ঢাকা রোববার, ১৮ মে ২০২৫, ৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত জিমনেসিয়ামে ‘টেবিল ফ্যানে’ টিটি টুর্নামেন্ট!

শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত জিমনেসিয়ামে ‘টেবিল ফ্যানে’ টিটি টুর্নামেন্ট!

রাজধানীর পল্টনে জাতীয় স্টেডিয়ামের পাশেই অবস্থিত শহীদ তাজউদ্দীন আহমেদ উডেন ফ্লোর জিমনেসিয়াম। এই ইনডোর ভেন্যুটিতে ব্যাডমিন্টন, টেবিল টেনিসসহ বেশ কয়েকটি ইভেন্টের প্রতিযোগিতা হয়। ভবনটি সম্পূর্ণ শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত (এয়ার কন্ডিশন)। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে এয়ার কন্ডিশন (এসি) সিস্টেম অকার্যকর। লাইটগুলোর বেশির ভাগ নষ্ট হওয়ায় ভেন্যুতে রয়েছে পর্যাপ্ত আলোর অভাব। যে কারণে ১৫-১৯ মে উন্মুক্ত প্রেসিডেন্ট কাপ র‍্যাংকিং এবং প্রাইজমানি টিটি টুর্নামেন্ট স্থগিতের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল টেবিল টেনিস ফেডারেশন। কিন্তু সেই সিদ্ধান্ত বদলে এই গরমের মধ্যেই টুর্নামেন্ট চালুর সিদ্ধান্ত নিয়েছে ফেডারেশন। নতুন সূচি অনুযায়ী খেলা চলবে ২২-২৫ মে।

দীর্ঘদিন ধরে টেবিল টেনিসে কোনো টুর্নামেন্ট নেই। লিগও অনিয়মিত। বলা যায়, অনেকটা অলস সময় কাটছে খেলোয়াড়দের। যে কারণে খেলোয়াড়দের চাওয়া পূরণ করতেই এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে ফেডারেশন। না খেলার চেয়ে বরং খেলার মধ্যে ব্যস্ত থাকাটাই ভালো বলে মনে করছেন ফেডারেশন কর্মকর্তারা। এ প্রসঙ্গে টেবিল টেনিস ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক ক্যাপ্টেন এ এম মাকসুদ আহমেদ বলেন, ‘আসলে আমরা খেলোয়াড়দের চাপে আবারও সূচি বদল করতে বাধ্য হয়েছি।’ যদিও গরম কমাতে কোর্টের পাশে টেবিল ফ্যানের ব্যবস্থা করবে ফেডারেশন।

পল্টনের শহীদ তাজউদ্দিন উডেনফ্লোর জিমনেসিয়াম নির্মাণ করা হয় ২০০৯ সালে। ঢাকায় অনুষ্ঠিত ২০১০ এসএ গেমসকে সামনে রেখে ৮ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত হয় এই ইনডোর জিমনেসিয়াম।

ওই সময় প্রায় ২ কোটি টাকা খরচ করে চাইনিজ এয়ার কন্ডিশন সিস্টেম লাগানো হয় জিমনেসিয়ামে। গত ১৬ বছরে ব্যবহারের ফলে যা প্রায় অকেজো হয়ে পড়েছে।

অথচ যুক্তরাষ্ট্রের প্রযুক্তিগত এয়ার কন্ডিশন সিস্টেম ব্যবহার করা হয়েছে মিরপুর শহীদ সোহরাওয়ার্দী ইনডোর স্টেডিয়ামে ১৯৯৩ সালে। যেটি প্রায় ৩২ বছর ধরে চমৎকারভাবে চলছে মিরপুর ইনডোরে। এমনকি এখন পর্যন্ত এই ইনডোরের এসি নিয়ে কোনো সমস্যা বা অভিযোগ তোলেনি কেউ। একটি প্রাইভেট কোম্পানি নিয়মিতভাবে এই ইনডোরের এসি রক্ষণাবেক্ষণ করে আসছে। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত পল্টনের ইনডোরে সেই রক্ষণাবেক্ষণ ব্যবস্থা নেই বললেই চলে।

টেবিল টেনিসের বিগত কমিটির কর্মকর্তারা এসব জেনেও কখনও নিজেদের ভেন্যু সংস্কারের উদ্যোগ নেননি। এমনকি গরমের মধ্যে প্রায়ই টেবিল ফ্যান চালিয়ে প্রতিযোগিতার আয়োজন করতে দেখা গেছে। বর্তমান কমিটি দায়িত্ব নিয়েই কোর্টে খেলা গড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছে। কিন্তু শুরুতেই পড়েছে বিপাকে। এমনকি নতুন কমিটির কর্মকর্তারাও কিছুদিন আগে জেনেছেন এই ভেন্যুর সমস্যার বিষয়। যদিও বিষয়টি নিয়ে টেবিল টেনিস ফেডারেশন ও জাতীয় ক্রীড়া পরিষদকে অনেকে মুখোমুখি দাঁড় করানোর চেষ্টা করছেন বলে অভিযোগ করলেন ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক ক্যাপ্টেন এ এম মাকসুদ আহমেদ। তবে তিনি জানালেন, জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের (এনএসসি) কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ রয়েছে তাদের, ‘এনএসসির সঙ্গে আমাদের সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রয়েছে। কিছুদিন আগেও এনএসিসি বা আমরা জানতাম না যে, উডেন ফ্লোর জিমনেসিয়ামের পুরাতন এসি ব্যবহারযোগ্য নয়। ওয়ার্ল্ড টেবিল টেনিস ডে উদযাপনের আগে অনেক চেষ্টার পরও এনএসসির প্রকৌশলীরা এটাকে সচল করতে পারেননি। তারও বেশ পরে আমরা জানতে পারি এটা আর মেরামতযোগ্য নয়।’ যেহেতু এটা আর মেরামত যোগ্য নয়, তাই বিকল্প ভেন্যুরও প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল এনএসসির পক্ষ থেকে। মিরপুর ইনডোর বা ধানমন্ডি মহিলা ক্রীড়া কমপ্লেক্সে খেলা আয়োজনের পরামর্শ দেওয়া হয় এনএসসি থেকে। কিন্তু এই মুহূর্তে মিরপুরে চলছে দ্বিতীয় বিভাগ বাস্কেটবল। ধানমন্ডি ক্রীড়া কমপ্লেক্সেও যেতে আগ্রহী নয় টেবিল টেনিস ফেডারেশন।

তাই অসহায়ের সুরে এনএসসি সচিব আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের বিকল্প কোনো উপায় নেই। কিন্তু এই সমস্যার সমাধান আমরা খুঁজছি। এটা সারাতে গেলে জটিল ও দীর্ঘ প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যেতে হবে।’ এরপর তিনি যোগ করেন, ‘আমাদের প্রকৌশলীরা পুরো এয়ার কন্ডিশন সিস্টেম পর্যবেক্ষণ করে যেটা বুঝেছেন তাতে এখানে নতুন করে সব কিছু বসাতে হবে। আর এটা করতে প্রায় ১২ কোটি টাকা লাগতে পারে।’ নতুনভাবে এসি স্থাপন করার জন্য এরই মধ্যে ক্রীড়া মন্ত্রণালয় ও অর্থ মন্ত্রণালয়ে যোগাযোগ শুরু করেছে এনএসসি। তবে যদি জুনের অর্থ বছরের আগে টাকা অনুমোদন করাতে পারে তাহলে হয়তো অক্টোবরের মধ্যে নতুন এসি বসতে পারে পল্টনের ইনডোরে এবং তারপরই সেখানে ফিরতে পারে খেলাধুলার সঠিক পরিবেশ।

টেবিল টেনিস
আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত