দু’একটি অঞ্চল ছাড়া প্রায় সারাদেশেই বইছে তাপপ্রবাহ। গত দুদিন থেকে শুরু হওয়া এই তাপপ্রবাহ গতকাল শুক্রবার থেকে আরও তীব্র হয়েছে। গতকাল দেশের তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ওপরে উঠেছিল। গতকাল শুক্রবার আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, দেশের ওপর দিয়ে চলমান মৃদু থেকে মাঝারি তাপপ্রবাহ অব্যাহত থাকতে পারে এবং শুক্রবার দুপুর ২টা থেকে পরবর্তী ৭২ মধ্যে ঘণ্টার মধ্যে কোথাও কোথাও আরও তীব্র হতে পারে। গত বৃহস্পতিবার দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩৯ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, গতকাল শুক্রবার সারা দেশে দিনের তাপমাত্রা ১ থেকে ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত বৃদ্ধি পেতে পারে। রাতের তাপমাত্রাও সামান্য বাড়তে পারে।
তিনদিনের সতর্কতা জারি করেছে আবহাওয়া অধিদপ্তর; সেই সঙ্গে দেশের কোথাও কোথাও বয়ে যেতে পারে তীব্র তাপপ্রবাহ। পরবর্তী ২৪ ঘণ্টায় সারাদেশের দিনের তাপমাত্রা ১ থেকে ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং রাতের তাপামাত্রা সামান্য বাড়ার আভাস এসেছে আবহাওয়ার নিয়মিত বুলেটিনে।
চৈত্রের শেষ আর বৈশাখের শুরুতে সাধারণত গরমের তীব্রতায় হাঁসফাঁস করতে হয়। তবে এবারে তীব্র গরম দেখা যাচ্ছে বৈশাখের শেষ দিকে এসে। দেশের ৪৫ জেলার উপর দিয়ে গত বৃহস্পতিবার তাপপ্রবাহ বয়ে যাওয়ার কথা জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। সেদিন রংপুর, দিনাজপুর, নীলফামারি, রাজারহাট, ময়মনসিংহ, মৌলভীবাজার, রাঙ্গামাটি, চাঁদপুর, ফেনী, নোয়াখালী, চট্টগ্রাম, বান্দরবান, বরিশাল, পটুয়াখালী জেলা এবং ঢাকা, রাজশাহী ও খুলনা বিভাগের উপর দিয়ে মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছিল। এছাড়া ওইদিন সর্বোচ্চ ৩৯ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা নথিবদ্ধ হয় চুয়াডাঙ্গায়, এ সময় ঢাকার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩৮ডিগ্রি সেলসিয়াস।
এদিকে, চুয়াডাঙ্গায় বিরামহীন দাবদাহে জনজীবন কার্যত অচল হয়ে পড়েছে। জেলার ওপর দিয়ে বয়ে চলেছে তীব্র দাবদাহ। রোদ্রের তীব্রতায় গলে যাচ্ছে সড়কের পিচ। গতকাল শুক্রবার দুপুর ৩টায় চুয়াডাঙ্গায় মৌসুমের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪১ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে । এ সময় বাতাসের আর্দ্রতা ছিল ২৪ শতাংশ। এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন চুয়াডাঙ্গা আবহাওয়া অফিসের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা রাকিবুল হাসান। তিনি বলেন, এর আগে বেলা ১২টায় চুয়াডাঙ্গার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৩৮ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। গত বৃহস্পতিবার দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩৯ দশমিক ৭ ডিগ্রি ছিল চুয়াডাঙ্গায়।
এদিকে তীব্র গরমে ভোগান্তিতে পড়েছেন খেটে খাওয়া নিম্নআয়ের মানুষ। রোজগারের তাগিদে তাদের রোদ আর দাবদাহ উপেক্ষা করেই রাস্তায় নামতে হচ্ছে। চুয়াডাঙ্গা সদরের কুন্দিপুর গ্রামের অটোরিকশা চালক রশিদুল ইসলাম বলেন, কড়া রোদের মধ্যে গরম উপেক্ষা করে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে বেড়াচ্ছি যাত্রীর আশায়। কিন্তু বাইরে মানুষ না থাকায় ভাড়া হচ্ছে না।
একজন পথচারী বলেন, এত রোদ গরমে বাইরে বের হওয়া যাচ্ছে না। খুব জরুরি প্রয়োজনে বাইরে বের হয়েছি। কিন্তু রাস্তায় দাঁড়ালে মনে হয় আগুন ঝরছে। মাথা গরম হয়ে চোখে ঝাপসা দেখছি, মুখ পুড়ে যাচ্ছে।
এই অস্বাভাবিক গরমে শুধু শ্রমজীবী নয়, শিশু, বৃদ্ধ ও অসুস্থরাও চরম দুর্ভোগে পড়েছেন। জেলা সদর হাসপাতালসহ বিভিন্ন স্বাস্থ্যকেন্দ্রে হিটস্ট্রোক, পানিশূন্যতা ও ঘামজনিত সমস্যার রোগী বাড়ছে বলেও জানা গেছে।
আবহাওয়া অফিসের কর্মকর্তারা জানান, বর্তমানে জেলার ওপর দিয়ে মাঝারি থেকে তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। বৃষ্টি না হওয়া পর্যন্ত আগামী কয়েকদিন এই পরিস্থিতি অব্যাহত থাকতে পারে।
প্রসঙ্গত, বাতাসে তাপমাত্রা ৩৬ থেকে ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসের কম হলে তাকে মৃদু তাপপ্রবাহ ধরা হয়। ৩৮ থেকে ৪০ ডিগ্রির কম তাপমাত্রাকে বলা হয় মাঝারি এবং ৪০ থেকে ৪২ ডিগ্রির কম তাপমাত্রাকে তীব্র তাপপ্রবাহ বলা হয়। আর তাপমাত্রা ৪২ ডিগ্রির উপরে উঠলে তাকে বলা হয় অতি তীব্র তাপপ্রবাহ।