ইমেরিটাস অধ্যাপক কৃষি-অর্থনীতিবিদ ড. এমএ সাত্তার মণ্ডল বলেছেন, সাম্প্রতিক অর্থবছরগুলোতে বাংলাদেশে একদিকে- সিগারেটের দাম উল্লেখযোগ্য মাত্রায় বাড়ানো হয়নি, অন্যদিকে- এই ক্ষতিকারক পণ্যের ওপর যথাযথ করারোপও সম্ভব হয়নি। ফলে সিগারেটের সহজলভ্যতার কারণে জনস্বাস্থ্য ঝুঁকি যেমন বেড়েছে, তেমনি সরকার রাজস্ব থেকেও বঞ্চিত হয়েছে। তবে বাংলাদেশে বর্তমানে ব্যাপকভিত্তিক সংস্কারের সুযোগ তৈরি হয়েছে। এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরে সিগারেটে কার্যকর করারোপ করতে হবে। আগামী বাজেটে সিগারেটে করারোপের ক্ষেত্রে কোনো অজুহাতেই আপসের সুযোগ নেই বলে মনে করেন তিনি। গতকাল বৃহস্পতিবার ঢাকায় বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র ভবনে উন্নয়ন সমন্বয়ের আয়োজনে প্রাক-বাজেট গোলটেবিল বৈঠকে তিনি এ কথা বলেন। ‘সিগারেটে কার্যকর করারোপের প্রস্তাবনা’ শীর্ষক প্রাক-বাজেট গোলটেবিল বৈঠকে তিনি প্রধান অতিথি হিসেবে অংশগ্রহণ করেন। বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক এ উপাচার্য বলেন, সিগারেটের চাহিদার কার্যকর পথটা কমানোই হচ্ছে বড় অস্ত্র। সিগারেটে স্বাস্থ্যের ঝুঁকি আছে। দেশে সিগারেটের কার্যকর চাহিদা কীভাবে কমানো যায় তা নিয়ে আরও আলোচনা করতে হবে। যেহেতু ধর্মীয় শাস্ত্র বা স্বাস্থ্য শাস্ত্রের আলোচনা করেও আমরা এর ব্যবহার কমাতে পারছি না। সেহেতু অর্থশাস্ত্র দিয়েই তা কমাতে হবে।
তিনি বলেন, ক্ষতিকর কোনো বস্তু যদি বাজারে আসে তার ওপর একটি পেনাল্টির ব্যবস্থা থাকতে হবে। উন্নয়ন সমন্বয় তাদের প্রস্তাবনায় নিম্নস্তর ও মধ্যস্তর এ দুটি স্তরকে একীভূত করার প্রস্তাবনা দিয়েছে তাতে একটি স্তর কমবে। ২০১৯ সালে তামাকজাত পণ্যের ওপর থেকে ২৫ শতাংশ রপ্তানি শুল্ক কমিয়ে ১০ শতাংশ করা হয়, এরপর ২০২০ সালে তা পুরোপুরি উঠিয়ে দিয়ে রপ্তানি শুল্ক শূন্য করে দেওয়া হয়। এতে দেখা গেছে দিন দিন তামাকের চাষ বাড়ছে। তাই এবারের বাজেট প্রস্তাবনায় এই পণ্যে সেই আগের মতো ২৫ শতাংশ বা তার থেকেও বেশি রপ্তানি শুল্ক পুনর্বহালের প্রস্তাবনা দেওয়া হবে। প্রেক্ষাপট উপস্থাপনায় উন্নয়ন সমন্বয়ের গবেষণা পরিচালক আব্দুল্লাহ নাদভী বলেন যে, চলতি অর্থবছরে মাঝামাঝি এসে সব স্তরের সিগারেটের দাম ৮ থেকে ২০ শতাংশ বাড়িয়েছে রাজস্ব বোর্ড। এতে করে একদিকে সরকারের বাড়তি রাজস্ব পাওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে, অন্যদিকে সিগারেটে বিক্রির পরিমাণও কমেছে। আগামী অর্থবছরেও এই ধারাবাহিকতা বজায় রাখার আহ্বান জানান তিনি। বাংলাদেশের বিভিন্ন তামাকবিরোধী নাগরিক সংগঠন আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরে বাজারে বিক্রিত সিগারেটের স্তর সংখ্যা চারটি থেকে কমিয়ে তিনটি করার দাবি জানিয়েছে। নিম্ন ও মধ্যম স্তরের সিগারেটকে একীভূত করে ওই নতুন স্তরের সিগারেটের একেকটি শলাকার দাম ৯ টাকা নির্ধারণের পরামর্শ এসেছে এই নাগরিক সংগঠনগুলোর দিক থেকে। সিগারেটের দাম বাড়ানো এবং এর ওপর কার্যকর করারোপের প্রস্তাব এলেই স্বার্থান্বেষী মহল নানা রকম অপতথ্য প্রচার করে থাকে বলে জানান ইউএনডিপি-এর সিনিয়র অ্যাডভাইজার এসএম মঞ্জুর রশিদ।