গ্রাউন্ডের টাইলস উঠে যাচ্ছে। দেওয়ালের পলেস্তারা খসে পড়ছে। দেয়ালে দেখা দিয়েছে ফাটল। অযত্ন-অবহেলায় যন্ত্রপাতিগুলো মরিচা ধরে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। ফেনী জেলা ক্রীড়া সংস্থা সূত্র জানায়, ২০০০ সালে সুইমিংপুলটি নির্মাণ করা হলেও এখানে বসানো মোটর ও পুলে ক্রটি থাকায় এটি চালু করা সম্ভব হয়নি।

আশ-পাশের বাসিন্দারা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, মরহুম মাহবুবুল হক পেয়ারা সুইমিংপুলটি দীর্ঘদিন চালু না হওয়ায় এখানে রাতের বেলায় মাদকসেবী ও পতিতাদের আড্ডায় পরিণত হয়েছে। কোন তদারকি না থাকায় এখানে চলে নানা বেআইনি কর্মকাণ্ড। পাশের বাসিন্দা নছির আহম্মদ বলেন, দীর্ঘদিন ব্যবহার ও পরিষ্কার না করায় এটির দুই পাশ আগাছায় ভরে ওঠেছে। মূল ভবনের ভেতরে প্রবেশ করে দেখা গেল দীর্ঘদিন অব্যবহৃত থাকায় সুইমিংয়ের গ্রাউন্ডের টাইলস উঠে যাচ্ছে। দেয়ালের পলেস্তারা খসে পড়ছে। দেওয়ালে দেখা দিয়েছে ফাটল। অযত্ন-অবহেলায় যন্ত্রপাতিগুলো মরিচা ধরে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে এবং দরজা-জানালাসহ মূল্যবানসামগ্রী চুরি হয়ে গেছে।

স্থানীয় আবুল কাশেম জানান, নগরায়ণের কারণে দিনদিন ফেনী শহরে পুকুরের সংখ্যা কমছে। কোটি কোটি টাকা ব্যয় করে এখানে সুইমিংপুলটি নির্মাণের পরও কেন এটি চালু হচ্ছে না তা কেউ জানে না। এটি চালু করলে আমরা সাতার চর্চা করতে পারতাম। আমাদের সন্তানদের শেখাতে পারতাম। সাতার প্রতিযোগীর সৃষ্টি হতো ফেনীতে। এতে করে স্থানীয় যুবকদের মাঝে মাদকাসক্তের হার কমতো, কিশোরগ্যাং সমস্যা থাকত না।

জেলা ক্রিকেট কোচ রিয়াজ উদ্দিন রবিন বলেন, সুইমিংপুলের সুবিধা থাকায় পাশে ক্রিকেট গ্রাউন্ড তৈরি হয়েছে; কিন্তু এটি এখনও চালু না হওয়ায় এ সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে খেলোয়াড়রা। ফেনীর বিভিন্ন উপজেলা থেকে প্রায় সময় ক্রিকেট প্র্যাকটিসের জন্য সুইমিংপুল মাঠে অনেক খেলোয়াড় আসে। অনুশীলন শেষে শরীরে দুর্গন্ধ, ঘাম নিয়ে বাড়ি ফিরতে হয় তাদের। এখানে সুইমিংপুলটি চালু থাকলে অনুশীলন শেষে গোসল করে তারা বাড়ি ফিরতে পারত।

ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন অফ ফেনীর সাবেক সভাপতি ক্রীড়া সংগঠক ইমন উল হক জানান, ২৫ বছরেও ফেনীর সুইমিংপুলটি চালু না হওয়া দুঃখজনক। এটি শুধু শিশু কিশোরদের জন্য প্রয়োজন তা নয়; এটি চালু হলে সাঁতারু সৃষ্টি হবে। প্রতিযোগিতার আরও একটি ইভেন্ট যোগ হবে। আমরা বিষয়টি নিয়ে এর আগে জেলা প্রশাসকসহ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে বারবার আলোচনা করেও কোনো ফল পাইনি। এসব বিষয়ে ফেনী জেলা প্রশাসক ও জেলা ক্রীড়া সংস্থার সভাপতি সাইফুল ইসলাম জানান, ফেনীর সুইমিংপুলটি শুরুর পর থেকে চালু করা হয়নি এটা দুর্ভাগ্যের বিষয়। এরই মধ্যে সংশ্লিষ্টদের নিয়ে স্থাপনাটি পরিদর্শন করা হয়েছে। এটি চালু করতে হলে নতুনভাবে অনেক কাজ করতে হবে। জেলা ক্রীড়া কর্মকর্তাকে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ফাইল তৈরির দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। এরপর জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের কাছে পরবর্তী নির্দেশনা চেয়ে চিঠি দেওয়া হবে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত